রংপুর সিটি কর্পোরেশনে ভোটের দিন যতো ঘনিয়ে আসছে ততই শাসকদলের সন্ত্রাসীদের হুমকি ধামকি বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করা হয়েছিল। এখন বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকরা যাতে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে না পারে সেজন্য বাড়ীতে বাড়ীতে গিয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও স্থানীয় পুলিশ ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। অন্যদিকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীকে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় বাধার সৃষ্টি করা হলেও শাসকদল ও তাদের জোটের প্রার্থী ও সমর্থকরা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচারণা চালালেও সেক্ষেত্রে পুলিশ ও প্রশাসন সম্পূর্ণ নির্বিকার রয়েছে। গতকাল (সোমবার) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
গত রোববার প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন “যারা সৃষ্টি করে তাদের দেশের প্রতি মায়া থাকে, আর যারা উড়ে এসে জুড়ে বসে তাদের থাকে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন মুখে তারা জনগণের কাছে ভোট চাইবে? তারা গণহত্যা করেছে, লুটপাট করেছে, জ্বালাও-পোড়াও করেছে, মায়ের সামনে সন্তানকে হত্যা করেছে, স্ত্রীর সামনে স্বামীকে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে যথার্থই উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঠিকই বলেছেন, যারা সৃষ্টি করে তাদের দেশের প্রতি মায়া থাকে, কিন্তু বিপদের সময় জনগণকে ফেলে যারা পালিয়ে যায়, যারা শত্রæ বাহিনীর নিরাপত্তার মধ্যে নিজ গৃহে বসবাস করে দেশের প্রতি তাদের মায়া থাকে কী না সেটাও প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট করে বলা উচিৎ ছিল। পরনিন্দায় অন্তহীন মুখর থাকাটাই প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র কাজ, এছাড়া তিনি দেশকে কিছুই দিতে পারবেন না।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, আপনিও আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছেন জিয়াউর রহমানের কারণেই। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের বিষয়ে আওয়ামী লীগের ব্যর্থতার কারণেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বিএনপি’র বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর এতো ক্ষোভ ও গা’জ্বালা। রিজভী বলেন, ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করে দেশে দ্বিতীয় বাকশাল কায়েম করেছে কে? ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে বন্দুকের জোরে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে মানুষের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ দখল করে বড় বড় কথা বলা যায়, কিন্তু মানুষের হৃদয়ে স্থান পাওয়া যায় না। রাজকোষসহ বিভিন্ন ব্যাংকের লোপাটকারী কে? শেয়ার বাজার লুট করে হাজার হাজার যুবককে পথে বসিয়েছে কে? এখনও কেন রাজকোষ কেলেঙ্কারীর রিপোর্ট প্রকাশিত হয়নি? এর পেছনে কারা জড়িত তা আজ দেশের মানুষের জানতে বাকি নেই। দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করে মালয়েশিয়া-কানাডায় বেগম পল্লী তৈরি করেছে কারা? পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন কেলেঙ্কারিতে আর্ন্তজাতিক শিরোনাম হয়েছে কে? ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, হুমায়ুন কবির, পারভেজ, সুমনসহ হাজারো বিএনপি নেতাকর্মী ও যুবকদের গুম করে, বিচারবহির্ভতভাবে হত্যা করে স্ত্রীকে স্বামী হারা, সন্তানকে বাবা হারা, মাকে সন্তান হারা করেছে কে? মায়ের পেটের শিশুরাও তো এখন নিরাপদ নয়। ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের তান্ডবে গোটা দেশ এখন কসাইখানায় পরিণত হয়েছে। কার হুকুমে কসাইদের দ্বারা শিক্ষক, সাংবাদিক, ছাত্র, কুটনীতিক, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, রাজনীতিবিদ প্রতিনিয়ত গুম আর খুনের শিকার হচ্ছেন, তা দেশবাসী ভালভাবেই জানে। শাসকদলের ক্যাডারদের হাতে কত নারী তার সম্ভ্রম হারিয়েছে, কত নববধু হারিয়েছে তাদের ইজ্জত। খাদিজা-মিম-জিম’রা ছাত্রলীগ দ্বারা আক্রান্ত হবার পর এখন আতঙ্কিত জীবন-যাপন করছে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতেও ভয় পাচ্ছে। কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে রিশা, তিশাসহ কত শিক্ষার্থীকে। এর জবাব একদিন জনগণের কাছে আপনাকে দিতেই হবে। আপনার বক্তব্যে মনে হয়-আপনিই দেশের একমাত্র মালিক, জনগণ নয়। দেশটাকে উত্তরাধিকার সূত্রে পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করেন। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে জনগণকেই হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। আপনার উদ্দেশ্য জনগণের কাছে পরিস্কার। আবারও একটি ভোটারবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠানে আপনার উদ্দেশ্য এদেশের জনগণ বাস্তবায়িত হতে দেবে না। জনগণ তাদের সর্বশক্তি দিয়ে ভোটারবিহীন নির্বাচনের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে প্রস্তুত।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার জাতিকে কেলেঙ্কারী ছাড়া আর কিছুই উপহার দিতে পারেনি। রাজকোষ কেলেঙ্কারী, শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারী, বেসিক ব্যাংকসহ সোনালী, রুপালী, জনতা, অগ্রণী, ফার্মার্স ব্যাংক ও বিভিন্ন আর্থিক কেলেঙ্কারীরির ধাত্রীমাতা হচ্ছে আওয়ামী সরকার।
প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে তিনি বলেন, আজও আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে-“দ্বিতীয় শ্রেণীর প্রশ্নও ফাঁস: বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ”। এটা গোটা জাতির জন্য লজ্জাস্কর। এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন প্রশ্নফাঁসে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষকরা জড়িত। এ বিষয়ে কী আওয়ামী সরকার প্রধানসহ মন্ত্রীরা লজ্জিত হন না, তাদের টনক নড়ে না।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, মীর সরাফত আলী সপু,আব্দুস সালাম আজাদ, আমিরুল ইসলাম আলীম, মুনির হোসেন, সাইফুল ইসলাম পটু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।###
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন