বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশের কোনো আইনেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার জন্য বাধা নেই। এই আইনের বাধা একজনই সেটা হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আজকে প্রধানমন্ত্রী নিজেকে দেশের আইন মনে করেন। তিনি যা বলবেন তাই আইন। তিনি চাইলে যে যত বড় হোক না কেনো তাকে শাস্তি পেতে হবে। যত বড় রাজনীতিবিদ হোন না কেনো শাস্তি পেতে হবে। যদিও সে ভালো মানুষ হয় প্রধানমন্ত্রী চাইলে শাস্তি পেতে হবে।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (এ্যাব) এর উদ্যোগে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশের গণমাধ্যম বলছে- বেগম খালেদা জিয়ার থেমে থেমে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আর তারা বলছে দেশের ভেতরে চিকিৎসা সম্ভব। তারা কিছুই মনে করেন না। তারা যেটাই বলবে সেটাই বিশ্বাস করতে হবে? তাহলে ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসা কেনো সিঙ্গাপুরে হলো? কেনো বিমান চার্টার্ড করা হলো? কেনো দেশের চিকিৎসকরা তাকে সারিয়ে তুলতে পারেননি? কেনো সেদিন বলেননি যে কাদেরের চিকিৎসা বাংলাদেশেই হবে? এই ধরনের দ্বিচারিতা ও স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট মনোভাবের জন্য আপনাকে একদিন জবাব দিতে হবে।
রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী সম্রাটের মতো, সুলতান বা সুলতানার মতো দেশ চালাচ্ছেন। আর তার মন্ত্রীরা আমিরের মতো চলেন। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) যা বলেন তার আমির উমরারা একই বুলি আওড়াতে থাকে। তিনি যা বলেন তার মন্ত্রীরা আরো বাড়িয়ে বলেন। না হলে আমিরগিরি থাকেনা।
তিনি বলেন, পাকিস্তান, মালদ্বীপ সহ অনেক দেশকেই আমেরিকা তাদের গণতন্ত্র সম্মেলনে ডেকেছে। কিন্তু বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অথচ শেখ হাসিনা প্রায়ই বলেন তিনি নাকি মানুষকে ভাতের অধিকার ও গণতন্ত্র দিয়েছেন। তাহলে আপনাকে ডাকেনি কেনো? এই প্রশ্ন তো সবার মুখে মুখে। কারণ একটাই আপনার গণতন্ত্র প্লাস্টিকের গণতন্ত্র, কচু পাতার উপরে যে পানি থাকে সেই পানির মতো গণতন্ত্র। কচু পাতার মতো টলা দিলেই পানি পড়ে যাবে।
রিজভী বলেন, দেশের বিশিষ্ট চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞদের কথাবার্তা কিছুই মনে করেন না তারা। তারা প্রধানমন্ত্রীকে বড় চিকিৎসক মনে করেন। ওবায়দুল কাদের মনে করেন তিনি বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ সার্জন। আর হাছান মাহমুদ মনে করেন তিনি হলেন গ্যাস্ট্রো এন্ট্রোলজির একজন বিখ্যাত চিকিৎসক। একজন মুমূর্ষু রোগীর (খালেদা জিয়) বিষয়ে তার ডাক্তাররা সংবাদ সম্মেলন করে বলছেন। কিন্তু হাছান মাহমুদ তার উল্টোটা বলছেন। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে তথ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি তাচ্ছিল্য করে উত্তর দেন যে, খালেদা জিয়ার পেটে ব্যথা বা হাঁটু ব্যথার উপর নির্ভর করে কি দেশের সূচক তৈরি হবে?
আইন মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এ দেশে বিচার বিভাগ কোথায় স্বাধীন? বিএনপির পক্ষে কোনো বিচারক রায় দিলে তাকে প্রাণভয়ে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়? তারেক রহমানকে নিরপেক্ষ রায়ে খালাস দেয়ার কারণে বিচারক মোতাহারকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। তিনি তো বিচার বিশ্লেষণ করে নিরপেক্ষ রায় দিয়েছিলেন। আজকে প্রধানমন্ত্রীর মতের বিরুদ্ধে যাওয়ার কারণে সাবেক প্রধান বিচারপতিকে পিস্তল ঠেকিয়ে কেনো দেশ ছাড়া করলেন? এটা কোন আইন? কোন প্রক্রিয়ার কথা বলছেন?
রিজভী বলেন, আইনমন্ত্রী সকল নিয়ম কানুন, বিধি ও সংবিধান লঙ্ঘন করে তার চাকরি ধরে রাখার জন্যে মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। আজকে দেশের প্রকৌশলী, আইনজীবী, সাংবাদিক, শিল্পী, চিকিৎসক, শিক্ষক সবাই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ। তারা সবাই রাস্তায় নেমেছেন সরকারের অবৈধ ও অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। সবাইকে আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান রিজভী।
প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান চুন্নুর পরিচালনায় মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন─ এ্যাবের সেক্রেটারি প্রকৌশলী আলমগীর হাসিন আহমেদ, বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সেলিম ভুঁইয়া, বিএনপির সহ প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী, সেক্রেটারি শহীদুল ইসলাম, প্রকৌশলী আব্দুল হালিম পাটোয়ারী, প্রকৌশলী মিয়া মো: কাইয়ুম, প্রকৌশলী মাহবুব আলম, রিয়াজ উদ্দিন ভুঁইয়া, প্রকৌশলী আসিফ হোসেন রচি, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোটের রফিকুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন প্রকৌশলী মুহিত রুমি, হেলাল উদ্দিন তালুকদার, কামরুল হাসান সাইফুল, শফিউল আলম তালুকদার সবুজ প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন