শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

তারেক রহমান সম্পর্কে মিথ্যাচার করা শেখ হাসিনা-জয়ের প্রধান রাজনৈতিক কর্মসূচি: রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০২২, ৬:৩৩ পিএম

তারেক রহমান সম্পর্কে অপপ্রচার এবং মিথ্যাচার করাটাকে শেখ হাসিনা কিংবা তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় নিজেদের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, সম্প্রতি ফাঁস হওয়া একটি চাঞ্চল্যকর টেলিফোন রেকর্ডের ঘটনা উন্মোচিত হওয়ার পর যখন ফুঁসছে মানুষ, তখন জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার হীন উদ্দেশ্যে চরিতার্থ করতে নির্লজ্জ নিরেট মিথ্যাচারের বেসাতিতে নেমেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা জয়। তিনি তার ভেরিফাইড ফেসবুকে বহু বছরের পুরানো একটি ভুয়া হাস্যকর ভিডিও আপলোড দিয়ে দাবি করেছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান উৎকোচ চাওয়ার কারণে নাকি ২০০৫ সালে ভারতের টাটা কোম্পানি বাংলাদেশে তিন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিয়েছিল! এই আজগুবী উদ্ভট ভিডিও বার্তার মাধ্যমে আবারো প্রমাণিত হলো আওয়ামী লীগ জেনেটিক্যালি মিথ্যাবাদী স্বৈরাশাসক।

বৃহস্পতিবার (০৩ মার্চ) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, টাটা গ্রুপের অবাস্তব বিনিয়োগ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছেন ড. আনু মুহাম্মদের নেতৃত্বাধীন বামপন্থীদের বড় প্ল্যাটফরম তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। তারা লাগাতারভাবে বিক্ষোভ সমাবেশ, অবস্থান কর্মসূচি, সভা-সেমিনার কর্মসূচিতে রাজপথে উত্তাপ ছড়ায়। ওই কমিটি সকল আন্দোলনের সাথে সেই সময়ের বিরোধী দল আওয়ামী লীগ সরাসরি সংযুক্ত ছিল এবং তারা যৌথভাবে কর্মসূচি পালন করতো। আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে টাটা গ্রুপের বিনিয়োগ প্রস্তাবকে আত্মঘাতি ও আত্ম মর্যাদাহীন দেশবিরোধী আখ্যা দিয়ে তীব্র ভাষায় বক্তব্য রাখেন। তখন আওয়ামী লীগের সকল এমপি টেবিল চাপড়ে তাকে সমর্থন দেন।

তিনি বলেন, ওয়ান ইলেভেনের কথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা দখল করলে সেই সরকারের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টার কাছে সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমানের বিচার চেয়ে তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির পক্ষ হতে ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্মারকলিপি দিয়ে তার বিরুদ্ধে টাটার বিনিয়োগ প্রস্তাব বিষয়ে তিনটি অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। সেখানে তারা উল্লেখ করেছিল- টাটার কয়লা এবং গ্যাস ও কয়লাজাত পণ্য রপ্তানিমুখী প্রকল্পের ১ম প্রস্তাব বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়নে নাকচ হয়। তিনি স্বীয় বিবেচনায় ২য় প্রস্তাব বিশেষজ্ঞদের উপেক্ষা করে তথাকথিত সচিব কমিটির মতামতের ভিত্তিতে গ্রহণ করে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পেশ করেন। সরকার গণপ্রতিরোধের মুখে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিরত থাকে। মাহমুদুর রহমান টাটার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে সরকারের উপর চাপ অব্যাহত রাখেন। তাদের এই দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন হলেও তাদের এই কথা থেকে বোঝা যায় যে- টাটা’র প্রস্তাবিত প্রকল্পের ব্যাপারে তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি উত্থাপিত এই তিনটি অভিযোগেও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত, টাটা বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ প্রস্তাব প্রত্যাহার করেনি বরং তৎকালীন গনমুখী বিএনপি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং জনগণের বিরোধিতার কারণে বাংলাদেশ টাটার বিনিয়োগ প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। সুতরাং, উৎকোচ চাওয়ার অভিযোগে টাটা বিনিয়োগ প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিয়েছে, সজীব ওয়াজেদ জয়ের এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ মূর্খতাপূর্ণ, অরুচিকর, মিথ্যা এবং বানোয়াট। এই প্রকল্পের তারেক রহমানের সংশ্লিষ্টতা একটি ডাহা মিথ্যাচার ও দুরভিসন্ধিমূলক। সেই সময় টাটা গ্রুপের বিনিয়োগের বিরোধিতা করা আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতা সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছ থেকে টাটা গ্রুপের বিনিয়োগ না হওয়ার বিষয়ে হা-হুতাশ রীতিমতো ভন্ডামি।

রিজভী বলেন, টাটা গ্রুপের নাম মাত্র দামে গ্যাস লাভের অবাস্তব প্রস্তাব এবং বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তা প্রত্যাখ্যান করার বিষয়টি সেই সময়ের সকল দেশি এবং বিদেশি মিডিয়াতেই ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। তৎকালীন জ্বালানি উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান গতকাল একটি বিবৃতিতে বলেন, ২০০৪ সালে টাটা গ্রুপের প্রধান রতন টাটা বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহ প্রকাশ করেন এবং একটি সার কারখানা, একটি ইস্পাত কারখানা ও সেগুলো পরিচালনার জন্য একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব দেন। তাদের প্রস্তাবে শর্ত রাখা হয়েছিল যে, এই তিনটি প্রকল্পের জন্য তাদেরকে ২০ বছর যাবৎ ১.১০ মার্কিন ডলার মূল্যে প্রতি ইউনিট (এক হাজার ঘন ফিট) গ্যাস সরবরাহ করতে হবে। সেই সময় আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের মূল্য ছিল প্রতি ইউনিট ৫.৮৯ ডলার। টাটার প্রস্তাবে গ্যাসের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজার তো বটেই, দেশের অভ্যন্তরীণ গৃহস্থালী কাজে ব্যববহৃত গ্যাসের মূল্যের চেয়েও অনেক কম ধরা হয়েছিল। সেই কারণে আমি সেই সময় তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করি এবং গ্যাসের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজার অনুযায়ী নির্ধারণ করতে বলি। ২০০৬ সালে তারা গ্যাসের মূল্য কিছুটা বৃদ্ধি করে সার কারখানার জন্য ৩.১০ ডলার এবং ইস্পাত কারখানা ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রর জন্য ২.৬০ ডলার প্রতি ইউনিট দামে আবারও ২০ বছরের জন্য গ্যাস সরবরাহের গ্যারান্টি ক্লজ সহ নতুন প্রস্তাব দেয়।

উল্লেখ্য যে, ইতোমধ্যে ২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছিল-৬.৭৩ ডলার। দেশের জনগণের সম্পদ এত কম দামে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে জনগনের সাথে বেঈমানী করার মনমানসিকতা আমার বা তৎকালীন সরকারের ছিলো না। ফলে, আন্তর্জাতিক বাজারের দামের সাথে টাটা গ্রুপের প্রস্তাবিত দামের এই বিপুল পার্থক্যের কারণ দেখিয়ে আমি তাদের প্রস্তাবও বাতিল করে দেই। এই সময় তারা তাদের প্রস্তাব স্থগিত করে। এরপরও টাটা গ্রুপ কম দামে গ্যাসের জন্য ২০০৮ সাল পর্যন্ত তৎকালীন মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারের কাছে তদবির চালিয়ে যায়। কিন্তু সেই সরকারও টাটার আবদার পুরণ করতে না পারায় ২০০৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে টাটা ঘোষণা দেয় যে, তারা তাদের বিনিয়োগ প্রস্তাব ফিরিয়ে নিচ্ছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বিএনপি সরকারের পর ওয়ান ইলেভেনের কথিত তত্বাবধায়ক সরকারের কাছে অবাস্তব চাহিদা পুরণের জন্য এক বছর যাবত ধ্বর্না দিতে থাকে টাটা কর্তৃপক্ষ। অবশেষে ব্যর্থ হয়ে ২০০৮ সালের ৩০ জুলাই এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ প্রস্তাব প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় টাটা।

তিনি বলেন, টাটা নিজেই স্বীকার করছে তাদের চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা না পাওয়ায় বিনিয়োগ প্রস্তাব প্রত্যাহার করেছে আর সজিব ওয়াজেদ জয় আবিষ্কার করেছে যে, উৎকোচ চাওয়ার কারণে নাকি টাটা বিনিয়োগ প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তবে সজিব ওয়াজেদ জয়কে বলতে চাই-‘কোন সত্য কোনদিনই অতীত হতে পারে না’।

রিজভী আরও বলেন, টাটার বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য তৎকালীন সরকার প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে দিয়ে একটি কমিটি করে দিয়েছিল। প্রফেসর ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ টাটার সঙ্গে আলোচনায় দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এই বিশেষজ্ঞ কমিটি “ইউনিট প্রতি গ্যাসের দাম এবং নিরবচ্ছিন্ন ২৫ বছর গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা" নিয়েই দ্বিমত থাকায় টাটা তাদের বিনিয়োগ প্রস্তাব প্রত্যাহারের সুপারিশ করে। এ‌ই কমিটি সিদ্ধান্তে আসেন যে -"এটি শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হবে না।" এক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়াও হস্তক্ষেপ করেন নি। তারেক রহমান এবং গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের সম্পৃক্ত হওয়া আষাঢ়ে গল্প মাত্র।

তিনি বলেন, সজীব ওয়াজেদ জয়ের বানোয়াট ও হাস্যকর এই ভিডিওতে বলা হয়েছে-টাটা বাংলাদেশে ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব করেছিল। মামুন নাকি টাটা কর্তৃপক্ষের সাথে একান্ত বৈঠকে “২০০ কোটি ডলার আর এখন নির্বাচনের সময় ১০০ কোটি ডলার দিতে হবে” বলে উৎকোচ দাবী করেছিলেন। আমরা সকলেই জানি ১ বিলিয়নে হয় ১০০ কোটি আর ৩ বিলিয়নে হয় ৩০০ কোটি।তাহলে পুরোটাই উৎকোচ চেয়েছে ?? মিথ্যাচার করারও তো একটা সীমা থাকে। হিটলারের প্রচারমন্ত্রী জোসেফ গোয়েবলসও এ কথা শুনে বেহুঁশ হয়ে যেতেন ।

বিএনপির অন্যতম শীর্ষ এই নেতা বলেন, দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার, মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দূর্নীতি লুটপাট, সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের হাহাকার আর আহাজারী থেকে মানুষের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করাই মূল লক্ষ্য। মিথ্যা বলা আওয়ামী লীগের জীবিকা উপার্জনের একমাত্র উপায়। কারণ এরা এদেশের আর বৈধ সত্তা নয়। অসত্য ও কাল্পনিক গল্প বানিয়ে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দকে বিভ্রান্ত করা যাবে না, জনগণ এখন অনেক সচেতন। এই দিন চিরদিন থাকবে না। নিশিরাতের সরকারকে রক্ষার সব পথ দিনে দিনে সংকুচিত হয়ে আসছে। এখনও এদেশের তরুণ যুবকের রয়েছে অপরাজেয় জীবনীশক্তি, সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের প্রবল উত্থানে এই গণবিরোধী সরকারের পরাজয় এখন অত্যাসন্ন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন