দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) থেকে মোঃ গোলাম ফারুক: দুপচাঁচিয়া উপজেলার কোল ঘেঁষে বয়ে যাওয়া স্রোতস্বি নাগরনদ এখন প্রায় মৃত নদে পরিণত হয়েছে। ‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে’। কবিতার এ পংক্তিটির তৎকালীন সময়ে সত্যতা থাকলেও বর্তমানে স¤পূর্ণ তার উল্টো এ নদের চিত্র হয়েছে।
জানা গেছে, স্বাধীনতার পূর্বে থেকে স্বাধীনতার পরবর্তী আশির দশক পর্যন্ত এ নদ ছিল জৌলুসে পরিপূর্ন। সে সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নৌপথে উপজেলার সদর বন্দর তিনমাথা সহ অন্যতম ব্যবসায়ীস্থান হিসাবে পরিচিত বন্দর নগর তালোড়ায় ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ধরণের মালামাল এ নদে পথে আনা নেয়া করতো। বর্ষা কালে পানিতে টইটুম্বুর এ নদে পাল তোলা নৌকা সহ বিভিন্ন ধরনের নৌযান যাতায়াত করতে দেখা গেছে। এছাড়া জলজ প্রাণী শুশুক এর ডিগবাজি দেখতে এলাকার শিশু-কিশোর ও বয়োবৃদ্ধরা নদের কিনারে ভীড় জমাতো। কিন্তু বর্তমানে নাব্যতা হীনতা ও বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারণে সে নাগর নদ আর শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে না। আর এ সুযোগে নদ কিনারে অবস্থিত প্রায় অর্ধ শতাধিক গ্রামের লোকজন ইরিবোরো ধানের বীজ তলা, ধান চাষ সহ বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী শাক সবজি ও রবি শস্যের চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বর্তমানে এ চিত্র দেখে আর মনে হয় না এই সেই স্রোতস্বিনী নাগর নদ। এ ব্যাপারে উপজেলার বন্দর নগর তিনমাথার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শ্যাম সুন্দর আগরওয়ালা (৭০), বিশিষ্ট পাট ব্যবসায়ী মরহুম আলহাজ্ব ময়েজ সরদারের ছেলে আলহাজ্ব আব্দুর রাজ্জাক (৫৩), মৃত ইসমাইল হোসেন সরদারের ছেলে আতাউর রহমান সরদার বাবলা (৪৮), মৃত প্রভাষ বসাকের ছেলে প্রান্তোষ বসাক (৫১) ও তালোড়া বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী চাল কল মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব আনোয়ারুল হক তালুকদার (৭২), ধলাহার গ্রামের সন্তোষ চৌধুরী (৬০) সহ আরো অনেকেই “দৈনিক ইনকিলাব” কে জানান, দুপচাঁচিয়া উপজেলার কোল ঘেষে প্রবাহিত এ নদ পথে বিভিন্নস্থান থেকে আসা প্রতিদিন শত শত নৌকা ও বেদে বহরের দল দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদর সহ বন্দর নগর তালোড়ায় সে সময় ভীড় জমাতো। কিন্তু আজ নদে পানি শুন্যতার জন্য সেই চিত্র আর চোখে পড়ে না। তাছাড়া বর্ষা মৌসুমেও আগের মতো এ নদের প্রবল স্রোতও আর নেই। নদের বক্ষে ও তীর ঘেঁষে মাটি কাটা ও বালু উত্তোলনের ফলে পরিবেশও হচ্ছে হুমকির সম্মুখিন। পানি শুন্যতার জন্য নদের তীরবর্তী এলাকার কৃষকরা আর আগের মতো তাদের ক্ষেতে সেচ কাজেও পানি দিতে পারছে না। তবে এলাকাবাসী মনে করেন খনন কাজ করে নাব্যতা বাড়ালে কিছুটা হলেও পানি শুস্ক মৌসুমে ধরে রাখা সম্ভব হবে এবং এলাকার চাষাবাদেও কৃষকরা উপকৃত হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন