বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

পিতা-মাতার নৈতিক ও আইনী অধিকার

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ৬ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

\ পাঁচ \
তাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ পাওয়া যায়। পিতা-মাতার ভরণ-পোষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিতে তাদেরকে দায়িত্ব প্রদান করলে তারা কতটুকু সঠিক ও গ্রহণযোগ্য নিষ্পত্তি করতে পারবেন তা নিশ্চত নয়। তা ছাড়া আইনের ২নং উপধারায় বলা হয়েছে, কোন অভিযোগ আপোষ নিষ্পত্তির জন্য প্রেরিত হলে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান, মেয়র, মেম্বার বা কাউন্সিলর উভয় পক্ষকে শুনানির সুযোগ দিয়ে তা নিষ্পত্তি করবেন, যা আদালত কর্তৃক নিষ্পত্তিকৃত বলে গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে তাদেরকে আদালতের সমপর্যায়ের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। ইসলামের বিধান আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের পর ‘উলিল আমর’- এর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং তাদের আনুগত্যের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে:- হে ঈমানদারগণ! তোমার আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমর তাদের তারপর যদি তোমার কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি প্রত্যার্পণ কর। যদি তোমরা আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর ও পরিণতির দিক থেকে উত্তম। “আল-কুরআন, ৪:৫৯”।
উলিল-আমর’ আভিধানিক অর্থে সে সমস্ত লোককে বলা হয়, যাদের হাতে কোন বিষয়ের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব অর্পিত থাকে। সে কারণেই ইবনে আব্বাস রা. মুজাহিদ ও হাসান বসরী রহ. প্রমুখ মুফাসসিরগণ আলিম ও ফকীহ সমপ্রদায়কে ‘উলিল-আমর’ সাব্যস্ত করেচেন। তাঁদের হাতেই দীনা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব অর্পিত। মুফাসসিরীনের অপর একদল, যাদের মধ্যে আবু হুরায়রা রা. প্রমুখ সাহাবায়ে কিরামও রয়েছেন, তারা বলেছেন যে, ‘উলিল-আমর’- এর অর্থ হচ্ছে, সে সমস্ত লোক যাদের হাতে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব ন্যস্ত। এছাড়া তফসীরে ইবনে কাসীর এবং তফসীরে মাযহারীতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ শব্দটির দ্বারা (আলিম ও শাসক) উভয় শ্রেণীকেই বোঝায়। কারণ, নির্দেশ দানের বিষয়টি তাঁদের উভয়ের সাথেই সম্পর্কিত। “মুফতী মুহাম্মদ শাফী, তাফসীর মা‘আরেফুল ক্বোরআন, পৃ.২৬০”। মাতা-পিতার ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩ পর্র্যালোচনায় বলা যায়, সন্তান ও পিতা-মাতার সম্পর্ক খুবই আন্তরিক ও গভীর। ধর্মীয় দিক থেকে পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও সদাচরণ- এর প্রতি অত্যধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছৈ। আইনী প্রতিকারের মাধ্যমে শ্রদ্ধাবোধ, মর্যাদা ও সদাচরণ আদায় করার দৃষ্টান্ত নেই বললেই চলে। মূলত পিতা-মাতা ও সন্তানের সম্পর্ক এমন নয় যে, পিতা-মাতা তার ভরণ-পোষণ ও সদাচরণ প্রাপ্তি মামলা বা অভিযোগ দাখিল করে তা সন্তানের নিকট থেকে আদায় করবেন। বিষয়টি যতটুকু না আইনী তার চেয়ে অনেক বেশি নৈতিক ও মূল্যবোধ সম্পর্কিত। বাংলাদেশে ইতঃপূর্বে এমন আইন ছিল না। বর্তমান সমাজের অবক্ষয়, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের স্থলনের ফলে এ জাতীয় বিষয়ে আইন করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ফলে আইনটি প্রণয়ন করা হয়। সমাজের সর্বস্থরে ধর্মীয় শিক্ষার অনুশীলন ও চর্চা, নৈতিকতা, সহনশীলতা, সহমর্মিতা, ভালোবাসা,শ্রদ্ধাবোধ, ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধসহ চরিত্র বিরাজমান থাকলে এ আইন প্রণয়নের প্রয়োজন হতো না। তাই পিতা মাতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা, তাদের প্রতি সদাচরণের গুরুত্ব এবং ইহকালীন ও পরকালীন প্রতিদান ও শাস্তি এবং সার্বিক মূল্যায় সমাজের প্রত্যেক স্তরে বিকাশ প্রয়োজন। এর পাশাপাশি আইনটিকে আরো গঠনমূলক ও কার্যকর করার মাধ্যমে পিতা মাতার প্রতি দায়িত্ব বোধ সৃষ্টি করা সম্ভব। আল্লাহ তা’আলার ইবাদতের পরপরই পিতা মাতার প্রতি সদ্ব্যব্যহারের প্রতি পবিত্র কুরআনে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন