সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

পিতা-মাতার নৈতিক ও আইনী অধিকার

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

\ ছয় \
পিতা মাতার মাধ্যমেই মানুষ পৃথিবীতে আগমন করে এ কারণে সন্তান্তের জীবনে পিতা মাতার অবদান অতুলনীয়। হাক্কুল্লাহ বা আল্লাহর হক আদায়ের পর বান্দার হকের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। বান্দার হকের মধ্যে পিতা মাতার হক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পিতা মাতার মর্যাদা অনেক উঁচু, যা পবিত্র কুরআনের বর্ণনা থেকে হৃদয়ঙ্গম করা যায়। কেননা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহর অধিকারের পাশাপাশি পিতা মাতার অধিকারের বিষয়ে বলা হয়েছে এবং আল্লাহ তা’আলার কৃতজ্ঞতার পাশাপামি পিতা মাতার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে পিতা মাতার মর্যাদা ও সদাচরণের বিষয়ে আলোচনা করা হলো: পিতা মাতার প্রতি আচরণ ও ব্যবহারে বিষয়ে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন: তোমার রব ফয়সালা করে দিয়েছেন তোমরা তাঁর ইবাদত ছাড়া অন্য কারোর ইবাদাত কর না, পিতা মাতার সাথে ভালো ব্যবহার কর। যদি তোমাদের কাছে তাদের কোনো একজন বা উভয় বৃদ্ধ অবস্থায় থাকে, তাহলে তাদেরকে “উহ” পর্যন্তও বল না এবং তাদেরকে ধমকের জবাব দিও না বরং তাদের সাথে সম্মান ও মর্যাদার সাথে কথা বল। আর দয়া ও কোমলতা সহকারে তাদের সামনে বিনম্র থাক এবং দু’আ করতে থাকো এই বলে “ হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া কর,যেমন তারা (দয়া, মায়া, মমতা সহকারে) শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন। আল কুরআনুল কারীমের উপরোক্ত আয়াত দুটি থেকে এ বিষয়ে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়: প্রথমত, আল্লাহ তা’আলার হক আদায়ের পর মানুষের উপর সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো পিতা মাতার প্রতি সদাচরণ করা। কেননা পবিত্র কুরআনে আল্লাহর একত্বের পর সর্বপথম নির্দেশই পিতা মাতার সাথে ভালো ব্যবহার এর নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, পিতা মাতা যখন বার্ধক্যে উপনীত হন তখন তাদের মেজাজ কিছুটা খিটখিটে হয়ে যেতে পারে এবং বয়সের কারণে তাদের আচরণে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটে থাকলে তা স্বাভাবিকভাবে গ্রহন করা। তাদের কথা খুশীমনে মেনে নেয়া। তাদের কোন কথায় বিরক্ত হয়ে জবাবে উহ্ শব্দটি উচ্চারণ না করা অথবা তাদের সাথে এমন আচরণ না করা যাতে তারা উহ্ শব্দটি উচ্চারণ করেন। ধমকের সুরে বা উচু কষ্ঠে বা কর্কশ ভাষায় তাদের সাথে কথা না বলা। আমাদের শৈশবকালের কথা স্মরণ করা যে, তারা আমাদের প্রতি কীরুপ অনুগ্রহ করেছেন। তৃতীয়ত: পিতা মাতার মান সম্মানের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা। কথা বলার সময় তাদের সম্মানের প্রতি খেয়াল রাখা। বয়সের শেষ পর্যায়ে এসে যখন তারা দূর্বল হয়ে পড়েন তখন তাদের প্রতি বিশেষভাবে নজর দেয়া। বয়সের কারণে তাদের মান অভিমান অনুধাবন করা এবং বিরক্ত হয়ে তাদের সম্মুখে এমন কথা না বলা যা তাদের মান সম্মানের পরিপন্থি হয়। চতুর্থত: আচার আচরণ ও ব্যবহারে তাদের সাথে বিনয়ী ও কোমল স্বভাবের আচরণ প্রকাশ করতে হবে। আনুগত্যের সাথে মাথা অবনত রাখা, তাদের নির্দেশ মনযোগ দিয়ে শ্রবণ করা এবং পালন করা। বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের খেদমতে নিয়োজিত থাকা; কিন্তু এক্ষেত্রে বিরক্তি, অহমিকা বা অনুগ্রহ প্রকাশ না পাওয়া উচিত। কেননা এ রকম সেবা ও পরিচর্যা আমাদের নিকট তাঁদের প্রাপ্য। তাদের সেবা ও পরিচর্যা করার সুযোগ লাভে আল্লাহর শোকর আদায় করা উচিত।
আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন: আর আমি মানুষকে তার পিতা মাতার সাথে সদ্ব্যব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছে। তা মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো দু বছরে হয়। আমি নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতা মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও।



 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
গনতন্ত্র ১৩ এপ্রিল, ২০১৮, ১০:৫৮ এএম says : 0
মাতা – পিতার সন্তষ্টির ফলে, বীনা পয়সায় বেহেস্তের টিকেট মিলে ৷৷৷ **আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁর সাথে তোমরা কিছুর শরীক করিও না এবং সদ্ব্যবহার কর মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম, অভাবগ্রস্হ, নিকট-দূর প্রতিবেশী, সাথী, মুছাফির এবং তোমাদের গোলাম-বাঁদীগণের, নিঃসন্দেহে আল্লাহ ভালবাসেন না অহংকারী দাম্ভিক লোকদের। ( সূরা নিসা: আয়াত-৩৬) ***উপরে বর্ণীত সকল প্রকার লোকদের সাথে সদ্ব্যবহার কর। আর এমন লোকেরাই সদ্ব্যবহার করে না যাহাদের সম্পর্কে বর্ণীত হচ্ছে:(১)অহংকারী, কাহারও প্রতি লক্ষ্যই করে না। (২)কৃপন, কাহাকেও কিছু দিবার প্রবৃত্তি হয় না।(৩)রাসূলের প্রতি তাহাদের আস্হা নাই। হুযূর(সাঃ)এই সমস্ত কাজের যে সওয়াবের প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন তৎপ্রতি রিয়াকার, লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে অপাত্রেও দান করে। নতুবা যোগ্য অপাত্রেও দান করে না। (বয়ানুল কোরআন) **তোমাদের প্রতি নির্ধারিত হইয়াছে ইবাদত করিবে না তাঁকে ব্যতিত, সদাচরন করিবে পিতা-মাতার প্রতি; তাঁদের একজন কিংবা উভয়ে বার্ধক্যে পৌছিলে তাঁদের উদ্দেশ্য উহ শব্দটুকু বলিবে না এবং না তাহাদিগকে ধমক দিবে, বরং কথা বলিবে আদবের সাথে। ( সূরা বনীইস্রাঈল আয়াত-২৩) **এবং তাঁহাদের সন্মূখে করুনভাবে বিনয়ের সহিত নত থাকিবে, আর এইরূপ দো’আ করিতে থাকিবে-হে আমার পরওয়ারদিগার! তাঁহাদের উভয়ের প্রতি দয়া করুন-যেইরূপ তাঁহারা আমাকে লালন-পালন করিয়াছেন শৈশব কালে। ( সূরা বনীইস্রাঈল আয়াত-২৪) **যাহা কিছু তোমাদের অন্তরে আছে, তোমাদের রব্ব তাহা উত্তমরূপে জানেন; যদি তোমরা সৎপ্রকৃতির হইয়া থাক,(এবং ঘটনাক্রমে কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি হইয়া পড়ে, অতঃপর অনুতপ্ত হইয়া তওবা কর)তবে তিনি তওবাকারীদের অপরাধ ক্ষমা করিয়া দেন। (সূরা বনীইস্রাঈল আয়াত-২৫) *** পিতা-মাতার প্রতি শুধু বাহ্যিক সন্মান প্রদর্শন করিয়া ক্ষান্ত হইও না। অন্তরে অনুগত্যের ইচ্ছা রাখিও। কেননা, আল্লাহ তোমাদের মনের খবর জানেন। এই সহজবানী শুনাইতেছেন-“তোমরা যদি সৎ হও, এবং বাহ্যিক ব্যবহারে ত্রুটি হওয়ার পরক্ষনে লজ্জিত হইয়া তওবা কর, তবে তিনি ক্ষমা করিয়া দেন। (বয়ানুল কোরআন) **“আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সহিত সদ্ব্যব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি,তবে তারা যদি শরীক করে,বল প্রয়োগ করে,তবে তা আনগত্য করবে না।আমার কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন করতে হবে;তোমাদেরকে তোমাদের কৃতকর্মের খবর দেওয়া হবে i (সূরা আনকাবূত আয়াত-৮) **“এবং আমি মানুষকে তাহার মাতা-পিতা সন্বন্ধে নির্দেশ দিয়াছি,তাহার মাতা ক্লেশের উপর ক্লেশ সহ্য করিয়া তাহাকে গর্ভে ধারন করিয়াছে এবং দুই বৎসরে তাহার দুধ ছাড়ান হয়, যেন তুমি শুকরিয়া আদায় কর আমার এবং তোমার মাতা-পিতার;আমরই দিকে প্রত্যাবর্তন করিতে হইবে। (সূরা লোক্বমান ৩১: আয়াত-১৪) ***এই স্তনদানের কালেও মাতা সর্ব প্রকারে শিশুর খেদমত করে।এইরূপে পিতাও নিজের অবস্হা অনুযায়ী কষ্ট করিয়া থাকে।কাজেই আমি আমার দাবীর সহিত মাতা-পিতার হক আদায় করিতেও আদেশ করিতেছি। ( বয়ানুল কোরআন) *** মানুষকে তার পিতা-মাতার সহিত সদ্ব্যব্যবহারের নির্দেশ প্রদান করলাম,তার মাতা তাকে কষ্ট করে গর্ভে ধারন করে ও অতিকষ্টে প্রসব করে;গর্ভধারন ও স্তন্যদানে ত্রিশমাস যেখানে সময় লাগে,ফলে পূর্ণ শক্তি পেয়ে যৌবনে উপনিত হয় এবং চল্লিশে পৌঁছে;তখন বলে, হে আমার রব্ব !নেয়ামতের শুকরিয়া করতে আমাকে শক্তি প্রদান একর,যা আমাকে ও পিতা-মাতাকে দিয়েছ।আর তোমার পছন্দসই আমল যেন করতে পারি,আর আমাকে যোগ্য সন্তান-সন্ততি প্রদান কর।আমি তোমার অভিমূখী এবং নিশ্চয়ই আমি একজন মুসলিম। ( সূরা আহক্বাফ ৪৬: আয়াত-১৫) ** স্মরন করো!আমরা ইসরাইলের বংশধর থেকে চুক্তি গ্রহন করিয়াছিলাম-“তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো উপাসনা করবে না,আর মাতা-পিতার সহিত ভাল ব্যবহার করবে এবং আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি,আর এতিমদের প্রতি,আর মিসকিনদের প্রতি;আর লোকদের সাথে ভালভাবে কথা বলবে;আর নামায কায়েম করবে ও যাকাত আদায় করবে।“তারপর তোমরা তোমাদের অল্প কয়েকজন ছাড়া ফিরে গেলে,আর তোমরা ফিরে যাবার দলের। ( সূরা আল্-বাক্বারাহ ২:আয়াত-৮৩) ***আপনি বলুন,আস্,আমি তোমাদিগকে ঐ সকল বিষয় গুলি পড়িয়া শুনাই যে-গুলি তোমাদের রব্ব তোমাদের জন্য হারাম করিয়াছেন,তাহা এই যে,আল্লাহ তায়ালার সহিত কোন বস্তূকে শরীক স্হির করিও না, পিতা-মাতার সহিত সদ্ব্যব্যবহার করিবে এবং নিজেদের সন্তানদিগকে দারিদ্রের কারনে হত্যা করিও না;আমি ইহাদিগকে এবং তোমাদিগকে রেযেক দান করিব এবং লজ্জাহীনতার যত পণ্হা আছে উহার নিকটেও যাইও না,তাহা প্রকাশ্যে হউক বা গোপনে হউক,আর যাহাকে হত্যা করা আল্লাহ হারাম করিয়াছেন,তাহাকে হত্যা করিও না,কিন্তূ হক ভাবে (শরীঅতানুযায়ী;এ বিষয়ে তোমাদিগকে তাকিদী নির্দেশ দিয়াছেন,যেন তোমরা উপলব্ধি কর। ( সূরা আন’আম ৬:আয়াত-১৫১)
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন