সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

ধ্বংসের মুখে নেছারাবাদের কাঠের ব্যবসা

ইজারা আদায় নিয়ে স্বরূপকাঠি পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসনের রশি টানাটানির পর প্রশাসনের বিজয়

| প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নেছারাবাদ (পিরোজপুর) থেকে মো. হাবিবুল্লাহ : নেছারাবাদে সন্ধ্যার শাখা খাল শীতলার মোহনা ও সন্ধ্যা নদীর চরের কাঠ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ইজারা আদায় নিয়ে পৌরসভা এবং উপজেলা প্রশাসনের মুখোমুখী অবস্থানে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের সংঘবদ্ধ বিক্ষোভ ও সমাবেশের পর অবশেষে উপজেলা প্রশাসনের বিজয় হয়েছে। গত ৭মে নেছারাবাদ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) মো. কাওছার হোসেনের অফিসে ব্যবসায়ীরা এসে জড়ো হয়। সেখানে তারা (ব্যবসায়ী) প্রশাসনের ঘোষণানুযায়ি অঙ্গিকারনামায় ব্যবসায়ী নেতারা স্বাক্ষর করলে প্রশাসনের সাথে খাজনা আদায়ের দন্ধ নিরসন হয়।
এদিকে গত ১৭ বছর ধরে কাঠের চর ব্যবসায়ীদের হাতে নিয়ন্ত্রে থাকলেও হঠাৎ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রনে যাওয়ায় চরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন চরের অনেক ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন চর তাদের (ব্যবসায়ীদের) নিয়ন্ত্রে থাকায় বিচার ব্যবস্থা অনেক কঠিন ছিল। সি.এফ.টি প্রতি মাত্র চার টাকা খাজনা নেওয়া হত। এখন প্রশাসন খাস খালেকশনের মাধ্যমে তারাও চার টাকা করে খাজনা নিচ্ছেন। যখন তারা (প্রশাসন) চরের ওপেন ডাক দিবেন। আর তা যদি বাহিরের কোন লোকের কাছে চলে যায় তাহলে তা খারাপ ছাড়া ভাল কিছু বয়ে আনবেনা বলে ওই সব ব্যবসায়ীরা মনে করেন।
তবে সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) মো. কাওছার হোসেন বলেন, আমরা মাত্র চার টাকা করে খাজনা নিচ্ছি। পূর্বে যারা চরের খাজনা আদায় করত তারা প্রতি কাঠের ট্রলার থেকে ২০-৫০ টাকা করে আদায় করত। এছাড়াও তারা চরে যারা কাঠ রাখত তাদের কাছ থেকে মাসে ৩০০ টাকা করে নিত। আমরা সেটা নিচ্ছিনা। তারা সে টাকা তোলে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবেন। ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার জন্য আমরা সব ধরনের সহযোগীতা করব।
জানা যায়, স্বরূপকাঠির পৌরসভা গত ১৭ বছর ধরে তাদের কাঠ মহাল দাবি করে ব্যবসায়ীদের ইজারা দেয়। অপরদিকে গত পহেলা বৈশাখ থেকে উপজেলা প্রশাসন ওই চরের খাস জমির মালিকানা দাবি করে খাস কালেকশনে নামেন। এতে, চরের ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা একত্রিত হয়ে গত ২২ এপ্রিল রোববার পৌরসভা ভবনের সামনে এসে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেন। ইজারা আদায় নিয়ে ওই দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রশি টানাটানির জেরে দু‘দিন পর্যন্ত কাঠ চরের বেঁচা-বিক্রি বন্ধ রেখেছিল ব্যবসায়ীরা। এতে বেশি হতাশ হয়ে পড়েিেছল কাঠের চরের ছোটখাট ব্যবসায়ীরা। এখানকার ্ঐতিহ্যবাহী কাঠ ব্যবসা বন্ধ করার চক্রান্ত হচ্ছে সমাবেশে দাবি করেন ব্যবসায়ী ও কাঠ সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরা। চরের ইজারা ব্যবসায়ীদের হাতে না থাকলে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা যেকোন মূল্য সকল অশুভ শক্তি প্রতিহত করবেন বলে সমাবেশে বক্তারা ঘোষণাও দিয়েছিলেন।
ওই দিন রোববার সকালে ইজারা সক্রান্ত বিরোধের সুষ্ঠু সমাধান দাবি করে পাঁচ শতাধিক ব্যবসায়ী ও চরের শ্রমিকরা মিছিল ও সমাবেশ করেন। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন স্বরূপকাঠি পৌরসভার মেয়র মো.গোলাম কবির, কাউন্সিলর রতন দত্ত, জাহিদুল ইসলাম বিপ্লব, কাঠ ব্যবসায়ী কাজী আব্দুস সালেক প্রমুখ
বক্তব্যে মেয়র কবির বলেন গত ১৭ বছর পর্যন্ত পৌরসভার মালিকানায় কাঠ মহাল হিসেবে ওই চর স্বরূপকাঠি পৌরসভা ইজারা দিয়ে আসছে। সে মতে চলতি বাংলা ১৪২৫ সনেও ব্যবসায়ীদের কাছে চরের কাঠ মহাল ইজারা দেয়া হয়। প্রশাসনের মধ্যে একটি অশুভ শক্তি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে ভুল বুঝিয়ে খাস কালেকশনের নামে কর্মচারীদের মাঠে নামিয়ে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছেন বলে তিনি দাবি করেন।
চরের খাস কালেকশন করার বিষয় সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) মো. কাওছার হোসেন বলেন, চরের ওই জমি সরকারের। তাই আইনানুগভাবে প্রশাসন সব কিছু ঠিকঠাক করে খাস কালেকশনে নেমেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে একটু আদটু ঝামেলা হলেও ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ-আলোচনায় সমাধান হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে সি.এফ.টি প্রতি ব্যবসায়ীরা চার টাকা করে প্রশাসনকে খাজনা দিবেন।
প্রসংগত শীতলার খালের পাড়ে ওই চরের একাংশ গত ১৭/১৮ বছর যাবত স্বরূপকাঠি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ পৌরসভা থেকে ইজারা নিয়ে কাঠ ব্যবসায়ীদের কাছে সাবলীজ দিয়ে আসছে। ইজারার সাবলীজ থেকে প্রাপ্ত টাকা ওই প্রতিষ্ঠান দুইটির উন্নয়ন কাজে ব্যায় করা হত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন