সাতক্ষীরার তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদ হোসেনের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, অসদাচরণ ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে তাকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ১২টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানবৃন্দ।
এ দাবিতে আগামী ৩জুন পর্যন্ত উপজেলা পরিষদের যাবতীয় কাজ থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। এছাড়া ৪ জুন উপজেলা চত্বরে সমাবেশ করে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়ার আল্টিমেটাম দিয়েছেন তারা।
শনিবার (২৬ মে) দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের শহীদ স ম আলাউদ্দিন মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘোষণা দেন তালা-কলারোয়া আসনের সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, তালা উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার, দুইজন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, ১২টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা পরিষদের চারজন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার বলেন, ২০১৬ সালের ৯ মে যোগদানের পর থেকে নির্বাহী অফিসার ফরিদ হোসেন ঘুষ গ্রহণ, নানা ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম করছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভয় দেখিয়ে তিনি উপজেলা পরিষদকে ভীতিকর জায়গায় পরিণত করেছেন।
তাকে একজন ‘দুষ্কৃতিকারী’ আখ্যায়িত করে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ২৪ জুন মাসিক সমন্বয় কমিটির সভায় তিনি কয়েকজন চেয়ারম্যানকে শারীরিকভাবে আঘাত করতে উদ্যত হন। এমন কি তাদেরকে আটকে রেখে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেওয়ারও হুমকি দেন।
তিনি আরও বলেন, নির্বাহী অফিসার আইন কানুনের তোয়াক্কা না করেই নিজের খেয়াল খুশিমতো যাবতীয় সিদ্ধান্ত পরিষদের ওপর চাপিয়ে দেন। বিভিন্ন প্রকল্প এবং ইজারাসহ নানা খাতে তাকে নির্ধারিত ঘুষ দিতেই হয়। তিনি বিনা কারণে জনপ্রতিনিধিদের সাথে অসদাচরণ করেন। এমনকি কথায় কথায় তেড়ে আসেন। এ প্রসঙ্গে তারা তালা উপজেলা সমাজসেবা অফিসার, উপজেলা মৎস্য অফিসার, নগরঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান ও ধানদিয়া ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে ইউএনও’র অসৌজন্যমূলক আচরণ এমনকি মারপিট করতে যাওয়ার বিষয়ও তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ইউএনও ফরিদ হোসেন তালা উপজেলার সাড়ে পাঁচ লাখ জনগোষ্ঠীর কাছে আতংক হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তার সাথে বসে উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনার কোনো পরিবেশ নেই বলেও উল্লেখ করেন তারা।
এ সময় তালা-কলারোয়ার সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, বিগত জেলা প্রশাসকের সময়ে ইউএনও’র আচরণ ও দুর্নীতির বিষয়ে কয়েকবার অভিযোগ করা হয়। বিভাগীয় কমিশনারের কাছেও অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাকে তো প্রত্যাহার করাই হয়নি, বরং ইউএনও বহাল তবিয়তে জনপ্রতিনিধিদের সাথে খারাপ আচরণ শুধু নয়, মারতে উদ্ধত হন। সর্বশেষ ২৪ মে উপজেলা পরিষদের সভা চলাকালীন তিনি দুইজন ইউপি চেয়ারম্যানকে মারতে গেছেন। এটা চলতে পারে না। তাকে অবশ্যই প্রত্যাহার করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে তালা উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, দুইজন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. ইকতিয়ার হোসেন ও জেবুন্নেসা খানম এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনের চার সদস্য ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের মেম্বররা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, ইউএনও ফরিদ হোসেনের কাছে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতি বছর জুন মাস আসতেই পরিষদের কয়েকজন সদস্য কিছু অনিয়মতান্ত্রিক কাজ আদায়ের জন্য এ ধরনের প্রচারণা চালিয়ে থাকেন। এবারও তারা একইভাবে তাদের তদবির বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এসব কথা বলছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন