মানবিক সেতুবন্ধনে নতুন সংযোগ কায়েম করতে মাহে রমজানের আগমন। শাশ্বত দীনের প্রেমময় ছোঁয়ায় ঈমানের সামিয়ানা সাজাতে স্বাগত বার্তা নিয়ে আগমন ঘটে প্রতিটি রমজানের। বিশ্বাসের সৌধচূড়ায় হুকুমতে ইলাহীর শিলালিপিতে ঈমানের কালি দিয়ে জীবনসমৃদ্ধির স্রোতধারাকে গতিশীল ও চির চলমান রাখার দাবীতে রমজানের এ্যালবাম হয়ে ওঠে চির সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দিত। এতে উৎসবমূখর হয়ে ওঠে বিশ্বপাড়া। কারণ প্রতি বছরের ৩৩০ দিনের শূন্যতা কাটিয়ে রমজানের সাথে আমাদের সাক্ষাৎ। এ যেন প্রেয়সির একটু পাগলকরা স্পর্শে কাতর হওয়া মাহিনা।
রমজান আসে মানুষের বিভেদ ভেঙ্গে দিতে। রহমত মাগফিরাত আর নাজাতের সৌরভ বিলিয়ে গোটা বিশ্বপাড়াকে নতুনের ছোঁয়ায় উদ্ভাসিত করতেই রমজান। মাহে রমজানের সোনালী পরশে খোদাপ্রদত্ব বরকতের প্রভাবে গজবে ইলাহীর কোনো নিদর্শন পৃথিবীতে প্রভাব বিস্তার করে না। সর্বপরি রমজান মুহাজিরের প্রতিচ্ছবি হয়ে আগমন করে আর গোটা কায়েনাত পালন করে আনসারের ভূমিকা। রমজানের ভূমিকায় ঘরে ঘরে পড়ে যায় ইবাদতের নির্মল আবহ। শহর-নগরের পুরো এলাকা আর গ্রাম-গঞ্জের পাড়া-মহল্লাসহ সর্বত্রই বিস্তার করে ভিন্ন আমেজ। তিনি তো (আল্লাহ তাআলা) বলেছেন, রমজান আমার জন্য, এবং আমি নিজ হাতে এর প্রতিদান দেব।’ এছাড়াও তাওবাহকারীর জন্য এ রমজান মাস-ই গুনাহ মার্জনার মোক্ষম সময়। বিশেষ করে রমজানের শেষ রাতে যখন তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত হয় তখন আল্লাহর রহমতের দরিয়া উত্তাল থাকে।
কবির ভাষায়- ১১-টি মাস পেছনে ফেলে/ আবার তুমি ধরায় এলে/ হে মাহে রমজান! রহমতের-ই বার্তা নিয়ে/ মাগফিরাত আর নাজাত দিয়ে/ সাজাও কুল জাহান। সিয়ামের মাস হৃদয়ে লয়ে/ ছাড়ে মানুষেরা আল্লাহর ভয়ে/ ছোট-বড় সব পাপ গুনাহগারের আহাজারি/ জেগে উঠে তাওবাহকারী/ পাপ করে দাও মাফ। গুনাহ বর্জনের পাশাপাশি মাহে রমজান আমাদের প্রতি তাকওয়া অর্জনের আহবান করে থাকে। কারণ অন্যান্য বিশেষত্বের সাথে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক কায়েমও রমজানের অন্যতম দাবী। বান্দার আমলনামায় ঈমানের আলোকরশ্মি পৌঁছতে হেদায়েত অনিবার্য, আর হেদায়েত আসবে আল্লাহর সাথে সেতুবন্ধনের মাধ্যমে। একমাত্র তাকওয়া অর্জনের ভিত্তিতে এই সেতুবন্ধন সম্ভব। সুতরাং যে কেউ যদি আল্লাহর সাথে সম্পর্ক কায়েম করতে চায়। তবে তাকে মাহে রমজানের যথাযথ মূল্যায়ন ও তার কাক্সিক্ষত দাবী পূরণ করা আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে অন্যান্য দায়েমী আমলের সাথে রমজানের ৩০ আমলের প্রতিও সর্বাধিক মূল্যায়ন অপরিহার্য। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো।
১.সিয়াম পালন করা। ২. সময় মতো সালাত আদায় করা। ৩. সহিহভাবে কোরআন শেখা। ৪. অপরকে কুরআন পড়া শেখানো। ৫. সাহরি খাওয়া। ৬. সালাতুত তারাবিহ পড়া। ৭. শুকরিয়া আদায় করা। ৮. কল্যাণকর কাজ বেশি করা। ৯. তাহাজ্জুদ পড়া। ১০. বেশি বেশি দান। ১১. সদকা করা। ১২. উত্তম চরিত্র গঠনের অনুশীলন করা। ১৩. ইতিকাফ করা। ১৪. দাওয়াতে দীনের কাজ করা। ১৫. সামর্থ্য থাকলে ওমরা পালন করা। ১৬. লাইলাতুল কদর তালাশ করা। ১৭. বেশি বেশি দোআ ও কান্নাকাটি করা। ১৮. ইফতার করা। ১৯. ইফতার করানো। ২০. তাকওয়া অর্জন করা। ২১. ফজরের পর সূর্যদয় পর্যন্ত মসজিদে অবস্থান করা। ২২. ফিতরা দেওয়া। ২৩. অপরকে খাবার খাওয়ানো। ২৪. আত্মীয়তার সম্পর্ক উন্নীত করা। ২৫. কুরআন মুখস্থ বা হিফজ করা। ২৬. আল্লাহর জিকির করা। ২৭. মিসওয়াক করা। ২৮. বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা। ২৯. পরষ্পর কুরআন শেখানো। ৩০. কুরআন বোঝা ও আমল করা।
মাহে রমজানকে মহিমান্বিত করতে যেমনিভাবে শরিয়তসিদ্ধ জীবন যাপন ও আমল বাঞ্ছনীয় তেমনি জরুরী হলো খোদা প্রেমিক আউলিয়ারা বর্ণিত রোজার তিনটি স্তর বজায় রাখা।
১. রোযার দিনে পানাহার ও স্ত্রীর মেলামেশা থেকে বিরত থাকা। সাধারণ মানুষ এভাবে রোযা রাখে। ২. রোযার দিনে পানাহার ও স্ত্রীর মেলামেশা থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি চোখ, কান, নাক, মুখ, হাত-পা এবং সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে সগিরা-কবিরাগুনাহ থেকে বিরত রাখা। নেককার ফরহেজগার মুমিনরা এ রোযা রাখে। ৩. পানাহার ইত্যাদি ও সগিরা-কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি অন্তরকে জাগতিক চিন্তা ও কর্মসমূহ থেকে বিরত রেখে কেবল আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকা। মহান আল্লাহর নির্বাচিত বিশেষ বান্দারা এ রোযা রাখেন। ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়া : ৫/১৯৬]
তাই আসুন রোজাকে শোভামন্ডিত করতে আমলের মাত্রা বাড়িয়ে দেই। এতে দীর্ঘ এগারো মাসের স্থবির ও তৃষিত ঈমান যেমনি তাজা ও সমৃদ্ধ হবে তেমনি জীবন হবে চির-সজিব ও প্রাণবন্ত। মাহে রমজান আমাদের অঙ্গনকে ঈমান আমল ও আলোকিত চেতনায় উদ্ধুদ্ধ করুন। পুলকিত বিশ্বে ছড়িয়ে পড়–ক প্রজ্বলিক দীপশিখা। জীবন ও সমাজের সকল সেক্টরে জ্বলে উঠুক হেদায়াতের চেরাগ। মাহে রমজানের এই প্রত্যাশ্য এবং স্বপ্ন নিয়েই হোক মুসলিম বিশ্বের অনাগত দিনের পথচলা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন