রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

সীতাকুন্ডে চলছে আউশের আবাদ

সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম)উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৩ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলায় চলতি মৌসুমে আউশের বিভিন্ন জাতের ধানের চারা রোপন করা শেষ হয়েছে। মৌসুমে উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে প্রনোদনা আওতায় আউশ জাতের ধানবীজ স্থানীয় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছিল। কিন্তু জমিতে পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় আউশের চারা রোপনে হিমশিম খেতে হচ্ছে কৃষকদের। চৈত্র-বৈশাখে বীজ বোপনের পর জ্যৈষ্ঠের অপেক্ষার প্রহর গুনে কৃষক। প্রকৃতির করুনার এক ফশলা বৃষ্টিতে ক্ষেতে পানি জমার সাথে সাথে চাষ এবং চারা রোপন শুরু করার কথা থাকলেও এবার সময় মত বৃষ্টি না হওয়ার কারনে আউশের চারা রোপনে অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে কৃষক। কিন্তু হাজার কষ্টের মাঝেও সোনালী ধানের খুশবোই আবার তাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালী এলাকার কৃষক আবু তাহের বলেন, অকেজো ও ভেঙে পড়া স্লুইচ গেট দিয়ে পানি নিষ্কাশন হয়না। তাই ধানের চারা পানিতে ডুবে লক্ষ লক্ষ টাকা লোকসান হবে মনে করে কৃষক প্রথম অবস্থায় কেউ জমিতে আউশ চারা রোপন করেনি। ফলে আউশ চারা রোপনে তাদের কিছুটা দেড়ি হয়ে গেছে। গত বছর এ অঞ্চলের কৃষক জমিতে সদ্য আউশ ধানের চারা রোপন করে পানি নিষ্কাশনের সু-ব্যবস্থা না থাকায় এ অঞ্চলের কৃষকদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু তার পরেও এবছর ভয়ভীতি উপেক্ষা করে ১৬০শতক আউশের এসিআই(১) সেরা জাতের ধানের চারা রোপন করেছি। এ ইউনিয়নের রহমনগর এলাকার কৃষক ইমতিয়াজ হোসেন জানান,তিনিও চলতি মৌসুমে দেড় একর জমিতে আউশ জাতের নেরিকা ও ব্রিধান(৫৫)জাতের চারা রোপন করেছেন। প্রথম অবস্থায় জমিতে পানি না থাকায় পুকুর থেকে সেচ দিতে হয়েছে তাকে। এ বøকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সালমা সুলতানা বলেন,দীর্ঘকাল পর্যন্ত এ এলাকার কৃষক পরিবার রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে জমিতে সোনালী ফসল ফলায়। আউশ মৌসুমের প্রথম অবস্থায় বীজ তলায় ছরা ও পুকুর থেকে সেচ দিতে হয়েছে কৃষকদের। মাত্র কিছু দিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হলেও তা সদ্য রোপন করা আউশ চারার জন্য খুবই উপকার হচ্ছে। এ বøকে আউশ চারা রোপন শেষ হয়েছে। এদিকে মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালী এলাকায় দায়ীত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জ্ঞান রঞ্জন নাথ বলেন, মুরাদপুর গুলিয়াখালী বেড়িবাঁধের স্লুইচ গেট গতবছর ভেঙে পড়েছিল। এতে করে ঐ স্লুইচ গেট দিয়ে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে উপক‚লীয় নিন্মাঞ্চলের কৃষক পরিবার জলবদ্ধতার ভয়ে আউশ রোপনে শঙ্কায় ছিল। এ অঞ্চলে আউশ রোপনের আওতায় রয়েছে ১হাজার হেক্টর জমি। আর কৃষক রয়েছে এখানে ৩২শ’। কিন্তু চলতি আউশ মৌসুমে বেড়িবাঁধের স্লুইচ গেট সংস্কার করা না গেলে সামনে ভারী বর্ষনে আউশের চারাগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পুরো উপজেলা জুড়ে কৃষকরা কোমড়ে গামছা বেধে ক্ষেতে আউশ চারা রোপন করতে দেখা গেছে।এদিকে টেরিয়াইল ব্লকের কৃষক মোঃ মতিন বলেন,এসিআই(১) সেরা জাতের বীজ পাওয়া যাচ্ছেনা। এ বীজের উৎপাদন ও খরচ দুটোই কম। তাই এর চাহীদা থাকা সত্বেও বীজের আকাল পড়েছে। তিনি বলেন,সময় মত আউশের বীজ পায়নি বলে অনেকে জমিতে আউশ রোপন করতে পারেনি। এ বøকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পিপাস কান্তি চৌধুরী বলেন, উপজেলার অন্যান্য অঞ্চল থেকে এ অঞ্চলে আউশের চাষ হয় সবচেয়ে বেশি। ইতোমধ্যে প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে ৭শ’ কৃষক আউশের বিভিন্ন জাতের চারা রোপন করা শেষ করেছে। তিনি আরো বলেন,প্রথম অবস্থায় হাইব্রীড এসিআই(১)জাতের চারা পাওয়া না গেলেও বর্তমানে সর্বত্রই এ জাতের ধান বীজ পাওয়া যাচ্ছে। তবে কৃষকরা তার বিকল্প হিসেবে উফশী ধানের চারা রোপন করেছেন। তাই এ অঞ্চলে আউশ ধান আবাদের কমতি হবেনা। এবিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার সাফকাত রিয়াদ বলেন, চলতি মৌসুমে সীতাকুন্ডের প্রত্যন্ত অঞ্চল জুড়ে ২৩ হাজার ৬৫০জন কৃষক ৭হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আউশের বিভিন্ন জাতের চারা রোপনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। এর মধ্যে বীজতলা লাগানো শেষ হওয়ার পর বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আউশের বিভিন্ন জাতের চারা রোপন করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে আগের চেয়ে আরো বেশি ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে আমরা আশা করছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন