শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

ঈদ আনন্দ নেই মুক্তামনি’র বাড়িতে

সাতক্ষীরা থেকে আক্তারুজ্জামান বাচ্চু | প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে আনন্দ। সামনে সেই খুশির দিন। দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর মুসলমাঈদের ঘরে ঘরে বইতে থাকে ঈদের আনন্দ। কিন্তু মুক্তা মনির বাড়িতে ঈদের কোন আনন্দ নেই। সবার চোখে মুখে বেদনার ছায়া। শোকাহত পরিবারটি আজো তাদের শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আদরের সন্তান হারানো বেদনার পাশাপাশি রয়েছে সাংসারিক অভাব অনটনের বিড়ম্বনা। রক্ত নালীর টিউমারে আক্রান্ত হয়ে মুক্তামনি গত ২৩ মে সবাইকে কাঁদিয়ে পরপারে পাড়ি দিয়েছে। সে সাতক্ষীরা সদরের বাঁশদহা ইউনিয়নের কামারবায়সা গ্রামের মোঃ ইব্রাহিম গাজীর মেয়ে।
মুক্তামনি’র পিতা ইব্রাহিম গাজী জানান, মৃত্যুর আগে মুক্তামনি শিক্ষামূলক অনেক কথা বলে গিয়েছে। যা তাদেরকে বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছে। তিনি বলেন, মহান আল্লাহকে কিভাবে ভালোবাসতে হয় তা মুক্তা তাদেরকে শিখিয়েছে। ১২ বছরের মুক্তামনি আল্লাহ’র প্রতি অটুট বিশ্বাস রাখতো। তার অসুখের জন্য কখনো আল্লাহ’র প্রতি অসন্তুষ্ট হয়নি। মুক্তা বলতো আল্লাহ যা কিছু করেন, ভালোর জন্যই করে থাকেন। অশ্রুসিক্ত কন্ঠে মুক্তামনি’র পিতা-মাতা দৈনিক ইনকিলাবকে আরো বলেন, মৃত্যুর কয়েকদিন আগে মুক্তা বলতো মা তুমি আমার হাতের পোকা আর বের করো না। আল্লাহ পোকাগুলো পাঠিয়েছেন আমাকে খাওয়ার জন্য। তাই ওরা আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। ওদের খেতে দাও। এই বলে মুক্তমনি অঝোরে কাঁদতো। এসব কথা স্মরণ করে মুক্তার মা-বাবাও কাঁদতে থাকেন। তারা বলেন, সামনে ঈদ। বাড়িতে কোন আনন্দ নেই। মুক্তার জময বোন হিরা মনি ও ছোট ভাই আল-আমিন প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ে। এছাড়া, সাংসারিক অভাব অনটন তো রয়েছেই।
কৃতজ্ঞতাচিত্তে মুক্তামনি’র পিতা-মাতা আরো বলেন, মুক্তামনির অসুস্থতার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদকসহ অনেকেই তাদের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। আর্থিক সহায়তাও করেছেন। কিন্তু মুক্তাকে বাঁচানো গেলো না। সকলকে কাঁদিয়ে চলে গেলো সে। তারা বলেন, মুক্তামনি’র অসুখটি আমাদের সকলের জন্য একটি শিক্ষা। আল্লাহ তায়ালা বিরল রোগ দিয়ে আমদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মহান। তাই আমাদের উচিৎ সকল পাপাচার থেকে সরে এসে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের চেষ্টা করা।
উল্লেখ্য, দেড় বছর বয়স থেকে মুক্তামনি’র ডান হাত ফুলে যাওয়া ও ব্যথা যন্ত্রনা’র লক্ষণ দেখা দেয়। এরপর সাতক্ষীরা, খুলনা ও ঢাকায় চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু কোন উপকার না হয়ে দিনে দিনে মুক্তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। ডান হাতটি আরো ফুলে গিয়েছিলো। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় মুক্তার অসুখের বিষয়টি উঠে আসলে অনেকেই মুক্তার চিকিৎসায় হাত বাড়ান। পরে মুক্তামনির চিকিৎসার দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৭ সালের ১২ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করানো হয় মুক্তামনিকে। প্রথমে তার রোগটিকে বিরল রোগ হিসেবে উল্লেখ করেন চিকিৎসকরা। পরে বায়োপসি করে চিকিৎসক জানতে পারেন তার রক্তনালীতে টিউমার হয়েছে। তখন তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালের ডাক্তারদের সাথে যোগাযোগ করেন বার্ন ইউনিটের ডাক্তাররা। ভিডিও কনফারেন্স’র মাধ্যমে মুক্তামনির সব রিপোর্ট দেখে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা করতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর ঢামেক হাসপাতালেই তার অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। ৫ আগষ্ট প্রথম অস্রোপচার করা হয় মুক্তা মনির ডান হাতে। হাতের ফোলা অংশে অস্ত্রোপচার করে তা ফেলে দেওয়া হয়। পরে আরো দুই দফায় অস্ত্রোপচার করে মুক্তার দুই পায়ের চামড়া নিয়ে হাতে লাগানো হয়।
ঢামেকের বার্ন এন্ড প্লাষ্টিক সার্জারি ইউনিটের পরিচালক অধ্যাপক আবুল কালামের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের একটি দল মুক্তামনির স্কিন গ্রাফটিং (চামড়া লাগানো) অপারেশনে অংশ নেন। এর কিছুদিন পর আবারো মুক্তামনির হাত ফুলে যায়। তখন ফোলা কমানোর জন্য ডাক্তাররা তার হাতে প্রেসার ব্যান্ডেজ বেঁধে দেন। ২২ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট থেকে মুক্তাকে তার গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। সেখান থেকেই মুক্তা বাড়িতে ছিলো। দিনে দিনে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। অপারেশন করে হাত থেকে যা কিছু অপসারণ করা হয়েছিল তা আবারো পুরণ হয়ে যায়। এবং তার ডান হাত দূর্গন্ধযুক্ত হয় ও নিয়মিত রক্ত ঝরতে শুরু করে। এমনকি হাত থেকে বড় বড় পোকাও বের হতে থাকে। গত মাসের ২৩ তারিখ বুধবার সকালে মুক্তা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
নাহিদ ১৫ জুন, ২০১৮, ৩:৪২ এএম says : 0
এই খবরটি শুনে ঈদের অানন্দ অনেকটা ফিকে হয়ে যাচ্ছে
Total Reply(0)
রাসেল ১৫ জুন, ২০১৮, ৩:৪২ এএম says : 0
তার জন্য খুব কষ্ট লাগছে
Total Reply(0)
মারিয়া ১৫ জুন, ২০১৮, ৩:৪৩ এএম says : 0
আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুক
Total Reply(1)
১৫ জুন, ২০১৮, ৪:২৯ এএম says : 4
আমিন

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন