ম্যাচ হেরেও এমন উৎসব হয়ত আগে কখনো করেনি জাপান। রাশিয়া বিশ্বকাপে গ্রæপ পর্বের শেষ ম্যাচে গতকাল তারা পোল্যান্ডের কাছে হেরেছে ১-০ গোলে। একই সময়ে অনুষ্ঠিত গ্রæপের ম্যাচে সেনেগালকে একই ব্যবধানে হারায় কলম্বিয়া। জটিল সমীকরণ পেরিয়ে কলম্বিয়ার সঙ্গে শেষ আটের টিকিট পায় জাপান।
ম্যাচ শেষে ‘এইচ’ গ্রæপে সেনেগাল ও জাপানের পয়েন্ট দাঁড়ায় সমান ৪ করে। গোল ব্যবধান, এমনকি দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়েও সমতা থাকায় ফেয়ার প্লে’র সমীকরণে শেষ ষোলর টিকিট পেয়ে যায় এশিয়ার দেশটি। আর দুই জয়ের সহজ হিসাবে গ্রæপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে আসরের নক-আউট পর্বে উঠে যায় কলম্বিয়া।
বিশ্বকাপে এমন ঘটনা এর আগে ঘটেনি। জাপানের চার হলুদ কার্ডের বিপরীতে সেনেগাল হলুদ কার্ড দেখেছে ছয়টি। সেটিই কাল হলো আফ্রিকার দেশটির জন্যে। তাদের বিদায়ে আসরে আফ্রিকার আর কোন দল রইল না। পক্ষান্তরে এশিয়ার একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে টিকে যায় জাপান।
তিন ম্যাচে ছয় পয়েন্ট নিয়ে গ্রæপ পর্ব শেষ করল কলম্বিয়া, জাপান ও সেনেগালের পয়েন্ট চার করে। একমাত্র জয়ে তিন পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বকাপ শেষ করল আগেই বিদায় নিশ্চিত হওয়া রবার্ট লেভান্দোভস্কির পোল্যান্ড।
পরের পর্বের জন্য গতকাল অনুষ্ঠেয় নিজেদের শেষ ম্যাচে ড্র করলেই চলতো জাপান ও সেনেগালের। প্রথমার্ধ শেষেও বজায় ছিল এই হিসাব। সামারায় ৭৪ মিনিট পর্যন্ত রাদামেল ফ্যালকাওদের আটকে রাখে সেনেগাল। এরপর হুয়ান কুইনতেরোর কর্নার কিকে দারুণ হেডে কলম্বিয়াকে জয়সূচক গোল উপহার দেন ইয়েরে মিনা। বার্সেলোনা ডিফেন্ডারের গোলে ঢেউ ওঠে হলুদ গ্যালারিতে।
ওদিকে ভলগোগ্রাদে এর ১৫ মিনিট আগে জান বেদনার্কের দারুণ ভলিতে জয়সূচক গোল পেয়ে যায় পোল্যান্ডও। এই একটি করে করা গোলই দুই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়। আরো ছোট করে বললে বেদনার্কের গোলেই বিদায় নিশ্চিত হয় সেনেগালের। শেষ ষোলয় কলম্বিয়া ও জাপানের প্রতিপক্ষ ‘জি’ গ্রæপে শীর্ষ দুই দল ফ্রান্স ও বেলজিয়াম। তবে কে কাকে মোকাবেলা করবে তা নির্ধারিত হওয়ার কথা রাতের পরের দুই ম্যাচ দিয়ে।
ম্যাচ শুরুর দিকে পেনাল্টির একটা সুযোগ পায় সেনেগাল। সাদিও মানেকে ভয়ঙ্কর ট্যাকল করেছিলেন ডেভিনসন সানচেজ। কিন্তু প্রযুক্তির সহায়তায় দেখা যায় লিভারপুল স্ট্রাইকারকে করা ট্যাকেলে বলের ছোঁয়া ছিল টটেনহ্যাম ডিফেন্ডারের। সাবেক ইংল্যান্ড মিডফিল্ডার যেটাকে অবিহিত করেছেন ‘টুর্সামেন্টের সেরা ট্যাকল’।
ম্যাচের বয়স ৩০ মিনিট না হতেই চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন কলম্বিয়ার সবচেয়ে বড় তারকা হামেস রদ্রিগুয়েজ। গোড়ালির চোটের কারণে প্রথম ম্যাচেও বায়ার্ন মিউনিখ ফরোয়ার্ড ছিলেন অনুপস্থিত; যে ম্যাচে দশজনের দল নিয়ে জাপানের কাছে হেরে যায় কলম্বিয়া। এদিনও প্রিয় তারকার অনুপস্থিতি ভালই টের পাচ্ছিল তারা। কিন্তু টানা দ্বিতীয় ম্যাচে দলটির ত্রাতার ভূমিকায় দেখা দেন ইয়েরে মিনা। যার কাঁধে চড়ে বিশ্বকাপের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছে হোসে পেকারম্যানের দল।
জাপান-পোল্যান্ড ম্যাচের শেষের দিকে অদ্ভুদ দৃশ্য চোখে পড়ে। নির্ধারিত সময়ের আট মিনিট বাকি থাকতে বদলি নামেন মাকোতো হাসেবি। তার কাছে বার্তা ছিল, গোল ও কার্ড না খেলে আমরাই কোয়লিফাই করছি। বাকি সময়ে তাই আক্রমনে যাওয়ার চেষ্টা করেনি তারা। বলের দখল রেখে সময়ক্ষেপণই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। ওদিকে এগিয়ে থাকা পোল্যান্ডও প্রতিপক্ষের কার্যকালাপে ছিল খুশি। কারণ তারা তখন এগিয়ে। বলতে গেলে শেষ দিকে মিমাংশিত ফুটবল খেলেছে দু’দল। সে যেভাবেই হোক তৃতীয়বারের মত বিশ্বকাপের শেষ ষোলয় উঠে খুশি সূর্যদয়ের দেশটি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন