শুরুতে বিতর্কিত এক পেনাল্টির গোলে পিছিয়ে পড়া আর্জেন্টিনাকে সমতায় ফেরান ডি মারিয়া। বিরতি থেকে ফিরেই দলকে এগিয়ে দেয় লিওনেল মেসির দুর্দান্ত এক শট। তবে সেই লিড বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি ম্যারাডোনার উত্তরসূরীদের। বাকি সময়ে একের পর এক গোলে ৪-৩ গোলের জয় দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে নাম লেখায় ফ্রান্স।
কাজান অ্যারেনায় শনিবার শুরু হওয়া মাচের নবম মিনিটেই গিয়ে যেতে পারতো ফ্রান্স। কিলিয়ান এমবাপেকে হাভিয়ের মাচেরানো ফাউল করায় ফ্রি-কিক পেয়েছিল ১৯৯৮ চ্যাম্পিয়নরা। তবে অল্পের আক্ষেপে পুড়তে হয় অঁতোয়ান গ্রিজমানের ২৫ গজ দূর থেকে নেয়া দারুণ ফ্রি-কিক ক্রসবার কাঁপিয়ে ফিরলে।
তবে বিতর্কিত এক পেনাল্টিতে এই অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের ফরোয়ার্ডের গোলেই পিছিয়ে দেয় আর্জেন্টিনাকে। ম্যাচের ১১তম মিনিটে প্রতি আক্রমণে মাঝ মাঠে বল পেয়ে দারুণ গতিতে এগিয়ে যাওয়া কিলিয়ান এমবাপেকে মার্কোস রোহো ফাউল করায় হলুদ কার্ড দেখিয়ে স্পটকিকের নির্দেশ দেন ইরানিয়ান রেফারি ফাঘানি আলীরেজা। সেখান থেকে ফ্রান্সকে এগিয়ে নিতে কোন সমস্যাই হয়নি অাঁতোয়ান গ্রিজমান।
তবে রেফারির এই সিদ্ধান্ত নিয়ে অাছে বিতর্ক। বল নিয়ে ক্ষীপ্র গতির এমবাপে একটু অাগ বাড়িয়ে নিতে বল ছুড়ে দেন সামনে। সেই বলের পেছনে ছুটতে থাকা রোহার সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে পেছন থেকে বলের লক্ষ্যে দৌড়ের চেষ্টা করা এমবাপে। নিজেই পড়ে গিয়ে কিছুটা অভিনয়েল আ্শ্রয় নেন পিএসজি তারকা।
আবারও দ্রুতগতিতে ডি-বক্সে ঢুকতে যাওয়া এমবাপেকে থামাতে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন নিকোলাস তাগলিয়াফিকো। আবারও বিপজ্জনক জায়গা থেকে ফ্রি-কিক পায় ফ্রান্স। তবে ২১তম মিনিটের এই ফ্রি-কিকে পল পগবার শট ক্রসবারের উপর দিয়ে যায়।
৪১তম মিনিটে ৩০ গজী দূর থেকে আচমকা শটে প্রতিপক্ষের জাল কাঁপান ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। ঝাঁপিয়েও বলের নাগাল পাননি গোলরক্ষক উগো লরিস। এবারের আসরে এখন পর্যন্ত এটাই সবচেয়ে দূর থেকে গোল। ম্যাচে ৬৮ শতাংশ বলের দখল নিয়ে ১-১ গোলের এই স্বস্তির সমতা নিয়েই বিরতিতে যায় দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
বিরতি থেকে ফিরে আরো উজ্জ্বীবিত সাম্পাওলির দল। ৪৮তম মিনিটে গোলপোস্ট বরাবর মিনিটে ডি-বক্স থেকে শট নিয়েছিলেন লিওনেল মেসি। বলের গতিপথে থাকা গাব্রিয়েল মের্কাদো পা সরিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বল তার পায়ে লেগে দিক পাল্টালেও লক্ষ্য পাল্টায়নি, জড়ায় জালে। কিছুই করার ছিল না ফরাসি গোলরক্ষকের।
তবে এই স্বস্তি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি ম্যারাডোনার উত্তরসূরীদের। ৫৬তম মিনিটে ফেদেরিকো ফাসিওর ভুলে গোলও খেতে বসেছিল আর্জেন্টিনা। কাছাকাছি গ্রিজমান থাকার পরও পরও এই ডিফেন্ডার ব্যাকপাস দেন গোলরক্ষক ফ্রাঙ্কো আরমানির আওতার বাইরে। ছুটে গিয়ে শট নেন গ্রিজমান। তবে লক্ষ্যে রাখতে পারেননি।
তবে পরের মিনিটেই দলকে সমতায় ফেরান বাঁজামাঁ পাভার্দ। আরেক ডিফেন্ডার লুকা এরনঁদেজের কাছ থেকে বল পেয়ে ডি বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত ভলিতে বল পাঠান জালে।
৬৪তম মিনিটে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। ডি-বক্স থেকে বাঁ পায়ের কোনাকুনি শটে বল জালে পাঠান এমবাপে। ঝাঁপিয়ে গ্লাভস ছোঁয়ালেও পিএসজি ফরোয়ার্ডের গোল ঠেকাতে পারেননি আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক।
চার মিনিট পর আবার এমবাপের গোল। ডি-বক্সে অলিভিয়ে জিরুদের চমৎকার বাড়ানো বলে ডান পায়ের কোনাকুনি শটে জালে পাঠান এই তরুণ ফরোয়ার্ড।
৮৫তম মিনিটে ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে ডি বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন মেসি। তবে ঠিক মতো শট নিতে পারেননি আর্জেন্টিনা অধিনায়ক।
যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে মেসির উঁচু করে বাড়ানো বলে লাফিয়ে হেডে জালে পাঠান বদলি হিসেবে নামা আগুয়েরো। জাগে ক্ষীণ আশা। শেষ বাঁশির আগে শেষ একটা সুযোগ এসেছিল ওতামেন্দির সামনে। কিন্তু লক্ষ্য থাকেনি তার মরিয়া চেষ্টা।
১৯৮৬ আসরে সোভিয়েত ইউনিয়নের পর প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপে কোনো ম্যাচে ৩ গোল করেও হারল আর্জেন্টিনা। টিকে থাকল ফুটবলের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্টের ফ্রান্সের দ্বিতীয় রাউন্ডে না হারার ধারা।
আর্জেন্টিনার ৪-৩-৩ ফরমেশনে বদলি হিসেবে নামলেও শুরুর একাদশে জায়গা হয়নি সের্হিও আগুয়েরোর। পুরো সময় সাইডলাইনে বসেই দলের হার দেখতে হয়েছে গঞ্জালো হিগুয়াইনকে। আক্রমণভাগে ছিলেন লিওনেল মেসি ও অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার সঙ্গী ক্রিশ্চিয়ান পাভোন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন