বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন

| প্রকাশের সময় : ৩০ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

বহুল আলোচিত রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন আজ। গত শনিবার মধ্যরাতে শেষ হয়েছে নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। তারপর থেকে অপেক্ষাকৃত শান্ত তিন সিটিই। নির্বাচনী প্রচারণাকালে তেমন বড় কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তিন সিটিতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ তো আছেই। তা সত্তে¡ও ভোটারদের অনেকের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। ভালোয় ভালোয় ভোট দিতে যেতে পারবেন কিনা, পছন্দের প্রার্থীকে দিতে পারবেন কিনা, নাকি বাধার সম্মুখীন হবেন, ভোটাধিকার বঞ্চিত হবেন, এরকম আশংকা তাদের মনের মধ্যে আছে। খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর এই তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন কেমন হবে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনার অবধি নেই। নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রতিশ্রæতি দিলেও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও পারেনি। ফলে ওই দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে প্রশ্ন রয়েছে। তিন সিটিতে প্রশ্নাতীত নির্বাচন উপহার দিতে যে ধরনের ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ নেয়া আবশ্যক ছিল, দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা নিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনী আচরণবিধি অবাধে লংঘিত হয়েছে, বিস্তর অভিযোগ জমা পড়েছে অথচ নির্বাচন কমিশন তার প্রতিকারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পুলিশের আচরণ ও ভূমিকা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ওয়ারেন্ট ছাড়া রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা যাবে না, নির্বাচন কমিশনের এই নির্দেশনা উপেক্ষিত হয়েছে। বিএনপি অভিযোগ করেছে, তিন সিটিতেই তার বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশী চালানো হয়েছে, ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে এবং সম্ভব্য নির্বাচনী এজেন্টদের অনেককে বাড়িছাড়া করা হয়েছে। পত্রপত্রিকার খবর মোতাবেক, প্রচারনার শেষদিন পর্যন্ত ধরপাকড়, হয়রানী ও ভয়ভীতি প্রদর্শন অব্যাহত ছিল। উল্লেখ্য, সিলেটে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর নির্বাচন সমন্বয় কমিটির আহŸায়ককে পুলিশ শনিবার গ্রেফতার করেছে। এ ধরনের গ্রেফতার মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনারও খেলাপ।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘিত হয়েছে বেপরোয়াভাবে। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই তাদের পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষকেও নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা গেছে। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে বহিরাগতদের প্রচার-প্রচরণা চালাতে দেখা গেছে নির্বাধে। সিটি এলাকায় তাদের অবস্থান করার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলে সে নিষেধাজ্ঞ মানা হয়নি। নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিনেও তাদের আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার অংশ নিতে দেখা গেছে। পত্রপত্রিকায় ছবিসহ খবর ছাপা হয়েছে, সিলেটে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য এসএম জাকির হোসেন এবং ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। নির্বাচনী আচরণবিধির এরূপ সরাসরি লংঘনে নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বা নিতে পারেনি। তিন সিটির অধিকাংশ ভোট কেন্দ্র ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বরিশালে ১২৩ টির মধ্যে ১১৩টি, ঝুঁকিপূর্ণ ও ৫০টি ‘খুব ঝুঁকিপূর্ণ,’ সিলেটে ১৩৪টির মধ্যে ৮০টি এবং সিলেটে ১৩৮টির মধ্যে ১১২টি ঝুঁকিপূর্ণ। নির্বাচন কমিশন এটা অবগত হওয়ার পরও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। নির্বাচন কমিশনের সচিব আরও বেশী সংখ্যায় আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করার কথা জানিয়েছেন। সে মোতাবেক বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে স্টাইকিং ফোর্স হিসাবে। বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানানো হলেও নির্বাচন কমিশন তাতে কান দেয়নি। বিএনপির রাজশাহীর মেয়র প্রার্থী অভিযোগ করেছেন, যাদের প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে তাদের শতকরা ৯০ ভাগই আওয়ামী লীগের এক্টিভিস্ট। এমত বাস্তবতায় তিনি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে শংকা প্রকাশ করেছেন। এই প্রেক্ষাপটে তিন সিটি কপোরেশন নির্বাচন কেমন হবে, ফলাফল কি হতে পারে, তা অনেকটাই আন্দাজ করে নেয়া যায়।
নির্বাচন কমিশনের দক্ষতা, যোগ্যতা ও পারঙ্গমতা নিয়ে অনেক আগেই প্রশ্ন উঠেছে। ইতোমধ্যে তার ক্রেডিবিটি ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর এই ক্রেডিবিলিট বলতে গেলে প্রান্তিক পর্যায়ে এসে উপনীত হয়েছে। আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা যদি নির্বাচন কমিশন পুরুদ্ধার করতে চায় তবে রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনই তার জন্য শেষ সুযোগ। সুযোগ এখনো শেষ হয়ে যায়নি। নির্বাচন কমিশন ভোটের এই দিনেও যদি সাহসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে, তবে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করা অসম্ভব নাও হতে পারে। নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি এবং বিশেষভাবে এই নির্বাচন কমিশনের প্রতি দেশে-বিদেশে রয়েছে ব্যাপক আস্থার সংকট। এ কথাটি নির্বাচন কমিশনের মনে রাখতে হবে। সামনে জাতীয় নির্বাচন, সেখানেই রয়েছে তার চূড়ান্ত পরীক্ষা। এই ছোট পরীক্ষায় যদি সে সফলভাবে উত্তীর্ণ হতে পারে, তবেই চূড়ান্ত পরীক্ষায় তার সাফল্য আসবে। যদি মনে হয়, অর্পিত দায়িত্ব পালন তার পক্ষে সম্ভব নয়, তাহলে সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হবে। আইনবিধিতে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা এত বেশি যে, সফল ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা তার পক্ষে মোটেই কঠিন নয়। এত কিছুর পরও আমরা আশা করতে চাই, নির্বাচন কমিশন তার ক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার করে তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করাতে চেষ্টার কোনো ত্রæটি করবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন