‘কাজীর গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই’, এটি শুধু প্রবচন নয় আমাদের দেশের প্রায় প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের বাস্তবতা। বড়পুকুরিয়া কোল ইয়ার্ডের দায়িত্বশীলরা এক্ষেত্রে যে পিছিয়ে নেই সেটি প্রমাণিত হয়েছে কোল ইয়ার্ডের ১ লাখ ৪২ হাজার টন মজুদ কয়লার হদিস না থাকার ঘটনায়। কাগজে-কলমে এ কয়লা আছে। কিন্তু বাস্তবে নেই। এ বেহদিস কয়লায় অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, দীর্ঘদিন থেকে একটি চক্র চুরি করে খোলাবাজারে এসব কয়লা বিক্রি করে দিয়েছে। দেশের মানুষ যে সম্পত্তির মালিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তা সুরক্ষার বদলে এলোমেলো করে দে মা লুটেপুটে খাই তত্ত¡ অনুসরণ করে আত্মসাৎ করেছে। এদিকে কয়লার অভাবে বড়পুকুরিয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নতুন করে কয়লা উত্তোলন শুরু হতে পারে আগস্টের শেষে। ফলে সে পর্যন্ত কেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ থাকবে। কয়লা চোরদের জন্য দেশের শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হবে। লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি ভোগ করতে হবে সাধারণ গ্রাহকদের। আমরা আশা করব পেট্রোবাংলা শুধু তদন্ত কমিটি গঠন নয়, কয়লা চুরির সঙ্গে যুক্ত সবাইকে চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কয়লা চুরির সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের বিচারের সম্মুখীন করা কর্তৃপক্ষের কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।
ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, দুর্নীতি বা জালিয়াতির ঘটনা দেশে নতুন নয়। এসব কারণে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের তৈরি করা বিশ্বব্যাপী দুর্নীতির ধারণা-সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এখনো নিচের দিকেই রয়েছে। দুর্নীতিবাজরা এতটাই বেপরোয়া যে কোনো কিছুকেই তারা পরোয়া করে না। সর্বশেষ তেমনি এক মহাদুর্নীতির তথ্য উদ্ঘাটিত হয়েছে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে। ধারণা করা যায়, এ কাজটি নিঃসন্দেহে তারাই করেছেন, যাঁরা খনির মূল দায়িত্বে ছিলেন। কারণ সেখান থেকে কয়লা পরিবহন ট্রাকের মাধ্যমেই করা সম্ভব এবং এত কয়লা সরাতে যে পরিমাণ ট্রাকের প্রয়োজন হয়েছে, তা গোপন করা প্রায় অসম্ভব। অর্থাৎ প্রকাশ্যেই তা করা হয়েছে এবং খনির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের জ্ঞাতসারেই ঘটনা ঘটেছে। তাদের সাহসের তারিফ না করে পারা যায় না। আর তারা এই সাহস পায় সাজা পাওয়ার ভয় কম থাকা বা প্রায় না থাকার কারণে। এ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া দুর্নীতির প্রতিটি ঘটনা যদি সঠিকভাবে উদ্ঘাটন ও দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করা হতো, তাহলে অপরাধ সংঘটনের হার অনেকটাই কমে যেত। বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির এই দুর্নীতি দ্রæততম সময়ে তদন্ত সম্পন্ন করতে হবে। বিচারের কাজটিও যথাসম্ভব দ্রæতগতিতে সম্পন্ন করতে হবে। আমাদের বিশ্বাস, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি অনেকটাই কমে যাবে।
লেখক: পরিচালক, এফবিসিসিআই, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন