দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশের পাহাড়ে পাহাড়ে বাংলার আপেল খ্যাত পেয়ারা সংগ্রহ ও বিক্রির উৎসবে উপজেলার পেয়ারা চাষি ও ভ‚মিহীন অনেক কৃষাণ কৃষাণীরর মুখে দেখা দিয়েছে হাসির আভা। কর্মহীন মানুষ পেয়ারা পাকার সাথে সাথে কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেছে। পেয়ারা চাষ এ সৌভাগ্যের জাদু লাগিয়ে দিয়েছে চন্দনাইশের প্রায় ২০ হাজার মানুষের জীবন জীবিকায়। চন্দনাইশের বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর পরিমাণে খাদ্যশস্য জন্মায়। কিন্তু বিপণন সমস্যা ও প্রক্রিয়াজাত সঙ্কট। কোনো কোল্ড স্টোর না থাকায় উৎপাদিত ফলমূলের ন্যায্যমূল্য থেকে উপজেলার কৃষকরা বঞ্চিত। চন্দনাইশের মতো এত পেয়ারা বাংলার কোথাও হয় না। এখানে একটি ফ্রুটস প্রিজারভেশন প্লান্ট কমপ্লেক্স করা গেলে মাল্টি জুস এন্ড জেলসি ভিত্তিক শিল্প কারখানা করা সম্ভব হতো।
দক্ষিণ চট্টগ্রামে চন্দনাইশের দোহাজারী থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকায় ২০ হাজারের ও বেশি বাগানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পেয়ারা চাষ হয়। তারমধ্যে চন্দনাইশের হাশিমপুর, কাঞ্চননগর, পুর্ব এলাহাবাদ, লট এলাহাবাদ, ছৈয়দাবাদ, রায় জোয়ারা লালুটিয়া, জামিরঝুরি প্রভৃতি পাহাড়ি এলাকায় পেয়ারার বাগান রয়েছে। শ্রীমাই এবং খরনা খালের দুই তীরে ঘেঁষে পাহাড়ি এলাকায় ব্যাপকহারে পেয়ারা বাগানে মৌসুমে প্রচুর পেয়ারা হয়। গুণগত মান এখানে দু‘জাতের পেয়ারা পরিলক্ষিত হয়। তার মধ্যে কাজী পেয়ারা ও কাঞ্চন পেয়ারা প্রসিদ্ধ।
এ ছাড়া সাহেব পেয়ারা ও মাথা পেয়ারা ও রয়েছে গুণগত মানের দিক দিয়ে এসব পেয়ারার সুনাম রয়েছে দেশব্যাপী। পেয়ার ওজন এক কেজি ও সর্বনিম্ন ২৫ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রকৃতিগত কারণে পেয়ারাগুলো স্বাদ ও সুমিষ্ট ও ঘ্রান মোহনীয় এবং দেখতে খুব সুন্দর। অনেকে এ পেয়ারাগুলোকে দেশীয় আপেল বলে থাকেন।
সবকারি হিসাব মতে, চন্দনাইশ উপজেলায় এক হাজার একর পাহড়ি ও সমতল ভ‚মিতে পেয়ারা চাষ হয়। বেসরকারি হিসাব মতে, তা তিন হাজার একর এত রয়েছে প্রায় ছোট বড় ২০ হাজার বাগান।
চন্দনাইশের রওশনহাট থেকে দোহাজারী পর্যন্ত চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কে দুই পাশে পেয়ার বিক্রির হাট বসে। পেয়ার বিক্রির প্রসিদ্ধ হাট রওশনহাট, বাদামতল, বাগিচা হাট, হাশিমপুর ছৈয়দাবাদ রেলস্টেশন।
চন্দনাইশে পেয়ারা মৌসুমে বেকার মানুষের ভাগ্য পাল্টিয়ে দেয়। পেয়ারা বিক্রি করে অনেক দুস্থ পরিবারের বেকার মানুষ তাদের পরিবারে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। আবার কতিপয় দরিদ্র পরিবারের মানুষ বাগানের মালিকদের কাছ থেকে পেয়ারা ক্রয় করে উপজেলার পল্লী গ্রামের বিভিন্ন হাট বাজারে সারাদিন বিক্রি করে তাদের পরিবারে আয় রোজগার করে।
চলতি পেয়ারা মৌসুমে অসহায়, দুস্থ, হতদরিদ্র পরিবারের বেকার মানুষ ও কিশোরদের জন্য সুদিন।
পেয়ারা মালিকেরা সাত সকালে তাদের বাগানে গিয়ে পেয়ারা তুলে লালসালু দিয়ে গাইট বেঁধে কাধে বহন করে বিক্রির জন্য নিয়ে আসে।
পেয়ারাচাষিরা জানান, এ বছরে দফায় দফায় বৃষ্টি ও বন্যায় পেয়ারা বাগানের কাছে ফুল ঝড়ে গেছে অন্যান্য বছরে তুলনায় এ বছর ফলন খুবই কম হয়েছে এবং অসময়ে বৃষ্টির ফলে কোনো কোনো অঞ্চলে মাটির উর্বরা শক্তি হ্রাস পাওয়ায় পেয়ারার সুস্বাদু মিষ্টি কিছুটা কমেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন