মানুষ প্রতিনিয়তই বহুমুখী প্রাকৃতিক বিপদ-বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। আসমানি, হাওয়ায়ী এবং জমিনি, প্রধানত এ তিন প্রকারের বিপদ-আপদ ও বালামুছিবত দুনিয়ার কোনো না কোনো স্থানে লেগেই আছে, যাতে জান-মাল, সহায়-সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি তথা ধ্বংসের কোনো সীমা থাকে না। আসমানি ও হাওয়ায়ী দুর্যোগ দুর্বিপাকের ঘটনাবলির মধ্যে ঝড়-তুফান, গর্কি-প্লাবন, ভ‚মিকম্প, ভ‚মিধস, পাহাড়ধস, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, সাইক্লোন, টর্নেডো ইত্যাদি। এ ছাড়াও রোগবালাই তো আছেই। যেমন-কলেরা, বসন্ত মহামারি, ক্যান্সার, যক্ষ্মা হৃদরোগ, ডাইবেটিস ইত্যাদি। আর জমিনি বিপর্যয়গুলোর মধ্যেÑ মঙ্গা, দুর্ভিক্ষ, খরা, ফসলহানি, পশুমড়ক, তাপদাহ, আগ্নেয়গিরির লাভা, দাবানলসহ আরো কতকিছু। মনুষ্য সৃষ্ট হাজারো সমস্যার কথা আপাতত বাদ দেয়া হলো। এ পর্যায়ে আমরা নানা দেশে, নানা স্থানে সৃষ্ট বিশেষভাবে দাবানলের কথাই বলছি।
মনে হয়, জাহান্নামের উল্কা মাটি ভেদ করে দাবানল আকারে পশ্চিম দিগন্তে নির্গত হচ্ছে। দাবানলের কবলে পতিত হয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপদগুলোর নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে হুমকির এবং বিপুল ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। আমরা আফ্রিকা-ইউরোপসহ সেখানকার দাবানল কবলিত এলাকাগুলোর কথাই বলছি, যেখানে ঘন ঘন দাবানল হানা দেয়ার খবর পাওয়া যায়।
আধুনিক সর্বোন্নত দেশগুলোর যেসব স্থানে দাবানল ঘাঁটি করে রয়েছে, ওইসব স্থানে দাবানলের ভয়াবহতার ভীতিকর দৃশ্যগুলো প্রচার মিডিয়গুলোর বদৌলতে বিশ^বাসী ঘরে বসেই প্রত্যক্ষ করতে পারছে। দাবানলের ভয়ঙ্কর অগ্নিশিখা নির্দিষ্ট এলাকায় এমন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে যে, তার আশেপাশে, অগ্রভাগে, এমনকি আকাশ সীমার অনেক উপর পর্যন্ত চলে যায়। যার ফলে বিমান, হেলিকপ্টার পর্যন্ত এর উপর দিয়ে উড়াল দিতে আতঙ্কিত হয়। অবস্থা এতই শোচনীয় আকার ধারণ করে যে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সর্বশক্তি প্রয়োগ করেও দ্রæত বা তাৎক্ষণিক সর্বসংহারি দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ব্যর্থ হয়। এমনকি বিভিন্ন রাষ্ট্রের নিকট বিমানসহ অন্যান্য সাহায্য ভিক্ষা চাইতেও বাধ্য হয়। কেন? এ প্রশ্ন না করেও বলা যায়, পুন:পুন দাবানল অবশ্যই সংশ্লিষ্ট এলকাগুলোর বা জনপদগুলোর কর্মফল।
যুগে যুগে আল্লাহর প্রেরিত নবী-রাসূল আল্লাহর তাওহিদের দাওয়াত নিয়ে স্ব স্ব জাতির কাছে উপস্থিত হয়েছেন। আল্লাহর বাণী প্রচার করেছেন। যারা তাদের আহবান সাড়া দিয়েছে তারা মোমেন মুসলমান, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী, তার হুকুম মান্যকারী, তাদেরকে পুরস্কৃত করার ঘোষণা প্রদান করা হয়েছে খোদ কোরআন শরিফে। আর যারা নবী-রাসূলগণের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করেছে, তাদের বিরুদ্ধাচারণ করেছে আল্লাহকে অস্বীকার করেছে এবং তাঁর নির্দেশনাবলি অমান্য করেছে তারা কাফের-মোশরেক, এবং আল্লাহদ্রোহী হিসেবে আজাবের স্বীকার হয়েছে যার বিবরণ আল-কোরআন।
‘দাবানল’ এর ন্যায় অসংখ্য নিদর্শন রয়েছে যেগুলোকে ‘কেয়ামতের আলামত’ বা মহাপ্রলয়ের নিদর্শন বলা হয়ে থাকে। দাবানলের উৎপত্তির কারণ হিসেবে আধুনিক বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা যাই হোক না কেন, এর খোদায়ী ব্যাখ্যা ভিন্ন। আগুন যেহেতু জাহান্নামের অংশ এবং এর দ্বারা আল্লাহ মানুষসহ তাঁর সৃষ্টিক‚লের বহু উপকারও সাধন করে থাকেন, কিন্তু আল্লাহর অবাধ্যতার কারণে এ আগুন দ্বারা মানুষকে কঠোর শাস্তি এ দুনিয়াতেও প্রদান করে থাকেন এবং তাঁর এ আগুনে শাস্তি সবচেয়ে ভয়াবহ। জাহান্নামিদের সর্বশেষ আশ্রয়কেন্দ্র হচ্ছে এ জ¦লন্ত অগ্নিকুন্ড। হাদিসে বর্ণিত আছে যে, কোনো প্রাণীকে শাস্তি হিসেবে আগুনে পুড়িয়ে না মারতে। কিন্তু অনস্বীকার্য যে, আজকের বিশে^ নানা স্থানে, নানাভাবে যে মানবহত্য চলছে তাতে সব শ্রেণী ও সম্প্রদায়ের মানুষেরাও রয়েছে। বিশেষত; খোদাদ্রোহী শক্তিবর্গের হাতে ইসলাম, কোরআন এবং নবী-রাসূলের প্রতি অমর্যাদা এবং অবমাননা ছাড়াও মুসলমানদের মসজিদ, মাদরাসা, ঘরবাড়ি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ঐতিহ্য আগুণে পুড়িয়ে ধ্বংস করা এমনকি মুসলমানদের উপর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ ও পুড়িয়ে মারার ঘটনাবলিও ঘটানো হচ্ছে। ইসরাইল ও আমাদের নিকটস্থ প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার সরকারসহ এ ধরনের আরো নানা উদাহরণ পেশকরা যেতে পারে। এসব মানবতাবিরোধীদের অপকর্মের খোদায়ী শাস্তি অজান্তেই হয়ে যায় নানাভাবে। অপরাধীচক্র দুনিয়াবী বিচারের আওতামুক্ত বা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে গেলেও খোদায়ী গজব কখন, কাকে, কিভাবে গ্রাস করে তা কেউ বলতে পারে না। দুনিয়াময় অরাজক পরিস্থিতিতে নানা প্রকারের, নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে কেবল দোষী অপরাধীরাই পতিত হয় না, ওদের পাপের প্রায়াশ্চিত্ত নিরীহ, নিরাপরাধ লোকদেরও করতে হয়। সুতরাং কার কি পাপে সর্বসংহারী দাবানলের মতো ধ্বংসাত্মক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয় তাতে চিন্তার অনেক খোরাক রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন