আজো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সোয়া দুইশ’ বছর আগের মোগল আমলের ‘ঘাগড়া লস্কর খান বাড়ি জামে মসজিদ’। মসজিদটির সঠিক পরিচয্যার অভাবে এখন ভঙ্গুঁর অবস্থার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুত- এমন অভিযোগ করেছেন ওই এলাকার সচেতন ব্যক্তি এ এফ এম ফখরুল ইসলাম খাঁন সাদাসহ প্রবিণ লোকজন। অথচ জাতীয় জাদুঘর প্রত্মতত্ব বিভাগের সঠিক পরিচর্য্যার অভাবেই এই প্রচিনতম মসজিদটি আজ অতিদ্রুত ভঙ্গুঁর অবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এমন মন্তব্য ও করেছেন এলাকার সচেতন মহল। প্রাচীনতম এই মসজিদের বাইরে থেকে বিশাল আকৃতির মণে হলেও তার ভেতরে খুব একটা বেশী বড় নয়। এক গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদের উত্তর এবং দক্ষিণে রয়েছে দু’টি জানালা। মসজিদের ভেতর ইমাম ছাড়া তিন কাতারে দশ জন করে মোট ত্রিশ জন মুসল্লি একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে মসজিদের বাইরে বারান্দায় আরো কম পক্ষে পঞ্চাশ জন মুসল্লি একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে মসজিদটির আকার বা পরিধি যাই হোক না কেন মসজিদে নামাজ আদায়ের সময় সবারই মণে হবে যে, দুইশ’ বছর পেছনে চলে এসেছি। এ যেন কেমন এক অদ্ভুত অনুভূতি! যা কিনা নিজে উপস্থিত হয়ে নামাজ আদায় না করলে বিশ্বাস বা বোঝানো সম্ভব নয়। স্থাপত্যকলার অনুপম নিদর্শন ঐতিহাসিক ‘খানবাড়ি মসজিদটি শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ঘাগড়া লস্কর গ্রামে অবস্থিত। আর তাই হয়তোবা এই প্রাচীনতম মসজিদের নাম ও কালক্রমে ‘ঘাগড়া লস্কর খানবাড়ি মসজিদ হিসেবেই পরিচিতি লাভ করে। শেরপুর জেলা সদর থেকে ১৪ কিলেমিটার এবং ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে মসজিদটি অবস্থিত। মসজিদটির গায়ে বর্তমানে যে নিদর্শন মেলে তাতে অনুমান করা হয়-এটি মোগল সম্রাট আমলে বক্সার বিদ্রোহের নেতা হিরোঙ্গী খাঁর বিদ্রোহের সময় মসজিদটি নির্মিত হয়। মসজিদের দরজার ওপর অত্যন্ত মূল্যবান কষ্টিপাথরের ওপর খোদাই করে আরবিতে প্রতিষ্ঠাকাল হিজরি ১২২৮এবং ইংরেজি ১৮০৮ সাল লিখা রয়েছে। মসজিদটির গঠন পদ্ধতি এবং স্থাপত্য কৌশল শিল্পসমৃদ্ধ ও সুদৃশ্য। এর ভেতরে রয়েছে দু’টি সুদৃঢ় খিলান। এক গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদটির দৈর্ঘ-প্রস্থ উভয় দিকেই সমান। ভেতরের ভাগ ৩০ ফুট দৈর্ঘ এবং ৩০ ফুট প্রস্থ। মসজিদটির মধ্যস্থলে বড় গম্বুজের চারপাশ ঘিরে ছোট-বড় দশটি মিনার রয়েছে। তার মধ্যে আবার চার কোনায় রয়েছে চারটি। মসজিদটিতে রয়েছে মাত্র একটি দরজা। ভেতরে মেহরাব এবং দেয়াল অঙ্কিত বিভিন্ন কারুকাজের ফুলদানি এবং ফুল। জানা যায়, তৎকালীন খানবাড়ির লোকজনসহ গ্রামের লোকজন ৫৮ শতক জমি মসজিদের জন্য ওয়াকফ করে দেন। তার মধ্যে মসজিদটির মূল ভবন এবং বারান্দা রয়েছে ১৭ শতকের ওপর। ৪১ শতকের ওপর রয়েছে কবরস্থান। মসজিদের বর্তমান ইমাম হাফেজ মো. রহুল আমীন জুম্মাসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ান। জানা যায়, প্রায় দুই যুগ আগে মসজিদের ২১ সদস্যবিশিষ্ট পরিচালনা কমিটি গঠন করা হলেও ওই কমিটির সভাপতি গোলাম মোস্তফা খান মৃত্যুবরণ করার পর থেকে আর কোনো কমিটি গঠন করা হয়নি। কামরুজ্জামান খান দেখভাল করে এলেও বর্তমানে তিনি এবং ক্যাশিয়ার মামুন খান পেশাগত কারণে দীর্ঘদিন থেকে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তার পরও মসজিদের গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় কাজ তারাই করে থাকেন। জানা যায়, মাঝেমধ্যে ঢাকা জাতীয় জাদুঘর প্রত্মতত্ব বিভাগের লোকজন এসে মসজিদটি ধোয়া-মোছা এবং কিছু কিছু সংস্কার কাজ দায়সারা ভাবে করেগেলেও গত ১৫ বছরে একজন কেয়ারটেকার, একটি সতর্কবাণী লাগানো এবং বছরে হয়তো বা বড়জোর একবার রং করা ছাড়া আর কোনো ভূমিকাই পালন করছেন না। বর্তমানে মসজিদটির মেঝে দেবে যাচ্ছে এবং দেয়ালেও ফাঁটল ধরেছে। অভিজ্ঞমহলের মতে, দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা না নিলে কালের এই নীরব সাক্ষী খানবাড়ি মসজিদটি অত্যন্ত নীরবেই হারিয়ে যাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন