আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রংপুর-৪ (পীরগাছা-কাউনিয়া) আসনে মনোনয়ন প্রাপ্তি নিয়ে শুরু হয়েছে দৌড়ঝাঁপ। পীরগাছার ৯টি ইউনিয়ন ও কাউনিয়ার একটি পৌরসভা ও ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত রংপুর-৪ (পীরগাছা-কাউনিয়া) আসনটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। এ আসনে শিল্পপতিদের লড়াই হয়।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে এ আসনে আ.লীগের প্রার্থী আব্দুল আউয়াল নির্বাচিত হন। ১৯৭৮ সালে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন শিল্পপতি রহিম উদ্দিন ভরসা। ১৯৮৬ সালে আ.লীগের প্রার্থী ভাষাসৈনিক শাহ আব্দুর রাজ্জাক নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে শাহ আলম এবং ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে করিম উদ্দিন ভরসা জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। গত দুই নির্বাচনে আ.লীগের টিপু মুন্শি জয়ী হয়েছেন।
আ.লীগের ধরে রাখা রংপুর-৪ আসনটি ছিনিয়ে নিতে বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির হেভিওয়েট শিল্পপতি প্রার্থীরা মনোনয়ন দৌড়ে থাকলেও আ.লীগের একমাত্র প্রার্থী বর্তমান সাংসদ টিপু মুন্শির কোনো বিকল্প নেই। তাই বর্তমানে এ আসন থেকে আগামী সংসদ নির্বাচনের লড়ার জন্য ক্ষমতাসীন আ.লীগ থেকে টিপু মুন্শির মনোনয়ন নিশ্চিত।
কান্দি ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক হাইফুল ইসলাম খান ইকবাল বলেন, টিপু মুনশি এ আসনের সাংসদ নির্বাচিত হয়ে এলাকার রাস্তা ঘাট, ব্রিজ কালভাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, বিদ্যুৎ লাইন সম্প্রসারণের কাজসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। তাই তার বিকল্প নেই।
টিপু মুন্শি বলেন, আমি পরপর দুই দফায় এমপির দায়িত্ব পালন করছি। এ সময়ের মধ্যে নির্বাচনী এলাকায় যত উন্নয়নমূলক কাজ করেছি, তা এর আগে কখনো হয়নি। উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন চেয়েছি। এ লক্ষ্য নিয়ে আমি কাজ করে চলেছি।
জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ করিম উদ্দিন ভরসার ছেলে যমুনা ব্যাংকের এমডি সিরাজুল ইসলাম ভরসা মনোনয়ন পেতে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও আসনটিতে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন সদ্য যুবলীগ থেকে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করা শিল্প নগরী হারাগাছের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোস্তফা সেলিম বেঙ্গল।
সিরাজুল ইসলাম ভরসা বলেন, আমার বাবা করিম উদ্দিন ভরসাকে ঘিরেই এ আসনে জাতীয় পার্টির উত্থান ঘটেছিল। তাই আগামী নির্বাচনে আমাকে মনোনয়ন দিলে আবারও জাপার সেই হারানো দিন ফিরে আসবে।
এ আসনে বিএনপির মধ্যে রয়েছে গ্রুপিং। উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আফছার আলী ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ আমিনুল ইসলাম রাঙার নেতৃত্বে একটি গ্রুপ এবং জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও উপজেলা যুবদলের সভাপতি শরীফুল ইসলাম ডালেজ ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন অনুর নেতৃত্বে চলছে আরেকটি গ্রুপ। এ আসনে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন শিল্পনগরী হারাগাছের আরেক শিল্পপতি সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ রহিম উদ্দিন ভরসার ছেলে রংপুর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমদাদুল হক ভরসা। এ ছাড়া ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ড. শাহেদ কামাল পাটোয়ারী ও কর্নেল (অব.) আব্দুল বাতেন মনোনয়নের জন্য লবিং করছেন।
এমদাদুল হক ভরসা বলেন, এ আসনে বিএনপি নেতাকর্মীরা আগের চাইতে অনেক উজ্জীবিত। সেই সঙ্গে আমার বাবা সাবেক এমপি রহিম উদ্দিন ভরসার ইমেজ এখনও উজ্জ্বল। তাই আমি নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করলে জয় নিশ্চিত।
অপরদিকে জামায়াতের রংপুর জেলা আমীর এ টি এম আজম খান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাকে মাঠে দেখা না গেলেও আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সবার দোয়া ও ভোট চেয়ে সর্বত্র পোস্টার লাগিয়েছেন। সব মিলিয়ে রংপুর-৪ (পীরগাছা-কাউনিয়া) আসনে চলছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন নিয়ে জল্পনা-কল্পনা। কে পাবেন আর কে হারবেন তা নিয়ে চলছে হিসাব-নিকাশ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন