বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪, ০৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

বেপরোয়া অবৈধ যান : শঙ্কিত মানুষ

ঝিনাইগাতী (শেরপুর) থেকে এস কে সাত্তার | প্রকাশের সময় : ২ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

ঝিনাইগাতী উপজেলার সড়কগুলোতে বিভিন্ন অবৈধ যানবাহন বেপরোয়া গতিতে চলাচল করায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাতায়াত হয়ে পড়েছে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ নিয়ে অভিভাবকরা সব সময় থাকেন আতঙ্কে। বেপরোয়া যান চলাচলে অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। বেশ কিছু দিন যাবৎ ট্রাক অবৈধ-ট্রলি, বেটারি চালিত অটোরিকশা, নছিমন-করিমনসহ বিভিন্ন যানবাহনের ধাক্কায় অহরহ পথচারী আহত এমনকি নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে।

জানা যায়, খোদ উপজেলা সদরের প্রধান সড়কে পর্যন্ত বেপরোয়া গতিতে চলাচল করে পিকনিকের গাড়ি, অবৈধ ট্রলি, নছিমন-করিমন এমনকি অবৈধ বালু ও কাঠের ট্রাক। যা কিনা উপজেলা সদরবাসীর জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে। এসব যান চলে মূলত নিয়মিত অনিয়ন্ত্রিত গতিতেই। যেন দেখার নেই কেউ। অভিভাবক আ. ছালাম, সরোয়ারদী দুদু মন্ডল, আলী হোসেন প্রমুখ জানান, ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাওয়ার জন্য রাস্তায় বের হলেই আতঙ্কে থাকতে হয়। না জানি কখন কি ঘটে যায়। এসব যানবাহন যেভাবে দানবের ন্যায় বেপরোয়া চলাচল করে, তাতে যে কোনো মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। ঝিনাইগাতী হাজী, ওছি আমিরুননেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জানান, এসব বেপরোয়া যানবাহন নিয়ে সর্বদা চিন্তায় থাকতে হয়। না জানি কখন কার ভাগ্যে কি ঘটে- এ আশঙ্কায়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, স্থানীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এসব যানবাহনে গোটা উপজেলার রাস্তাঘাট বলতে গেলে ছেয়ে গেছে। সুজন, নছিমন, করিমন ইত্যাদি বাহারি নামে চলছে এসব অবৈধ যান। এদের কোনোটি যাত্রীবাহী, কোনোটি পণ্যবাহী আবার কোনোটি সর্ববাহী। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব যানবাহনের নেই কোনো রেজিস্ট্রেশন বা রোড পারমিট। সুতরাং নানা রঙের, নানা ঢঙয়ের এসব গাড়ি যে যার মতো স্থানীয়ভাবে তৈরি করে মনগড়া নাম রেখে চালিয়ে যাচ্ছে পরিবহন ব্যবসা। মূলত ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিনের ইঞ্জিন দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে এসব গাড়ি।

এসব নির্মাণে মারাত্মক কারিগরি ত্রু টি থাকায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে দেয়া হয় না অনুমোদন। বিশেষ করে মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ, বিকট শব্দ এবং গতি নিয়ন্ত্রণে তাৎক্ষণিক কার্যকর ব্যবস্থা না থাকলেও উপজেলার প্রধান ব্যস্ত সড়কসহ প্রত্যন্ত এলাকাজুড়ে অত্যন্ত দাপটের সাথেই চলছে এসব গাড়ি প্রশাসনের নাকের ডগায়। অনেক ক্ষেত্রে বাম ডান চেনে না এমন লোকও দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় এসব গাড়ি চালনার ক্ষেত্রে। হাল্কা থেকে শুরু করে ভারী বৈধ যান চালকদের মুখে শোনা যায় সবচেয়ে ভয়ানক গাড়ির মধ্যে অন্যতম অবৈধ গাড়ির নাম ‘ট্রলি’। ব্যস্ততম সড়কে ক্রসিং বা ওভারটেক করতে মারাত্মক বিপত্তির মুখে পড়তে হয় খোদ বৈধ যান চালকদেরই। ক্রসিং এ আতঙ্কে থাকতে হয় অবৈধ আনাড়ি চালক এই বুঝি মুখোমুখি মেরে দিলো! আর ওভারটেক? এ যেন মহা বিপত্তি! পেছন থেকে ভেঁপুর শব্দ ট্রলি চালকের কর্ণকুহরে পৌঁছার পরে তো সাইড দেয়ার পালা। এ নিয়ে উপজেলার প্রধান সড়কে বৈধ যান চালকদের সাথে অবৈধ যান চালকদের প্রায়ই বচসা এমনকি হাতাহাতির ঘটনা পর্যন্ত চোখে পড়ে মাঝে মধ্যেই। আবার কখনো কখনো এসব ট্রলি রাস্তার ধারে খাদে বা পুকুরে পড়ে উল্টে থাকতেও দেখা যায় চালকদের অদক্ষতার খেসারত স্বরূপ। ফলে পথচারী বা যাত্রীদের প্রাণহানির সংখ্যা কম হলেও অঙ্গহানির ঘটনা ঘটছে বলতে গেলে অহরহ। অনেক ক্ষেত্রে এসব ট্রলি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গিয়ে ইঞ্জিন ঠান্ডা রাখার কাজে জমানো গরম পানির স্যাঁকা খেয়ে খোদ চালককেই মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। তা ছাড়া মাত্রাতিরিক্ত শব্দ জনজীবন স্তব্ধ করে দেয়। বিকট আওয়াজে এসব ট্রলি চলাবস্থায় বাজারে ক্রেতা বিক্রেতাসহ সর্বস্তরের লোকদের বন্ধ করতে হয় পারস্পরিক আলাপচারিতা। ডিজিটাল যুগেও বন্ধ করতে হয় মোবাইলে কথোপকথন পর্যন্ত। বিশেষ করে স্কুলগামী শিশুরা এসব যান থেকে নির্গত কালো ধূয়ায় ফুসফুসের সংক্রমণসহ জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত এমন মন্তব্য চিকিৎসকদের। শব্দ দূষণেও মারাত্মক ক্ষতির সম্ভাবনা বলে জানান তারা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন