চাঁদপুরের মতলব উত্তর-মতলব দক্ষিণ উপজেলার সেতুবন্ধন স্বপ্নের ধনাগোদা নদীর ওপর নির্মিত মতলব সেতুর কাজ শেষ। অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ শেষ হলেই যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হবে সেতু। এ মাসেই সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও জানুয়ারি মাসে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
মতলব উত্তর ও দক্ষিণ তথা চাঁদপুরের সাথে ঢাকার দূরত্ব কমানো, সময় বাঁচাতে এবং মতলববাসীর দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মতলব বাজার সংলগ্ন পূর্ব দিকে মেঘনা-ধনাগোদা নদীর ওপর মতলব সেতু নির্মাণের একটি বড় রকমের প্রকল্প হাতে নেয় চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সেতুর ভিত্তি প্রস্তুরের ফলক উন্মোচন করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম এমপি ও পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল এমপি। ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে কাজ শুরু হয় মতলব সেতুর। ২০১৭ সালের ৩০ জুন সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। সেতুর অবকাঠামোর পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় দুইবার মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত কাজের সমাপ্তি তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান থেকে জানানো হয়েছে, নভেম্বর মাসের মধ্যে তারা সড়ক ও জনপথ বিভাগকে সেতুটি বুঝিয়ে দিতে পারবে।
সেতুটির প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হয়েছে ৩ শ’ ৪ দশমিক ৫১ মিটার আরসিসি দৈর্ঘের সেতু, অ্যাপ্রোচ সড়কের ওপর ২৫.৭৫ মিটার একটি সেতু, ১২ মিটার দু’টি আরসিসি কালভার্ট, ১০ মিটার দু’টি আরসিসি আন্ডারপাশ, ১.৮৬ কিলোমিটার সার্ফেসিং এবং নতুন পেভমেন্ট তৈরি, ৯ দশমিক ৩৪ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ, ৩.২৩ লাখ ঘনমিটার সড়ক বাঁধ, জিও টেক্সাইল, টো-ওয়াল, সার্ফেস ড্রেন, দু’টি ইন্টারসেকশন আইল্যান্ড এবং সাইন, সিগন্যাল ইউটিলিটি সিফটিংসহ আনুসাঙ্গিক কাজ করার কথা রয়েছে। ১০.২৫ মিটার প্রস্থের সেতুতে সাতটি স্প্যান থাকবে। সেতুর দু’পাশে অ্যাপ্রোচ সড়কটি থাকবে ১.৮৬ কিলোমিটার। সম্প্রতি এ প্রকল্পের আওতায় রিটানিং ওয়াল ও সিসি ব্লক বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। রানা বিল্ডার্স মতলব সেতুর নির্মাণকাজ করছে।
রানা বিল্ডার্স লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী জ্যোতিরাম মল্লিক শিবু জানান, মূল সেতুর কাজ শেষ। অ্যাপ্রোচ সড়কের কার্পেটিংসহ সকল কাজ এ মাসেই শেষ হবে। নভেম্বর মাসে আমরা সেতুটি কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিতে পারব। চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. জসিম জানান, অ্যাপ্রোচ সড়কের কিছু কাজ ও রং করা ছাড়া সেতুর কাজ সম্পূর্ণ। নভেম্বর মাসেই আমরা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সেতুটি বুঝে নিতে পারব। চাঁদপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুব্রত দত্ত বলেন,‘ মতলব সেতুর কাজ শেষ করার মেয়াদ শেষ হবে ডিসেম্বরে। কিছু কাজ বাকি থাকলেও অক্টোবর মাসে সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। আশা করছি জানুয়ারি মাসে যানবাহর চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে পারব। সুবিধাভোগী সাহেববাজার এলাকার দেলোয়ার হোসেন জানান, সেতুটি নির্মাণের ফলে সেতুর দক্ষিণ এলাকার মানুষ সময় কমিয়ে ঢাকা এবং উত্তর এলাকার মানুষ জেলাসদরসহ দক্ষিন আসা-যাওয়া করতে পারবে। পণ্য পরিবহনে খরচ কমবে।
এসিআই লিমিটেডের গাড়িচালক কামাল জানান, সেতুটি চালু হলে আমরা দ্রুত মালামাল পৌঁছাতে পারব ও গাড়ি ভাড়াও কমে আসবে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ বলেন, মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার দীর্ঘ দিনের দাবি এ মতলব সেতু। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম মানুষের স্বপ্নের সেতু বাস্তবায়ন করেছেন। মতলববাসী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার কাছে চির কৃতজ্ঞ।
সেতুটি চালু হলে মতলববাসীর দীর্ঘ দিনের একটি স্বপ্নপূরণ হবে। জেলা সদর চাঁদপুরসহ নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষীপুর প্রভৃতি জেলার সাথে চমৎকার যোগাযোগ মাধ্যম সৃষ্টি হবে। প্রবাসীদের যাতায়তের সুবিধা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন নতুন মাত্রা যোগ হবে। চাঁদপুর, হাইমচর, শাহরাস্তি, ফরিদগঞ্জ, রামগঞ্জ, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, হাজীগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মানুষজনকে কুমিল্লা হয়ে দীর্ঘ পথ না ঘুরে এ পথে সহজেই স্বল্প সময়ের মধ্যে রাজধানী ঢাকায় আসা-যাওয়া সম্ভব হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন