শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৮ এএম

মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ, বিনিয়োগ ও বাণিজ্যসক্ষমতা যে কোনো দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার মূল মানদন্ড হিসেবে গ্রাহ্য হয়ে থাকে। গত ১৬ বছর ধরে বিশ্বব্যাংক ডুয়িং বিজনেস ইনডেক্স প্রকাশ করছে। চলতি ২০১৮ সালের এই ইনডেক্সে দক্ষিন এশিয়ায় আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলো তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। সার্বিকভাবে বাংলাদেশও একধাপ অগ্রগতি অর্জন করলেও মূল্যায়ণের ১০ সূচকের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এখনো খুবই হতাশাজনক। ডুয়িং বিজনেস রিপোর্টে বিশ্বের ১৯০ টি দেশের মধ্যে গত বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৭৭, এবার তা একধাপ এগিয়ে ১৭৬-এ উঠে এসেছে। ডুয়িং বিজনেস সার্বিক সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে গত এক বছরে ভারত এগিয়েছে ২৩ ধাপ। গত বছরের ১০০ নম্বর থেকে তারা এবার ৭৭ নম্বরে উঠে এসেছে। শ্রীলঙ্কা ১১১ নম্বর থেকে ১০০ নম্বরে উঠে ১১ ধাপ অগ্রগতি করেছে।পাকিস্তানও ১৪৭ থেকে ১১ ধাপ উন্নতি করে ১৩৬এ উঠে এসেছে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানও ১৬ ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে ১৬৭ নম্বরে উঠে এসেছে। নেপাল, ভ’টান, মালদ্বীপ গত বছরের চেয়ে যথাক্রমে ৫,৬ এবং ৩ ধাপ নিচে নেমে গেলেও তালিকায় এরা বাংলাদেশ থেকে অনেক এগিয়ে আছে। এমনকি মিয়ানমারের অবস্থানও বাংলাদেশ থেকে ৫ ধাপ এগিয়ে। ব্যবসা সহজীকরণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে(এনফোর্সিং কন্ট্রাক্ট সূচক) বাংলাদেশ বিশ্বের সর্বনিম্ম ধাপে(১৮৯) অবস্থান করছে।
ব্যবসায়িক চুক্তি বাস্তবায়ণে অস্বাভাবিক ধীর গতি, বিরোধ নিস্পত্তির পদ্ধতি ও ব্যয়বাহুল্যের কারণে ব্যবসা সহজীকরণ সূচকে বাংলাদেশ বিশ্বের সর্বনিম্ন অবস্থানে আছে। চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশে গড় সময় লাগে ১ হাজার ৪৪২দিন এবং বিরোধ নিস্পত্তিতে ব্যয় হয় মোট অর্থের ৬৬ শতাংশ। ভারতে ১ হাজার ৪৪৫ দিন, পাকিস্তানে ১ হাজার ৭১দিন এবং শ্রীলঙ্কায় ১ হাজার ৩১৮দিন লাগলেও বিরোধ নিস্পত্তিতে ব্যয় হয় যথাক্রমে ৩১, ২০.৫ এবং ২২.৮ শতাংশ। চুক্তির বিরোধ নিস্পত্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আইনী প্রক্রিয়া, পদ্ধতির স্বচ্ছতা ও মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ১০টি সূচকের অন্যান্য সূচকে গেটিং ইলেক্ট্রিসিটি, ডিলিং উইথ কনস্ট্রাকশন পারমিট (নির্মান কাজের অনুমোদন), রেজিস্ট্রেশন প্রপার্টি, গেটিং ক্রেডিট (ব্যাংক লোন), প্রটেক্টিং মাইনরিটি ইনভেস্টরর্স (ক্ষুদ্র বিনিয়োগ সুরক্ষা), রাজস্ব, সীমান্ত বাণিজ্য , আর্থিক সংকট দূরীকরণ ইত্যাদি বিষয়গুলো রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থা নতুন করে ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করিনা। প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে প্রায় সব ক্ষেত্রে পিছিয়ে থেকে বিনিয়োগ আকর্ষণ ও ব্যবসায়িক সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব নয়। সস্তাশ্রমের সুযোগ কাজে লাগিয়ে টিকে থাকা তৈরী পোশাক পণ্যের রফতানি বাণিজ্যে সম্ভাবনা ধরে রাখতে হলে ডুয়িং বিজনেস ইনডেক্সের সব সূচকের অগ্রগতির দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
আমরা আগামী দশকে মধ্য আয়ের দেশে পদার্পণের স্বপ্ন দেখছি । অথচ বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ ও প্রতিযোগিতাসক্ষমতার ক্ষেত্রগুলোতে তেমন কোনো উন্নতি করতে পারছি না। ভারত যেখানে ২৩ ধাপ, পাকিস্তানও শ্রীলঙ্কা ১১ ধাপ এগিয়েছে, সেখানে বাংলাদেশ সর্বনিম্ন ১৫টি দেশের তালিকায় থাকার পরও ১ ধাপ অগ্রগতি নিয়ে আত্মতুষ্ট থাকতে পারে না। দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি উন্নয়নের কোনো শুভ লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। দেশের শেয়ার মার্কেটে দরপতন অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ তাদের ক্ষুদ্র বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্রের মত খাতে লগ্নি করতেই বেশী আগ্রহী হয়ে উঠেছে। দেশের শিল্প বিনিয়োগের জন্য এটা নেতিবাচক বাস্তবতা। শেয়ার বাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে নিরাপত্তা দিতে সরকারের সংশ্লিষ্টরা স্পষ্টতই ব্যর্থ হয়েছে। পুঁজিবাজার ও ব্যাংকিং খাতে বছরের পর বছর ধরে অনিশ্চয়তা ও অস্থিতিশীলতা চলছে, তা দূর করারও কোন কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা উন্নয়নের গলাবাজি ও রাজনৈতিক রেটরিকে লিপ্ত থাকলেও বাস্তব পরিস্থিতি সম্পুর্ণ ভিন্ন। দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে বহুদূর পিছিয়ে থেকে আমরা জাতিকে এগিয়ে যাওয়ার যে গল্প শোনাচ্ছি তা মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারাতে বসেছে। ডুয়িং বিজনেস বা বাণিজ্যসক্ষমতা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে প্রথমেই অনিশ্চয়তা দূর করার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও আর্থিক খাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও জননিরাপত্তার বিষয়গুলো উপেক্ষা করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা অসম্ভব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন