বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

হাড় ভাঙা চিকিৎসায় প্রতারিত রোগীরা

নেছারাবাদ (পিরোজপুর) থেকে মো. হাবিবুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ১১ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

শাহাদাত (৪২) পেশায় একজন অটোচালক। গ্রামের বাড়ি নেছারাবাদ উপজেলাধীন পাশবর্তী বানারীপাড়ার সৈয়দকাঠি গ্রামে। জমিজমা বলতে তেমন কিছু নেই। গাড়ির চাকা ঘোরলে পেটে ভাত অন্যথায় মাথায় হাত। অটোচালক শাহাদাত কয়েক মাস পূর্বে তার ডান হাতে চোট পেয়ে বেশ কিছু দিন ধরে ঘরে বসা। এ অবস্থায় সে স্বল্প খরচে হাতের চিকিৎসার আশায় নেছারাবাদ থানা সংলগ্ন ট্রলারঘাট জলাবাড়ি হাড় ভাঙা চিকিসালয়ে আসছিলেন গ্রাম্য কবিরাজ রথিনের কাছে। রথিন তার হাতটা নেড়েচেড়ে কোনো এক্সরে না করেই পাতা ও বাসের কঞ্চি দিয়ে বেঁধে দেন। সাথে এক বোতল গরুর প্রশাব আর হাফ বোতল হুক্কার পানি দিয়ে চিকিৎসা বাবদ টাকা নেন তিন হাজার। পূনরায় দেখা করতে বলে শাহাদাতের কাছ থেকে চিকিৎসা বাবদ হাতিয়ে নেন কয়েক হাজার টাকা। সর্বশেষ শাহাদাত আসেন রথিনের কাছে তার ব্যান্ডেজ খোলার জন্য। রথিন ব্যান্ডেজ খুললে শাহাদাত দেখেন তার হাতটা বেকে গেছে। এমনকি আগের মতো ব্যাথায় নাড়াচাড়াও করতে পারছেন না। তখন কবিরাজ রথিন তাকে অভয় দিয়ে বলেন, আপনার হাড় জোড়া লেগেছে। কিন্তু পয়েন্টমত লাগেনি। ভাঙাটা ভয়াবহ ছিল। কিছু দিনের মধ্য স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারবেন বলে বিদায় দেন। তবে এ নিয়ে অটোচালক শাহাদাত কোনো ঝামেলায় যেতে চান না বলে ইনকিলাবকে জানান।

নেছারাবাদ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও ডা. তানভীর আহম্মেদ বলেন, ওই সমস্ত কবিরাজরা লতাপাতা, গরুর প্রশাব ও হুক্কার পানি দিয়ে যে সমস্ত চিকিৎসা চালান তা আদৌ স্বাস্থ্যসম্মত নয়। তাদের কাছে কেবল অসহায়-দরিদ্র মানুষেরাই নয় আজকাল অনেক অসচেতন শিক্ষিত মানুষেরাও চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের অস্বাস্থ্যকর চিকিৎসা নিয়ে অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। তারা দালালের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালিয়ে রোগী কবজা করে চিকিৎসার নামে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।

জানা যায়, এভাবে কেবল শাহাদাদই নন তার মতো অনেক সাধারন, শিক্ষিত, অসেচতন মানুষেরাও ভাঙা মচকা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন তাদের কাছে। এদের মধ্য কেউ কেউ সামন্য চোট ব্যাথা নিয়ে এসে ভালো হলেও অনেকেই টাকা পয়সা খুইয়ে বরণ করেন পঙ্গুত্বকে।
উপজেলার থানা স্ট্যান্ড মোড় হতে স্বরূপকাঠি সাব-রেজিস্ট্র্রি অফিস সংলগ্ন পেছনে, স্বরূপকাঠি প্রধান খেয়াঘাট এলাকায় এসব কথিত কবিরাজরা প্রকাশ্য চেম্বার খুলে তাদের নিজ তন্ত্রের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন।

এইসব কবিরাজের কাছে যে সমস্ত রোগী আসেন, তাদের বেশিরভাগই গরিব-দিনমজুর। হাসপতালে দরকারি পরীক্ষার নামে অযথা টেস্টসহ রোগীর ক্রয় ক্ষমতার বাইরেও ডাক্তাররা দিয়ে থাকেন ওষুধের তালিকা। তাছাড়া ডিগ্রি লাগানো ডাক্তারদের অনেকেই রোগীদের সাথে ভাল ব্যবহারও করেন না। শুনতে চায়না তাদের সব কথা। সব মিলিয়ে বড় ধরনের চিকিৎসা ব্যায় ভার বহনের শঙ্কা নিয়ে হাসপাতালে আসা হয় না তাদের।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন