শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

খুঁড়িয়ে চলছে বিবিরবাজার স্থলবন্দর ৬৬ বছরেও অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়নি

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল, কুমিল্লা থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

ভারত-বাংলাদেশের বিশাল বাণিজ্যের সম্ভাবনার রুট হলেও বিবিরবাজার স্থলবন্দরটি উদ্বোধনের ৬৬ বছরেও গড়ে ওঠেনি অবকাঠামো। এখনো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে গুরুত্বপূর্ণ বিবিরবাজার স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনটি। কুমিল্লা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিবিরবাজার এলাকায় অবস্থিত বিবিরবাজার স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনটি পাক-ভারত বিভক্তির আগে থেকেই কুমিল্লার সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরা অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের প্রধান সড়ক ছিল। দেশের অন্যতম স্থলবন্দরটি দিয়ে রফতানি কার্যক্রম চললেও আমদানি বলতে গেলে একেবারেই নেই।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, বছরে গড়ে এ বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে ১০০ কোটিরও বেশি টাকার পণ্য ভারতে রফতানি হলেও ভারত থেকে আসছে মাত্র কয়েক লাখ টাকার পণ্য। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অবকাঠামোর অভাব ও সীমান্তে সুষ্ঠু নজরদারী না থাকায় চোরাচালানি বাড়ছে। ফলে দিন দিন বাড়ছে বাণিজ্য বৈষম্য। ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত বিবিরবাজার স্থলবন্দর ও শুল্ক অফিসটির অবকাঠামো বলতে রয়েছে কয়েকটি ভাঙাচোরা ঘর। এখানে পণ্যের পাশাপাশি যাত্রীদের রেকর্ডও রাখা হয় কাগজে-কলমে। কিন্তু ওপারে সোনামুড়া স্থলবন্দরটি স্বয়ংসম্পূর্ণ।
দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিবিরবাজার স্থলবন্দরটি ভারতের সঙ্গে এদেশের বিশাল বাণিজ্যের সম্ভবনার রুট হলেও অজ্ঞাত কারণে এখানে কোনো ভৌত অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। বন্দরটিতে নেই কুমিল্লা নগর থেকে যাতায়াতের সরাসরি কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থা। অটোরিক্সা, রিকশা কিংবা ইজিবাইকে চড়ে যেতে হয় বন্দরে। এছাড়া বন্দর এলাকাসহ আশপাশে নেই কোনো আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্ট, দোকানপাট এমনকি ব্যাংকিং সুবিধা। ফলে ভ্রমণকর জমা দিতে যেতে হয় কুমিল্লা শহরে। এছাড়াও কোন কারণে পারাপারে অসুবিধার সৃষ্টি হলে ৮ কিলোমিটার দূরে শহরে গিয়ে অবস্থান করতে হয়। বন্দরে যাতায়াতকারী লোকজনদের জন্য টয়লেট সুবিধাও নেই। বিবিরবাজার স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা আবু তাহের দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমদানীর অনুমতি থাকার পরও বৈধ পথে ভারত থেকে একেবারেই সামান্য পরিমান পণ্য আমদানী হচ্ছে। যার প্রায় পুরোটাই মসলা। এছাড়াও বিশ্রামাগার, টয়লেট সঙ্কটের বিষয়টিও স্বীকার করেন। এছাড়াও বন্দরে অফিস কক্ষের বেহাল দশার কথাও বলেন।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শুল্ক স্টেশনটিতে নেই কোন যাত্রী বা ব্যবসায়ীদের বিশ্রামাগার। ফলে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে দু’দেশে যাতায়াতকারী লোকজন অপেক্ষা করছে খোলা আকাশের নিচে। বর্তমানে এদেশ থেকে অনেকেই চিকিৎসাসেবা নিতে ভারত যাচ্ছেন। অসুস্থ বা সঙ্কটাপন্ন রোগীদের বহনে নেই কোন অ্যাম্বুলেন্স, হুইলচেয়ার বা জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থা। বন্দরের সামনে সড়কের পাশে মাটিতে বসে কিংবা দাঁড়িয়ে বিশ্রাম বা অপেক্ষা করতে হয়। এ সময় অসুস্থ রোগী, বয়স্ক নারী-পুরুষ ও শিশুদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, স্থলবন্দরটিতে ডাম্পিং সুবিধা কার্যকর না হওয়ায় এদেশ থেকে রফতানি করা পণ্যেবোঝাই গাড়িগুলো সরাসরি ভারতে প্রবেশ করে মালামাল খালাস করে ফিরে আসে। এতে সম্ভাবনা থাকা সত্তে¡ও কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হচ্ছে না।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লার একমাত্র স্থলবন্দরটি হচ্ছে বিবিরবাজার। এই বন্দরে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিবিরবাজার স্থলবন্দর দিয়ে ১১৫ কোটি ৪৮ লাখ ৬০ হাজার ৪১১ টাকার পণ্যের পণ্য ভারতে রফতানি হয়। এর মধ্যে গত জানুয়ারি সর্বাধিক ১৪ কোটি ৭৯ লাখ দুই হাজার ৯১০ টাকার পণ্য রফতানি হয়। আর সবচেয়ে কম রফতানি হয়েছে গত সেপ্টেম্বর মাসে পাঁচ কোটি ৬৩ লাখ ১৭ হাজার ৪০৬ টাকার রফতানি পণ্যের মধ্যে প্রধান হচ্ছে সিমেন্ট। এছাড়াও অন্যান্য পণ্য হচ্ছে পাথর, নেট, প্লাস্টিক সামগ্রী, টাইলস, টেউটিন, ইট ভাঙার মেশিন ইত্যাদি
বন্দর সূত্রে জানা যায়, ভারত থেকে বৈধ পথে আসছে শুধু তেঁতুল, বেল ও আদা। গত অর্থবছরে মাত্র ২৬ লাখ ৩৯ হাজার ৪শ’ ২১ টাকার পণ্য এসেছে এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে। দায়িত্বশীল সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, প্রতিদিন সীমান্তপথে অবাধে ভারত থেকে কোটি কোটি টাকার পণ্য চোরাইপথে প্রবেশ করায় বৈধ পথে আমদানি প্রায় শূন্যের কোঠায়।

সূত্রমতে, প্রতিদিন ভারত থেকে মাদকদ্রব্য ছাড়া চোরাইপথে জিরা, গরু মোটাতাজাকরণ, যৌন উত্তেজক ও নেশাজাতীয় ট্যাবলেট, গরু, ছাগল, মহিষ, মুরগির বাচ্চা, থ্রি-পিস, শাড়ি থান কাপড়, সাইকেল, হোন্ডা, গুঁড়াদুধ, কমমেটিকস, বাঁশ, কাঠ, হরলিকস, চামড়া, টায়ার, বিভিন্ন যানবাহনের পার্টস, চকলেটসহ কোটি কোটি টাকার বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য আসছে। এদেশ থেকে যাচ্ছে বিভিন্ন জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, সাবান, আালু, মাছ, চিপস ও কোমল পানীয়। বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী মো. আলমগীর হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, অবকাঠামোগত সুবিধা না থাকা এবং অবৈধভাবে মালামাল প্রবেশের সুযোগ থাকায় বৈধভাবে বাণিজ্যে আগ্রহী হচ্ছেন না এখানকার ব্যবসায়ীরা। এ বন্দরে ১৭ টি পদ থাকলেও বর্তমানে ১৩টি পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া বিবির বাজার স্থলবন্দরে ইন্টারনেট সুবিধাও শূন্যের কোঠায়। এ বিষয়ে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট এর কমিশনার মো. মাহবুবুজ্জামান (চলতি দায়িত্ব) দৈনিক ইনকিলাবের কাছে আশা প্রকাশ করে বলেন, অচিরেই বন্দর অবকাঠামোসহ সব ধরনের সুবিধা প্রদান করা হবে।

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন