নির্বাচনের পর সরকার গঠন হয়েছে এবং সংসদ অধিবেশন শরু হয়ে গেছে; অথচ ভোটের একমাস পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা স্বীকার করলেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারে ভুলত্রুটি ছিল। মেশিন ব্যবহারে অসুবিধা হয়েছিল। গতকাল আগারগাঁওয়ে ইটিআই ভবনে আসন্ন পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং ইভিএম ব্যবহারের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ শীর্ষক প্রশিক্ষণ উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
সিইসি নুরুল হুদা বলেন, ইভিএম নিয়ে আমরা অনেক কথা বলেছি। ইভিএম আমরা ধারণা করি। ইভিএমের ওপরে আমাদের আস্থা, বিশ্বাসের কথা আমরা বারবার বলেছি। যত্মসহকারে এর প্রশিক্ষণ নেবেন-দেবেন। নতুন একটা পদ্ধতিতে কখনো কখনো ভুলভ্রান্তি বা মানুষের মধ্যে আস্থার সঙ্কট সৃষ্টি হয়। সেটা আপনাদের ওপর নির্ভর করে। তিনি আরো বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছয়টি নির্বাচনী এলাকায় আমরা ইভিএম ব্যবহার করেছি। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, সেটায় কোথাও কোথাও ভুলত্রুটি ছিল, অসুবিধা ছিল। সেই অসুবিধাগুলো নতুন একটা পদ্ধতি প্রয়োগের সময় এরকম হতে পারে। একেবারে হতে পারে না এটা আমি বলব না। তবুও আপনাদের সাবধানতা, সতর্কতা যদি বেশি থাকে তা হলে সেরকম ভুল হওয়া উচিত ছিল না।
সিইসি বলেন, আমরা বলেছিলাম ইভিএমে ভোট নিয়ে আধ ঘণ্টা, এক ঘণ্টার মধ্যে ভোটের ফল জনগণের কাছে তুলে দেবো। আমরা সেটি পারিনি। কেন পারিনি সেই কারণগুলো নির্ধারণ করতে হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে কী ভুল ছিল সেগুলো শনাক্ত করতে হবে, সংশোধন করতে হবে। ইভিএম ব্যবহার করতে পারলে নির্বাচনে যে অনিয়ম হয়, তার বেশির ভাগ বন্ধ হয়ে যাবে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ধন্যবাদ জানিয়ে সিইসি বলেন, উপজেলা নির্বাচনের সঙ্গে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কাঠামোগত দিক থেকে খুব একটা পার্থক্য নেই। স্থানীয়ভাবে হওয়ায় এই নির্বাচনগুলো আরো বেশি প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ হয়। আমি আবারো আশা করব যেভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় আপনাদের ভ‚মিকা স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, দৃঢ় ছিল, এবারো সেরকম স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ হবে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের কী ভুল ছিল সেগুলো শনাক্ত করে সংশোধনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করে সিইসি বলেন, আগামী মার্চের দ্বিতীয়ার্ধে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শুরুর কথা রয়েছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তফসিল দেয়া হবে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সময় জেলা সদর উপজেলাগুলোতেও ইভিএমে ভোট করার পরিকল্পনা রয়েছে।
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার জন্য বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ইসিতে আবেদন করেছিল। দেশের বুদ্ধিজীবী, সুশীলসমাজ এবং বিশেষজ্ঞরাও ইভিএম ব্যবহার না করার মত দেন। ইসিও জানায়, সবাই না চাইলে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করবে না। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইভিএমের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে ছয়টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করে। যেসব আসনে ইভিএমে ভোট নেয়া হয় সেগুলো হলো- ঢাকা-৬, ঢাকা-১৩, চট্টগ্রাম-৯, রংপুর-৩, খুলনা-২ এবং সাতক্ষীরা-২। যান্ত্রিক ত্রুটি, আঙুলের ছাপ না মেলাসহ নানান জটিলতার কারণে ইভিএমে ভোট গ্রহণ ছিল মন্থর গতি। কোথাও কোথাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভোট গ্রহণ বন্ধ রাখা হয়। নির্বাচনের পর দেখা যায় দ্রুত ভোট গণনা দূরের কথা, সাধারণ ব্যালটে ভোট গণনার চেয়ে দুইগুণ তিনগুণ বেশি সময় লাগে ইভিএমের ভোট গণনায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন