শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ফাঁকা মাঠে আওয়ামী লীগ

ইয়াছিন রানা | প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ের পর রাজনীতির মাঠে প্রতিদ্ব›দ্বীহীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে বিএনপি অংগ্রহন করবে না, তাই আওয়ামী লীগের সামনে নেই কোন প্রতিদ্ব›িদ্ব। এমনাবস্থায় এক রকম ফাঁকা মাঠে বিচরণ করছে ক্ষমতাসীনরা। নির্বাচনে জয় নিয়েও নেই কোন চিন্তা। ধীর স্থিরভাবে দলের কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন নেতারা।
এদিকে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ভঙ্গুর দলীয় কাঠামোর কারণে তাদের পাত্তা দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। দলটিও আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ‘গ্রিন সিগনাল’ না পেলে তাদের প্রার্থীরা মাঠে নামতে ইচ্ছুক নয়। আর ১৪ দলের শরিকদেরকে সরকারের সমালোচনা করে আদতে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে বলা হলেও শরিকরা তাতে রাজি নয়। তাই আওয়ামী লীগের বিপক্ষে ‘গ্রিন সিগনাল’ ব্যতীত কোন নির্বাচনে তারাও প্রার্থী দেবে না। তাই সব মিলিয়ে নির্বাচনের ফাঁকা মাঠে অপ্রতিদ্ব›িদ্ব আওয়ামী লীগ।
তবে রাজনীতিতে বিরোধী দল সংকটের জন্য বিএনপিকেই দায়ী করছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, নির্বাচনে লজ্জাজনক পরাজয়ের কারণে বিএনপির নেতা, নির্বাচনের প্রার্থী এমনকি কর্মীদের মনোবল ভেঙ্গে গেছে। আর বার বার আন্দোলনে ধরাশয়ী হয়ে মাঠে নামার সাহস নেই তাদের। এছাড়া নেতারা দলের কর্মীদের বিপদে আপদে পাশে না থাকায় এখন নেতাদের পাশে নেই বিএনপি কর্মীরা। তাই আওয়ামী লীগের জন্য রাজনীতির মাঠ আপাতত পরিষ্কার ও বাধাহীন বলেই মনে করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম গতকাল বলেন, জামায়াতে ইসলামিকে প্রশ্রয় দেওয়ার কারণে বিএনপির ভরাডুবি। বর্তমানে বিরোধী দলহীন রাজনীতির জন্য দায়ী বিএনপি নিজেই। তিনি বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহবান জানান।
তবে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় সারির একজন নেতা ইনকিলাবকে বলেন, মুখে মুখে বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য আওয়ামী লীগের তরফ থেকে বলা হলেও আদতে দল চায় না বিএনপি নির্বাচনে আসুক।
নির্বাচনী মাঠ ফাকা হবার বিষয়ে স্থানীয় নির্বাচনের কয়েকজন প্রার্থীর সঙ্গে গতকাল কথা হলে তারা জানান, বিএনপির নির্বাচনে জয়লাভ করার নূন্যতম সম্ভাবনা না থাকার কারণে তারা প্রার্থী হচ্ছেন না। এছাড়া অনেকে পুলিশি হয়রানির ভয়েও নির্বাচনে আগ্রহী না।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, বিএনপি বা মহাজোটের শরিক কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। বিএনপি মাঠে নামতে দেয়া হবে না আর শরিকদের কেউ গ্রিন সিগনাল না পেয়ে মাঠে নামতে নারাজ। তাই নির্বাচনের মাঠ আওয়ামী লীগের জন্য ফাকা। দলের একাধিক প্রার্থীর প্রতিযোগীতার মাধ্যমে মূলত নির্বাচন জমে উঠবে। তবে কোন্দলের কারণে দলের বদনাম হবে বা সমালোচনার তৈরী হবে এমন বিষয়ে সাবধান থাকবে কেন্দ্রীয় সংগঠন।
বিএনপির নির্বাচনে অংশ না য়োর ব্যাপারে কথা হয় একটি জেলা আওয়ামী লীগের নেতার সঙ্গে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হয়ে তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা বলেছেন জাতীয় নির্বাচনের মতই স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই বিএনপির প্রার্থীদের নির্বাচনে আসার যে ইচ্ছাটুকু ছিল তা-ও নষ্ট হয়ে গেছে। তবে এরপরও বিএনপির গতিবিধির উপর নজর রেখে নির্বাচনের কৌশল ঠিক করছে ক্ষমতাসীনরা। দলের কোন্দল নিরসনেও সতর্ক নেতারা।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল বলেন, গতবার উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে বিজয়ীর সংখ্যায় বেশি ছিল বিএনপির। গতবার যারা বিজয়ী হয়েছে তারা এবার নির্বাচন একেবারে ফাঁকা মাঠে ছেড়ে দেবে, আমার তো মনে হয় এটার সম্ভাবনা খুব কম। অনেকেই নির্বাচন করতে চাইবে। বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা দলীয়ভাবে, অফিসিয়ালি বলেছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উপ-নির্বাচনে মেয়র পদে তাদের প্রার্থী নেই। কিন্তু কাউন্সিলর-ইউনিয়ন পর্যায়ে অনেক নেতার প্রার্থীতা রয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপি হয়তো ওপেনলি প্রতীকে নেই। তারা একেবারে মাঠে নেই- একথা বলা যাবে না। উপজেলা নির্বাচনে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিতে পারে। দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কাজেই আমাদের সবকিছুই মাথায় রাখতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে বিএনপি না আসলেও প্রার্থীতার অভাব হবে না। বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। বিএনপি নির্বাচন না করলে অন্যরা করবে না, তা তো নয়। জাতীয় পার্টি আছে, ১৪ দলের শরিকরা আছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপির রাজনীতি খাদের কিনারায়। তারা যদি ভুল না শোধরায় তাদের অবস্থা হবে মুসলিম লীগের মত। তাদের উচিত ভুল শোধরে নির্বাচনে অংশ নেয়া।
উল্লেখ্য, এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে উপজেলা পরিষদে নির্বাচন হচ্ছে। ৫ দফার এ নির্বাচন হবে। প্রথম দফায় ৮৭টি উপজেলায় ভোগ্রহন হবে আগামী ১০ মার্চ। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি। একই সঙ্গে ঢাকার দুই সিটির বর্ধিত অংশ অর্থাৎ নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোর কাউন্সিলর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
Rafiqul Islam ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৩:৫৬ এএম says : 0
বেহুদা টাকা খরচ না করে এমনিতেই পাশ দিয়ে দাও
Total Reply(0)
Faruk Ahmed ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৩:৫৭ এএম says : 0
তাহলে ভোটারদের অনেক উপকার, ভোটাররা নিচ্চিন্তে ঘুমাবে ভোট দিতে হবে না।
Total Reply(0)
Yusuf Un Nobi Babu ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৩:৫৭ এএম says : 0
কিন্তু তারপরও শান্তি নেই
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন