আমাদের সমাজে খারাপ কাজের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। তার অন্যতম কারণ হলো, অপরাধ করার পর অপরাধীকে শাস্তির আওতায় না আনা বা কম শাস্তির মাধ্যমে পার পেয়ে যাওয়া। অথবা মামা, খালু, আঙ্কেলের জোরে পার পেয়ে যাওয়া। যা মোটেই সমর্থনযোগ্য নয়। শান্তির ধর্ম ইসলাম অপরাধকে কখনও সমর্থন করে না। ইসলাম চায় অপরাধীকে শাস্তির আওতায় এনে অপরাধকে দমন করা। যেমন, ইসলাম ধর্মে হত্যার বদলে কেসাস গ্রহণ করার কথা দৃঢ়চিত্তে পবিত্র কোরআনুল কারিমে বলা হয়েছে। মহান আল্লাহপাক বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে কেসাস গ্রহণ করা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তির বদলায় এবং নারী নারীর বদলায়।’ পরের আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে বুদ্ধিমানগণ! কেসাসের মধ্যে তোমাদের জন্য জীবন রয়েছে, যাতে তোমরা সাবধান হতে পার’ (সুরা আল বাক্বারা ১৭৮, ১৭৯)। এখানে মহান আল্লাহ পাক মানব জাতির জ্ঞানীদের বলছেন, যদিও হত্যার পরিবর্তে হত্যা করা হবে; বাহ্যত দৃষ্টিতে একজনের জীবনের বিনিময়ে আরেকজনকে হত্যা করা হলেও এর শিক্ষা থেকে আরো হাজারো প্রাণ বেঁচে যাবে। আর কেউ কাউকে হত্যা করবে না। কারণ, অন্যকে হত্যার মাধ্যমে সে নিজের জীবনকে মৃত্যুর সম্মুখীন করতে চাইবে না। এভাবে অপরাধীকে শাস্তির আওতায় এনে সমাজ থেকে অন্যায় অপরাধ দূর করার জন্য ইসলাম আমাদের জন্য বিধান নির্ধারণ করে রেখে দিয়েছে।
প্রতিটি ক্ষেত্রে শান্তির ধর্ম ইসলাম নির্দিষ্ট শাস্তি নির্ধারণ করে রেখে দিয়েছে। যাতে করে প্রত্যেক মানুষ স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করতে পারে। আস্বাদন করতে পারে প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ। আমাদের সমাজ কি সকলের ক্ষেত্রে শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পেরেছে? জবাব, অবশ্যই না। তাহলে কেমন করে আমাদের সমাজের লোকজন শান্তির পতাকাতলে অবস্থান করবে? আমাদের সমাজের দিকে তাকালে দেখা যায় যে, যারা নিঃস্ব, হতদরিদ্র, ক্ষমতাহীন, সহায় সম্বলহীন, জনবল নেই তাদের ক্ষেত্রে অপরাধের বেলায় প্রয়োজনের বেশি শাস্তি দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে যারা বিত্তশালী, জনবল রয়েছে, ক্ষমতার দাপট রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে অপরাধের তেমন কোনো শাস্তি নেই। টাকার জোরে, ক্ষমতার দাপটে, মামা, খালু আর জনবলের কারণে অপরাধ করেও থাকছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। যা, জাহেলিয়্যাতকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। ইসলাম যা মোটেই সমর্থন করে না।
সর্বোপরি বলতে চাই, ফেনীর সোনাগাজী মাদরাসা ছাত্রীকে আগুনে পুরিয়ে হত্যা, ঢাকার ঢেমরা এলাকার শিশু মনিরকে শ্বাসরোধ করে হত্যার সাথে যে বা যারা জড়িত তাদেরসহ আরো যত অপরাধ সংগঠিত হয়েছে সকল অপরাধের সুষ্ঠু তদন্ত করে অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করে সমাজের অপরাধকে কমিয়ে আনতে হবে। তা না হলে আমাদের সমাজ হবে বসবাসের অনুপযোগী। যা মোটেই কাম্য নয়।
লেখক: কলামিস্ট
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন