শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

এসব খাতের উন্নয়নে আরো নজর দিতে হবে

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ১৬ মে, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

দেশে উন্নয়নের ঢাক-ঢোলের মধ্যেই উঁকি দিচ্ছে অর্থনৈতিক খাতে নানা অশনি সংকেত। এ ব্যাপারে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি খবরের সারাংশ হচ্ছে, ‘চাপ বাড়ছে দেশের অর্থনীতিতে। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে মন্দা পরিস্থিতি, ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ, শেয়ারবাজারের নিম্নগতি, প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক ধারা, মূল্যস্ফীতির চাপ ঊর্ধ্বমুখী, ডলারের সংকট, রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি প্রভৃতি কারণে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি এক ধরনের চাপের মুখে পড়েছে।’ তবে, এ নিবন্ধের প্রয়াস নেতিবাচক দিক নিয়ে আলোচনা নয়, উন্নয়নের নতুন পথের সন্ধান নিয়ে কিছু আলোকপাত করা।
আইসিটি: বর্তমানে মানুষ ও প্রাণিকূলের জীবনচক্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে উঠছে। তন্মধ্যে প্রযুক্তির ব্যবহার বেশি। তাই বিশ্বে এখন সর্বাধিক স¤প্রসারিত হচ্ছে আইটি খাত। বাংলাদেশেও এই খাতের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। বিশ্ব বাজারের যে চাহিদা আছে, তার কিয়দংশ ধরতে পারলে এই খাতই হবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দিকে দিয়ে গার্মেন্টের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত। এটি কার্নির ২০১৭ সালের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ আইটি আউটসোর্সিং, বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং এবং সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের ‘গেøাবাল সার্ভিস লোকেশন ইনডেক্সে ২১তম। অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইন্সটিটিউটের হিসেবে ভারতের পর বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ফ্রিল্যান্সার বাংলাদেশে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কলসেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের হিসাবে ৪০ হাজারের বেশি মানুষ এখন আউটসোর্সিংয়ের সাথে জড়িত, যারা বছরে ৩০ কোটি ডলারের বেশি আয় করছে। ৫০টি দেশের গ্রাহক অনলাইনে অ্যান্টি ভাইরাস কিনছে। অপরদিকে, বেসিসের হিসাব মতে, তথ্য প্রযুক্তি খাত থেকে ২০১৮ সালে আয় হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি ডলার। ২০২১ সালে তা ৫০০ কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। বিজনেস ইনসাইডারের প্রক্ষেপণ বলছে, ২০২৫ সালে বিশ্বে ৬ হাজার ৪০০ কোটি আইওটি ডিভাইস থাকবে। যেখানে ২০১৭ সালে ছিল ৯০০ কোটি ও ২০১৮ সালে ছিল ১ হাজার কোটি। আইওটি খাতের বাজার ২০২৬ সাল নাগাদ প্রতি বছর ৩ হাজার কোটি ডলার করে বাড়বে। স¤প্রতি ম্যাককিনসে গেøাবাল ইন্সটিটিউটের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তির ব্যবহারের ফলে কোর ডিজিটাল সেক্টর। যেমন: তথ্যপ্রযুক্তি, সফটওয়্যার, বিজনেস প্রসেস ম্যানেজমেন্ট, ডিজিটাল কমিউনিকেশন, ইলেক্ট্রনিকস ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পে উৎপাদন ব্যাপকভাবে বাড়বে। ২০২৫ সাল নাগাদ এ শিল্পগুলো জিডিপিতে অতিরিক্ত ৪৩,৫০০ কোটি মার্কিন ডলার অবদান রাখতে পারবে। গত ২৫ এপ্রিল বিবিসিতে প্রকাশ, ‘বাংলাদেশে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তথ্য প্রযুক্তি খাতে ফ্রিল্যান্সিং এবং এই পেশায় নারীদের আগ্রহ চোখে পড়ার মতো। কারণ এটি একটি স্বাধীন পেশা, যেখানে সময় বেঁধে কাজ করতে হয় না। তেমনি নিজের সুবিধা-মতো ঘরে বসেও আয় করা যায়। বর্তমানে বিদেশি আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানগুলোয় বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা উদাহরণ সৃষ্টি করায় একে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে উল্লেখ করেছেন তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। ভালো মানের একটি ল্যাপটপ, প্রয়োজন অনুসারে সফটওয়্যার, নিরবচ্ছিন্ন ও দ্রæত গতির ইন্টারনেট সংযোগ এবং বৈদেশিক অর্থ লেনদেনের জন্য অ্যাকাউন্ট থাকলেই চলবে। এছাড়া আউটসোর্সিংয়ে যে বিষয়ে কাজ করতে চান সে বিষয়ে পারদর্শিতা, ইংরেজি ভাষায় কথা বলা ও লেখার দক্ষতা এবং কম্পিউটার চালানোর জ্ঞান থাকতে হবে।’ তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘বিপিও খাতে ৪,৮০০ কাজ আছে।’ অপরদিকে, বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান গত ২৩ এপ্রিল বলেছেন, ‘সরকার বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিংয়ের জন্য সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত। বর্তমান বিশ্বে বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিংয়ের যে বড় বাজার রয়েছে, সে বাজারে বাংলাদেশের আরও অগ্রসর হতে হলে যুব-সমাজকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। তাদের কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ হতে হবে, ভাষাগত দক্ষতা অর্জন করতে হবে এবং আউটসোর্সিংয়ের বিভিন্ন শাখায় পারদর্শী হতে হবে। স্মরণীয় যে, ই-কমার্স দেশে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জানা মতে, বিশ্বের এর হার ৬০%। অর্থাৎ দেশে ও বিশ্বে আইটি খাত বিশাল এবং তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর পূর্ণ সদ্ব্যবহার করার জন্য দেশে প্রয়োজনীয় দক্ষ লোক তৈরি করতে হবে। সে লক্ষ্যে দেশের সব শিক্ষাঙ্গনে নিম্নস্তর থেকে আইটি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা আবশ্যক। তাহলেই কয়েক বছরের মধ্যেই জাতি প্রযুক্তিমনস্ক হয়ে উঠবে। উন্নতিও ত্বরান্বিত হবে। স্মরণীয় যে, বর্তমানের শিশুরা স্মার্ট-ফোন ব্যবহারে পারদর্শী। তাই তাদের পক্ষে কম্পিউটার চালানো মোটেও দূরহ নয়।
পরমাণু: গত ১৫-১৬ এপ্রিল রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ফোরাম এটমএক্সপো ২০১৯-এ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পরমাণু প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে চিকিৎসা শাস্ত্র, কৃষি খাত, মহাকাশ ও মেরু অঞ্চল গবেষণা এবং অর্থনীতির এনার্জি ভিত্তি সুদৃঢ়করণে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। সভায় আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে বিদ্যুৎ সুবিধা বঞ্চিত মানুষের সংখ্যা ১১০ কোটি এবং ২৯০ কোটি লোকের ক্লিন রান্না সুবিধা নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, পরমাণু শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এই বিশাল জনগণকে ক্লিন এনার্জি সুবিধার আওতায় আনার সঙ্গে সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করা সম্ভব। ওদিকে জাপান আণবিক শিল্প ফোরামের প্রতিবেদন মতে, বর্তমানে চীনে পরমাণু ৪৪টি চুল্লি চালু রয়েছে। সর্বোচ্চ ৯৮টি চালু চুল্লি নিয়ে ১ম স্থানে যুক্তরাষ্ট্র এবং ৫৮টি নিয়ে ফ্রান্স ২য় স্থানে রয়েছে। দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে এবং বায়ুদূষণ মোকাবিলার লক্ষ্যে পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চীন আরও ৩৮টি চুল্লি নির্মাণ অথবা নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। এটি ২০১১ সালে জাপানের ফুকুশিমা পরমাণু দুর্ঘটনার পর ব্যয় এবং নিরাপত্তা বিষয়ক উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়ে চলায় অন্যান্য কয়েকটি দেশের গৃহীত পদক্ষেপের বিপরীত। জার্মানি পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে সরে যাচ্ছে এবং ফ্রান্স, আণবিক শক্তির উপর থেকে নির্ভরশীলতা হ্রাস করে আনার ঘোষণা দিয়েছে। স্মরণীয় যে, যেকোনো কাজেরই লাভ-ক্ষতি আছে। কিন্তু যেটা বেশি ফলদায়ক মানুষ সেটিই গ্রহণ করে। তাই পরমাণু শক্তি বেশি ফলদায়ক বিধায় এর কার্যক্রম চলতেই থাকবে। বাংলাদেশেও রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলেও আর একটি নির্মাণ করার পরিকল্পনা আছে। উপরন্তু পাহাড়ি অঞ্চলেও এর সুযোগ আছে বলে অনেকের অভিমত। সমুদ্রে যদি ভাসমান পরমাণু প্ল্যান্ট নির্মাণ করা যায় তাহলে সোনাই সোহাগা। কারণ আমাদের বিশাল এলাকা আছে সমুদ্রে।
পর্যটন: ইউএনডাবিøউটিও’র বিশ্ব পর্যটন ব্যারোমিটার-২০১৮ অনুযায়ী, ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক পর্যটন আগমন হয় ১৪০ কোটি। পর্যটক আগমনে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে তা বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রায় দ্বিগুণ। ২০১৮ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয় ৩.৭%। আর ২০১৮ সালে পর্যটক আগমনে প্রবৃদ্ধি হয় মধ্যপ্রাচ্যে ১০%, আফ্রিকায় ৭%, আমেরিকায় ৩% এবং এশিয়া-প্যাসিফিক ও ইউরোপে ৬% করে (এ অঞ্চলে মোট পর্যটকের সংখ্যা-৩৪.৩০ কোটি। তন্মধ্যে প্রবৃদ্ধির হার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ৭%, উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় ৬% এবং দক্ষিণ এশিয়ায় ৫%, ওশেনিয়া অঞ্চলে ৩%)। উক্ত প্রতিবেদনে নির্দিষ্ট কোনো দেশের কথা উল্লেখ না করে শুধুমাত্র অঞ্চল ভিত্তিক হিসাব দেওয়া হয়েছে। তাই ২০১৮ সালে বাংলাদেশে পর্যটনে প্রবৃদ্ধি কত এবং বিশ্ব সূচকে অবস্থান কী তা জানা যায়নি। তবে গত ১৯ এপ্রিল পর্যটন প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ‘২০১৭ সালে দেশের জিডিপিতে পর্যটন ও ভ্রমণ খাতের অবদান ছিল ৮৫০.৭ বিলিয়ন টাকা। যা মোট জিডিপির ৪.৩%। ভারতের ব্যুরো অফ ইমিগ্রেশন দপ্তরের হিসাব মতে, ২০১৭ সালে এক কোটির বেশি বিদেশি পর্যটক ভিসায় ভারত ভ্রমণ করেছে, যা আগের বছরের চেয়ে ১৪% বেশি। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে ২০১৭ সালের আয় ছিল প্রায় তের বিলিয়ন ডলার। ২০১৭ সালে যেসব দেশ থেকে বেশি সংখ্যায় পর্যটক ভারতে গেছে তার শীর্ষে আছে বাংলাদেশ। যার সংখ্যা ২১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৫৭ জন। এছাড়া, ২০১৮ সালের প্রথম ছয় মাসে পর্যটন খাত থেকে ভারতের আয় হয়েছে সাড়ে ১৪ বিলিয়ন ডলারের মতো। বাংলাদেশের মানুষ ভ্রমণপ্রিয়। তাই সুযোগ পেলেই তারা ভ্রমণ করে বিভিন্ন দেশ। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে ভ্রমণের হার কম। বিদেশিদেরও কম। কারণ, দেশে পর্যটনের পরিবেশ অনুকূল নয়। অথচ এটা এক বিশাল সম্ভাবনাময় খাত। তাই এই খাতকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে দেশের উন্নতির চেহারা পাল্টে যাবে।
সমুদ্র: বিশ্বব্যাংক গ্রæপ ২০১৮ সালে ‘টুয়ার্ডস এ বøু ইকোনমি: এ পাথওয়ে ফর সাসটেইনেবল গ্রোথ ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সমুদ্র অর্থনীতির ব্যাপারে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোনো সমন্বিত নীতি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেনি। সমুদ্র অর্থনীতি বিষয়ে তথ্য-উপাত্তেরও বড় আকাল রয়েছে বাংলাদেশে। বিভিন্ন সূত্র থেকে যা পাওয়া গেছে, তা জড় করে বিশ্বব্যাংক একটি হিসাব করে বলেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বøু-ইকোনমির অবদান ছিল ৬.২ বিলিয়ন ডলার, যা মোট অর্থনীতির ৩%। যার খাত ভিত্তিক হিসাব হচ্ছে: পর্যটন ২৫ ভাগ, সমুদ্র থেকে মাছ ধরা এবং অ্যাকুয়া-কালচার ২২ ভাগ ও তেল-গ্যাস সম্পদ ১৯ ভাগ। অন্য এক সূত্র মতে, ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় অর্থনীতির ৬০% অংশীদার সমুদ্র। অস্ট্রেলিয়ারও প্রায় অনুরূপ। এছাড়া, সমুদ্র সংলগ্ন সব দেশের অবস্থাও তদ্রূপ। পাশের দেশ ভারত ও মিয়ানমারেরও অবদান বিশাল। কিন্তু সে তুলনায় আমাদের প্রাপ্যতা নগণ্য। এমনকি সমুদ্র বিজয়ের পর তেল-গ্যাস তুলে তা রফতানি করে মিয়ানমার ও ভারত প্রচুর অর্থ উপার্জন করছে। আর আমরা এর টেন্ডারই ওপেন করতে পারিনি! বানান আর ব্যাকরণ নিয়ে কাটা-ছেড়া করছি। এ ব্যাপারে গত ২৪ এপ্রিলে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষজ্ঞদের অভিমত হচ্ছে, ‘সমুদ্র অর্থনীতি নিয়ে কয়েক বছর ধরে শুধু আলোচনাই হচ্ছে। এ সংক্রান্ত আইন এখনও প্রণয়ন করা সম্ভব হয়নি। সমুদ্র-সম্পদ জরিপ ও অনুসন্ধান কার্যক্রমেও অগ্রগতি নেই। এ কারণে সঠিক পরিকল্পনাও করা যাচ্ছে না। অথচ সমুদ্রের মৎস্য-সম্পদ ও উদ্ভিদ, সেখান থেকে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন, তেল-গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ, পর্যটনসহ সামুদ্রিক পরিবহনের মাধ্যমে মোট প্রবৃদ্ধি আরও ৩-৪% বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।’ স্মরণীয় যে, আমাদের বিশাল সমুদ্র এলাকায় পানির নিচে অফুরন্ত সম্পদ ছাড়াও পানির উপরে রয়েছে বিশাল সম্ভাবনা। যেমন: স¤প্রতি সমুদ্রে ভাসমান পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ ছাড়াও আবাসন, শিল্প, বাজার ইত্যাদি স্থাপন করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে জাতিসংঘেরও চিন্তা ভাবনা আছে। যেমন: আগামী দিনে মেট্রোপলিস নয়, আসছে অ্যাকোয়াপলিশের ভাবনা। একে বাস্তব রূপ দিতে পদক্ষেপ নিয়েছে জাতিসংঘ। ভাসমান এই শহরে বাস করতে পারবেন ১০ হাজার মানুষ। আর সাসটেন্যাবিলিটির দিক থেকেও কোনো চিন্তা থাকবে না। এই ভাসমান শহরের লেআউট তৈরি করেছে আর্কিটেকচার ফার্ম বিআইজি এবং এমআইটি সেন্টার ফর ওশান ইঞ্জিনিয়ারিং। ক্রমে বাড়ছে সমুদ্রের জলস্তর। সে সমস্যা থেকে মানুষকে বাঁচাতেই এই পরীক্ষা করা হয়েছে। এই নতুন শহর সম্পূর্ণভাবে ঝড়ের কবল থেকে রক্ষিত এবং এখানে কখনও কোনদিন বন্যাও হবে না। এই ভাবনা যদি ভবিষ্যতে বাস্তবে পরিণত হয় তাহলে এই শহরের বাসিন্দার নিজেরাই নিজেদের শস্য তৈরি করতে পারবেন, পারবেন বিদ্যুৎ তৈরি করতেও। সেই সঙ্গে সমুদ্রের সঙ্গে তৈরি হবে সখ্য। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে কয়েকটি দেশে সমুদ্রের তলদেশে হোটেল নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া, সমুদ্রে ভাসমান কৃষি ও মৎস্য চাষ হচ্ছে। এসব বাংলাদেশে করা হলে যে নতুন আবাসন, কৃষি ও শিল্প গড়ার ক্ষেত্রে জমির সংকট দেখা দিচ্ছে, তা দূর হয়ে নবদিগন্তের সূচনা ঘটবে দেশের। অপরদিকে, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দ্রæত স¤প্রসারণ, পায়রা সমুদ্র বন্দর যথাসময়ে নির্মাণ সম্পন্ন হলে দেশের উন্নতি ত্বরান্বিত হবে। আর সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করতে পারলে দেশের অর্থনীতির ব্যারোমিটার এক লাফে অনেক উঁচুতে উঠে যাবে। তাই এই গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করা দেশের জন্য অত্যাবশ্যক।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন