শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ধৈর্যশীলদের প্রতিদান ও মর্যাদা

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ধৈর্যশীলদের নিয়ে গত আলোচনার অধিকাংশ আয়াতে ধৈর্যধারণের নির্দেশ ও তার উপদেশ দানের সাথে সাথে তার প্রতিদান ও শুভ পরিণতির প্রতি ইঙ্গিত বিদ্যমান, তথাপি বিশেষভাবে সবরের প্রতিদান ও পরিণতি সংক্রান্ত দু-চারটি আয়াত আরো উদ্ধৃত করা হলো।

সূরা রা’দের এক স্থানে সেসমস্ত বান্দার বিশেষ গুণ-বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালার সবিশেষ আশীর্বাদ বর্ষিত হবে। এ প্রসঙ্গে সেসব বান্দার একটি বিশেষ অবস্থা এ-ও বর্ণনা করা হয়েছে, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি অন্বেষায় যেসব লোক (সর্বপ্রকার অমনোপূত ও কঠোরতায়) ধৈর্যধারণ করেছে।’ (সূরা রা’দ : আয়াত ২২)
ধৈর্যশীলদের পারলৌকিক পরিণতি বর্ণনা প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর হ্যাঁ, (জান্নাতে) তাদের ঘরের প্রত্যেক দরজা দিয়ে ফেরেশতারা তাদের কাছে আসবে তাদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এবং বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম। কারণ, পৃথিবীতে তোমরা সবরকে নিজেদের আদর্শ করে নিয়েছিলে। কতই না উত্তম আখেরাতের এ ঠিকানা।’ (সূরা রা’দ : আয়াত ২৩-২৪)।

সূরা আল ইমরানে জান্নাতবাসী বান্দাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা প্রসঙ্গে সর্বপ্রথম তাদের সবর গুণেরই উল্লেখ করা হয়েছে, বলা হচ্ছে, ‘আর ধৈর্যশীল, সত্যভাষী এবং আল্লাহ তায়ালার অনুগত।’ (সূরা আল ইমরান : আয়াত ১৭)।

কেউ যদি সবরের মাধ্যমে নিজেদের অন্তরকে সুদৃঢ় করে এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তা সাথে সাথে কবুল করেন। এ ব্যাপারে সূরা বাকারায় পূর্ববর্তী যুগের একদল মুজাহিদের উল্লেখ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, বিরাট ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীর অধিকারী এক শত্রæ (জালূত)-এর সাথে তাদের মোকাবেলা হলে তাদের মধ্যে কিছু দুর্বলচিত্ত ও দুর্বল ঈমানের লোক জালূত ও তার বাহিনী দেখে সাহস হারিয়ে বসল। তারা বলল, এদের সাথে মোকাবেলা করার ক্ষমতা আমাদের নেই।

কিন্তু যাদের অন্তরে ঈমানী শক্তি বিদ্যমান ছিল তারা বলল, জয়-পরাজয় সম্পর্ক শুধু অল্প-অধিকের সাথেই সংশ্লিষ্ট নয়; ইতিহাসেও এর দৃষ্টান্ত বিদ্যমান। বলা হয়েছে, ‘অল্প সংখ্যার অধিকারী কত দলই তাদের প্রতিপক্ষ অধিক সংখ্যক দলের ওপর আল্লাহ তায়ালার হুকুম ও সাহায্যে বিজয় অর্জন করেছে। আর আল্লাহ ও তার সাহায্য রয়েছে ধৈর্যশীলদের সাথে।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৪৯)।

যাহোক, কোরআন বলছে, আল্লাহর সেসব বান্দা নিজেদের অন্তরকে সুদৃঢ় করেছে এবং অতঃপর আল্লাহ তায়ালার কাছে ধৈর্য ও দৃঢ়তা এবং বিজয় ও কৃতকার্যতার জন্য দোয়া প্রার্থনা জানিয়েছে। তারা নিবেদন করল, ‘হে আমাদের পরওয়ারদেগার, আমাদের সবর দ্বারা সমৃদ্ধ করো, আমাদের দৃঢ়পদ করো এবং কাফের দলের ওপর আমাদের বিজয় অর্জনে সহায়তা করো।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৫০)।

এ সবরের পরিণতি উল্লিখিত দোয়ার পরেই পাশাপাশি বলা হয়েছে, ‘অতঃপর ঘটল এই যে, আল্লাহর সাহায্য ও তার হুকুমে ঈমানদারদের অল্প সংখ্যক দল শত্রæদের অধিক সংখ্যক সৈন্যদের পরাজিত করে দিলো।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৫১)।

দুনিয়াতে সরাসরি সাহায্যের পাশাপাশি আখেরাতেও বিশাল পুরস্কারের ঘোষণা আল কোরআনে করা হয়েছে। যেমনÑ সূরা আহযাবের যেখানে মুসলমান পুরুষ ও মুসলমান মহিলাদের তাদের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্যের দরুন ক্ষমা ও রহমতের সুসংবাদ শোনানো হয়েছে, সেখানেও ধৈর্যগুণের উল্লেখ বিশেষভাবে করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘আর ধৈর্যধারণকারী পুরুষ ও ধৈর্যধারণকারী মহিলা।’ (সূরা আহযাব : আয়াত ৩৫)।

এমনি ধরনের তাদের আরো কতিপয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বর্ণনার পর বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ তায়ালা তার এসব বান্দার জন্য মাগফেরাত (তথা ক্ষমার ফায়সালা করেছেন) এবং মহা প্রতিদান নির্ধারণ করেছেন।’ (সূরা আহযাব : আয়াত ৩৫)।

এই কয়েকটি আয়াতের দ্বারাই প্রতীয়মান হয়, কোরআনী দাওয়াত ও শিক্ষার মাঝে সবর তথা ধৈর্যের মর্যাদা কতখানি এবং ধৈর্যশীলদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে কি ধরনের শুভ পরিণামের জামানত স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন ৩০ আগস্ট, ২০১৯, ২:৩৮ এএম says : 1
মাওলানা মোহাম্মাদ জাকির হোসেন খতিব, তেজগাঁও তাসাউফ জামে মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা দুনিয়ার এ জীবন আমাদের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা মাত্র। জীবনের বাঁকে বাঁকে পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়া এবং পরীক্ষা দেয়া জীবন-মৃত্যু সৃষ্টির একমাত্র উদ্দেশ্য।
Total Reply(0)
Nasir Tushar ৩০ আগস্ট, ২০১৯, ২:৩৯ এএম says : 0
আল্লাহ বলেন, ‘তিনি বড়ই মহান ও শ্রেষ্ঠ, যাঁর হাতে রয়েছে (সৃষ্টিলোকের) রাজত্ব। আর তিনি প্রতিটি জিনিসের ওপর শক্তিমান। তিনি জীবন ও মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমাদের পরীক্ষা করতে পারেন যে, তোমাদের মধ্যে আমলের দিক দিয়ে কে বেশি ভালো। তিনি মহা শক্তিশালী ও ক্ষমাশীল।’ (সূরা মুলক : ১-২)।
Total Reply(0)
মহান আল্লাহ ৩০ আগস্ট, ২০১৯, ২:৩৯ এএম says : 0
বিভিন্নভাবে আমাদের পরীক্ষা করে থাকেন। কখনও সুখ দিয়ে, কখনও দুঃখ দিয়ে। আল্লাহ বলেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব ভয় ও ক্ষুধা দিয়ে, ধনসম্পদ ও শস্যের অভাব দিয়ে, আর জীবনের ক্ষতি দিয়ে। সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের।’ (সূরা বাকারা : ১৫৫)।
Total Reply(0)
Mayen Uddin ৩০ আগস্ট, ২০১৯, ২:৪০ এএম says : 0
সবর তথা ধৈর্য অবলম্বনের ফজিলত অনেক। ইমাম জায়নুল আবেদীন (রহ.) ধৈর্যশীলদের মর্যাদা ও ফজিলত সম্পর্কে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। ইমাম ইবনে কাসির তার তাফসিরে হাদিসটি উল্লেখ করেছেন। ‘কেয়ামতের দিন একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করবেন, ধৈর্যশীলরা কোথায়! আপনারা বিনা হিসাবে জান্নাতে চলে যান। ঘোষণা শুনে একদল লোক বেহেশতের পথে রওনা করবে। ফেরেশতারা বলবে, আপনারা কারা? কোথায় যাচ্ছেন? তারা বলবে, আমরা ধৈর্যশীল বান্দা; জান্নাতে যাচ্ছি। ফেরেশতারা বলবে, এখনও তো হিসাব-নিকাশ হয়নি। ধৈর্যশীল বান্দারা বলবে, আমাদের হিসাবের আগেই জান্নাতে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
Total Reply(0)
Bangla Desh ৩০ আগস্ট, ২০১৯, ২:৪০ এএম says : 0
ধৈর্যের প্রতিদান সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, ‘আমি যখন মোমিন বান্দার কোনো আপনজনকে মৃত্যু দিই আর সে ধৈর্য অবলম্বন করে, তখন আমার কাছে তার একমাত্র প্রতিদান হলো জান্নাত।’ (বোখারি)।
Total Reply(0)
Umme Saodia Zinuk ৩০ আগস্ট, ২০১৯, ২:৪০ এএম says : 0
যে গুণাবলী মানুষের জীবনকে সফল ও সার্থক করে তোলে তন্মধ্যে সহিষ্ণুতা বা ধৈর্যশীলতা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই বিশেষ গুণটির সামনে অন্যায়-অনাচার মাথানিচু করে। ফলে সহিষ্ণু ব্যক্তি স্বীয় গৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়।
Total Reply(0)
jaynul ৩০ আগস্ট, ২০১৯, ৭:২৯ এএম says : 0
sundor lekha
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন