ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ধর্মভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করায় বিতর্কের ঝড় শুরু হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বাংলাদেশের মতো একটি ধর্মপ্রাণ মুসলিম দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠে এই ধরনের ‘ধর্মবিদ্বেষী’ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নেটিজেনরা। এ নিয়ে সর্ব মহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। ফেইসবুকে নিন্দা জানিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন ধর্মপ্রাণ মানুষেরা।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে ক্যাম্পাসে ধর্মভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ঢাকসু)। এদিন ডাকসুর তৃতীয় কার্যনির্বাহী সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভা শেষে প্রেস ব্রিফিং করে গণমাধ্যম কর্মীদের এই তথ্য নিশ্চিত করেন ডাকসুর সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড মো আখতারুজ্জামান। এরপর থেকেই সর্বত্র শুরু হয় নিন্দা ও সমালোচনার ঝড়।
ডাকসুর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে শাহেদ আহমেদ লিখেছেন, ‘‘ধর্মহীন রাজনীতি শোষণের হাতিয়ার। কাজেই ধর্মভিত্তিক রাজনীতি থাকবে ধর্মহীন রাজনীতি চলবে না। বাংলার জমিনে মুসলমানদের জমিনে ধর্মহীন রাজনীতি চলতে দেওয়া হবে না।’’
শফি উল্লাহ শফি লিখেছেন, ‘‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এখন আর সেই মান নেই। তারা এখন আর কোন কাজ খুঁজে পাচ্ছেনা। তাই আর কী বিষয়ে সিন্দান্ত নিবে?’’
মো. ইয়ামিন রহমান লিখেছেন, ‘‘ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বিশ্বের সকল দেশেই আছে বাংলাদেশেও থাকবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে তা থেকে যেন উগ্রবাদের সৃষ্টি না হয়।’’
ক্ষোভ প্রকাশ করে রাসেল আহমেদ লিখেছেন, ‘‘ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বাদ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাসিনো তৈরি করা হোক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদনের বড় অভাব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাসিনো তৈরি করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা একটু বিনোদনের সুযোগ পাবে।’’
ফেজলুল হক লিখেছেন, ‘‘বাংলাদেশের মানুষ ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী। এদেশের মানুষ কোনো অপশক্তিকে বরদাশত করবে না। যত খেলাই হোক শেষ পর্যন্ত ইসলামই বিজয়ী হবে। ইনশাআল্লাহ।’’
‘‘একেই বলে গণতন্ত্র! স্বাধীনতা! সমান অধিকার! কোনো কিছু গায়ের জোরে একতরফাভাবে নিষিদ্ধ করা সমাধান নয়’’ মন্তব্য জমাদ্দার মিজানের।
সভা শেষে ডাকসুর সভাপতি অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ ও চেতনার জায়গা। সুতরাং এখানে কোনো ধর্মেরই ধর্মভিত্তিক, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চর্চার সুযোগ নেই। তাদের কোনো ধরনের তৎপরতা ঐতিহ্যগতভাবে এখানে নেই। সেটি যেন কোনো ক্রমেই এদের অনুপ্রবেশ বা কর্মকাণ্ড পরিচালিত না হয় সেবিষয়ে যেন সকলে যত্নশীল থাকে সেজন্য ডাকসুর তরফ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে।'
ভিসির বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে মোঃ হাবিব উল্লাহ্ লিখেছেন, ‘‘সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের এই দেশে, ধর্মীয় রাজনীতির নামে, ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধের এখতিয়ার কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের নেই। ডাকসুকে অচিরেই এই ভুল সিদ্ধান্তের মাসুল দিতে হবে, ইনশাআল্লাহ।’’
হারুন রশিদ মন্তব্য করেছেন, ‘‘কোনো লাভ হবে না। রাজনীতি কখনও নিষিদ্ধ হয় না! আর নিষিদ্ধ জিনিসের প্রচারণা বেশী।’’
খলিলুর রহমান ইয়াসিন লিখেছেন, ‘‘ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে বাম কিংবা সেকুলার রাজনীতিও নিষিদ্ধ করতে হবে। সর্বোপরি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।’’
রিয়াজ উদ্দীন লিখেছেন, ‘‘ধর্মীয় সংগঠন থাকলে দুর্নীতি করতে একটু সমস্যা হয়। ধর্মীয় সংগঠন বন্ধ করলে কেউ আর প্রতিবাদও করবে না, কি মজা শুধু খাওয়া আর খাওয়া।’’
মোঃ শফিকুল ইসলাম লিখেছেন, ‘‘ বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ১৩শতের ভিতরেও যেতে পারে না, ধর্ম নিষিদ্ধের ব্যাপারে সবার উপরে। ধর্ম যার ভিতরে নাই সে মানুষ নয় শয়তানের বংশধর।’’
ফারিয়া আনাম লিখেছেন, ‘‘ক্যাসিনোভিত্তিক রাজনীতি, চাঁদাবাজী, টেন্ডার, সন্ত্রাস, নারীবাজ, কিংবা শোভন রব্বানির চরিত্র ভিত্তিক রাজনীতিতে কোনো আপত্তি নেই! চুলকানি শুধু ইসলাম নিয়ে? তথাপি ইসলাম যে সুদ ঘুষ, চাঁদাবাজি নারীবাজ বিরোধী এজন্য ওরা একদমই পছন্দ করে না ইসলামী রাজনীতি। কাজেই ব্যাপারটা খুব পরিষ্কার নয় কি?’’
ফয়সাল আহমেদ লিখেছেন, ‘‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-ভিপি সব জায়গায় নাক গলাবেন না। বাংলাদেশ একটা মুসলিম দেশ সে দেশে ৯২ পার্সেন্ট মুসলিম বাস করে সে দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি থাকবেই।’’
‘‘ধর্ম নিয়েই তো স্বচ্ছ রাজনীতি করা যায়। কারণ ধর্মের রাজনীতিতে কোনো ভন্ডামী, কোনো রকমের দুর্নীতি, বেহায়াপনা, অসততা, নোঙরামি, খুন, ধর্ষণ- এসবের স্থান নেই। তাই বর্তমান সরকার যে নোঙরামি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত, তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতেই ধর্মকে আলাদা করা ছাড়া বিকল্প কোনো কিছুই চিন্তা করতে পারবে না’’ লিখেছেন বেলায়েত হোসাইন।
মোহাম্মাদ সেলিম লিখেছেন, ‘‘শুধু ইসলাম নয় সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হউক। ইসলাম বাদ দিলে উলঙ্গ করা যাবে তাই ইসলাম নিয়ে যত ভয় নাস্তিকদের।’’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন