শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

মেঘনায় বিলীন বিস্তীর্ণ জনপদ

আমানত উল্যাহ, রামগতি (লক্ষ্মীপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে মেঘনা নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। উজানের পানির চাপে মেঘনার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গত কয়েকদিন ধরে চলছে ভাঙনের এ ভয়াবহতা। ভাঙনের মুখে পড়ে চর আলেকজান্ডার এলাকার চরসেভেজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার পথে। এতে করে বিদ্যালয়ের প্রায় দুই শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। খবর পেয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

সরেজিমনে জানা যায়, দীর্ঘ ২ যুগ ধরে উপজেলার বড়খেরী, চরআলগী ও আলেকজান্ডার ইউনিয়ন এলাকায় মেঘনার ভাঙনের তা-বলীলা চলছে। মেঘনা গর্ভে তলিয়ে গেছে বাড়িঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি, বেসরকারি স্থাপনা ও ফসলী জমি। চর সেভেজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পুনরায় লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে সদ্য নির্মিত নতুন ভবনটি নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার পথে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, বিদ্যালয়টি ওই এলাকার একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ভাঙনের মুখে পড়ায় বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়েছে বলে তিনি জানান।

স্থানীয় আ.লীগ নেতা সুমন হাওলাদার জানান, অত্র এলাকা এবং বিদ্যালয়টি রক্ষায় স্থানীয়দের অর্থায়নে তারা প্রথমে জংলা বাঁধ দেন। পরবর্তিতে স্থানীয় এমপির প্রচেষ্টায় সেখানে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু ভাঙনের তীব্রতার কারণে ভবনগুলো রক্ষা করা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন তারা।

এ পর্যন্ত নদী ভাঙনের শিকার হয়ে ১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সড়ক ও জনপথের আঞ্চলিক অফিসসহ অসংখ্য সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, নদীতে ভেঙে অন্যত্র স্থানান্তরিত বিদ্যালয়গুলো হলো, উত্তর চর আবদুল্যাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ আলেকজান্ডার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আনোয়ার উল্যাহ সিকদার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম আলেকজান্ডার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিশ^গ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর সেভেজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য পূর্ব আলেকজান্ডার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দ: পশ্চিম আলেকজান্ডার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য আলেকজান্ডার-১ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য আলেকজান্ডার-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লম্ভাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রঘুনাথপুর পল্লিমঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ রঘুনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রঘুনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ চর আলগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পশ্চিম চর আলগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
অন্যদিকে মেঘনার ভাঙন প্রতিরোধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৯ ইসিবি আলেকজান্ডার উপজেলা পরিষদের সামনের এলাকার সাড়ে তিন কিলোমিটার ব্লক বাঁধ নির্মাণ করেছে। যার ফলে এ এলাকা নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পায়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আব্দুল মোমিন জানান, কয়েকদিন আগে পাউবির সচিব মহোদয় ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। আশা রাখি অল্প সময়ের মধ্যে বাজেট বরাদ্দ পেয়ে পূর্নোদ্দমে কাজ শুরু হবে।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ জানান, অস্বাভাবিক ডুবোচরের কারণে নদীর গভীরতা তীরের কাছাকাছি এসে পড়ে। যে কারণে ভাঙন ভয়াবহ রূপ নেয়ায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং করেও প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। তবে আপদকালীর প্রকল্পের আওতায় ভাঙন প্রতিরোধে তাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
সচেতন মহলের দাবি রামগতির বিস্তীর্ণ এলাকা এখনো অরক্ষিত। সেই এলাকাগুলোকে রক্ষার জন্য সেনাবাহিনীর অধীনে কাজের নিমিত্তে দ্রুত বাজেট বরাদ্দের দাবি জানায়।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন