সউদী আরবে নির্যাতনের শিকার পঞ্চগড়ের সেই সুমি আক্তার গতকাল সকালে এয়ার এরাবিয়ার একটি ফ্লাইট যোগে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছেছে। তাকে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে দেয়া হয়নি। ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ডের পরিচালক ও উপসচিব মো. জহিরুল ইসলাম বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে তাকে গ্রহণ করেন।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, সুমির আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাকে ভিআইপি টার্মিনাল দিয়ে বের করে নিয়ে আসা হয়। এরপর কল্যাণ বোর্ডের নিজস্ব গাড়িতে করে সুমিকে তার বাড়ি পঞ্চগড়ের উদ্দেশে পাঠানো হয়। স্বামী নুরুল ইসলাম বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকলেও তার কাছে সুমিকে হস্তান্তর করা হয়নি। সুমির সঙ্গে বোর্ডের একজন পিয়ন এবং কল্যাণ ডেস্কের একজন কর্মকর্তা রয়েছেন। তাকে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ওয়েজ আর্নার্স বোর্ডের পরিচালক জহিরুল ইসলাম বলেন, সুমিকে আমরা বোর্ডের গাড়ি দিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে বাড়ির উদ্দেশে পাঠিয়েছি। তার সঙ্গে আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন।
বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে না দিয়ে সুমিকে অন্যপথ দিয়ে কেন বের করা হলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে বিষয়টা এমন নয়। সুমি দেশে ফেরার আগে আমাদেরকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে যে সে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এখন এর পেছনে কারণ কী আমি ঠিক জানি না। আমি সকালে সুমির সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি ঠিক মতো কথাও বলতে পারছেন না। তাকে ভীষণ অসুস্থ মনে হয়েছে আমার কাছে। তাই আমরা তাকে আমাদের গাড়িতে তুলে বাড়ির পথে রওনা করে দিয়েছি।
উল্লেখ্য, গত ৩০ মে রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স রুপাসী বাংলা ওভারসিজের মাধ্যমে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে সউদী আরবে যান। সেখানে নির্যাতনের শিকার হলে সুমি দেশে ফেরার আকুতি জানিয়ে ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। ওই ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর তার স্বামী নুরুল ইসলাম রাজধানীর পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ভিডিও-তে সুমি বলেন, ‘ওরা আমারে মাইরা ফালাইবো, আমারে দেশে ফিরাইয়া নিয়া যান। আমি আমার সন্তান ও পরিবারের কাছে ফিরতে চাই। আমাকে আমার পরিবারের কাছে নিয়ে যান। আর কিছু দিন থাকলে আমি মরে যাবো।
থানায় জিডি করার পর ২২ অক্টোবর জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন নুরুল ইসলাম। কোনও উপায়ান্তর না পেয়ে সুমিকে নিরাপদে দেশে ফেরত আনতে ২৯ অক্টোবর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বরাবর লিখিত অভিযোগ পেশ করা হয়। পরে জেদ্দা কনস্যুলেটের হস্তক্ষেপে সুমিকে নিয়োগ কর্তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে সে দেশের পুলিশ। শুরুতে সুমির নিয়োগ কর্তার দাবিকৃত ২২ হাজার সউদী রিয়াল পরিশোধ না করা পর্যন্ত তাকে ফাইনাল এক্সিট- অর্থাৎ দেশে ফিরতে দেয়া হবে না বলে জানালেও পরে নাজরান শহরের শ্রম আদালতে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন