বরিশাল নদী বন্দরে ডুবে যাওয়া ১২শ টন সিমেন্ট ক্লিঙ্কার বোঝাই নৌযান ‘এমভি হাজী মো. দুদু মিয়া (রঃ)-১’ উদ্ধার কাজ সোমবার পর্যন্ত শুরু হয়নি। ফলে বরিশাল নদী বন্দরসহ নৌপথে ঝুঁকি ক্রমশঃ বাড়ছে। বিআইডব্লিউটিএ নৌযানটি অপসারণে একমাস সময় বেঁধে দিয়েছে। পাশাপাশি ডুবে যাওয়া নৌযান এড়িয়ে নিরাপদ চলাচল নির্দেশের জন্য সেখানে স্পেরিকেল বয়াসহ লাইটেড বয়াও স্থাপন করা হয়েছে।
শনিবার মধ্যরাতে নদী বন্দরের মূল বেসিনের ঠিক বিপরিতে যাত্রীবোঝাই নৌযানের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে সিমেন্ট ক্লিঙ্কারবাহি মাঝারি ধরনের পণ্যবাহী নৌযান ডুবে গেলেও কোন প্রানহানি ঘটেনি। কিন্তু মারাত্মক ঝুঁকির কবলে রয়েছে বরিশাল নদী বন্দর। এ বন্দরে নৌযান ভেড়া ও ছাড়ার চেয়েও ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বন্দরের ভবিষ্যত নিরাপদ পরিচালন। দূর্ঘটনার পর বরগুনা থেকে ঢাকাগামি যাত্রীবাহী নৌযান ‘এমভি শাহরুখ-২’এর কাপ্তেন ও দায়িত্বশীল কর্মিরা গা ঢাকা দিয়েছে। নৌযানটি আটক করেছে নৌ পুলিশ। দূর্ঘটনার কারন অনুসন্ধানে বিআইডব্লিউটিএ ৫ সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করেছে। কর্তৃপক্ষের নৌ নিরাপত্তা ও নিরাপদ পরিচালন পরিদপ্তরের যুগ্ম পরিচালক সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি মঙ্গলবার বরিশালে পৌছে সরজমিনে দূর্ঘটনার কারন অনুসন্ধান ও সবকিছু খতিয়ে দেখবেন বলে জানা গেছে।
তবে দূর্ঘটনায় ডুবে যাওয়া পণ্যবাহী নৌযানের ধারণক্ষমতা ৫২২ টন হলেও তা দ্বিগুনেরও বেশি ১২শ টন ক্লিঙ্কার নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে বরিশালের এ্যাংকর সিমেন্ট ফ্যাক্টরীতে আসছিল। ১শ টনের অধিক সব ধরনের পণ্যবাহি নৌযান বিআইডব্লিউটিএ’র পাইলট নিয়ে চলাচলের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা ছিলনা। উপরন্তু বরিশাল বন্দর বেসিনের বিপরিতে কীর্তণখোলা নদীর বাঁক ঘোরার সময় পণ্যবাহি নৌযানের সার্চলাইট বন্ধ ছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে। আর ৪৫ ডিগ্রীতে নৌযানটি বায়ে মোড় ঘুরলেও তার গতি ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। যাত্রীবাহি নৌযানটিরও সার্চলাইট বন্ধ থাকার অভিযোগ থাকলেও তার বিপুল সংখ্যক বাতি বিপরিত দিক থেকে আসা পণ্যবাহি নৌযানটির দৃষ্টিগোচর হবার কথা। পাশাপাশি যাত্রীবাহি নৌযানের গতিও ছিল বেশি। পণ্যবাহি নৌযানের সার্চলাইট বন্ধ থাকলেও তার দু’পাশের লাল ও সবুজ সিগন্যাল লাইট জ¦লছিল বলে জানা গেছে। উপরন্তু চাঁদের ১৬তম রাতের জোসনায় দুটি নৌযানই কাপ্তেনদের দৃষ্টিগোচর হবার কথা বলে দাবি দায়িত্বশীল সূত্রের।
শনিবার রাত সাড়ে ১০টার পর চট্টগ্রাম থেকে কার্গো দুর্ঘটনাকবলিত স্থান অতিক্রমকালে বিপরীত দিক থেকে আসা যাত্রীবাহি ‘এমভি শাহরুখ-২’ লঞ্চের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে দুটি নৌযানের সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। কার্গোর তলা ফেটে কয়েক মিনিটের মধ্যে ডুবে যায়। প্রায় ৪শ যাত্রী বোঝাই শাহরুখ-২’এর সামনের অংশের তলা ফেটে যায়। চালক দ্রুত লঞ্চটি চরকাউয়া পয়েন্টে নদী কিনারায় তুলে দিয়ে যাত্রীদের নিরাপদে নামিয়ে দেন। কোম্পানির অপর নৌযান ‘এমভি পূবালী-১’ দূর্ঘটনা কবলিত লঞ্চের যাত্রীদের নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
দুর্ঘটনার জন্য দু’টি নৌযানের মাস্টার পরস্পরকে দায়ী করে রং সাইড দিয়ে চলায় দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করছে। দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজ পরিদর্শনকালে সংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান এম. মাহাবুবুল ইসলাম-বিএন বলেন, দুর্ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করে ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তবে বিআইডব্লিউটিএ’র সবগুলো উদ্ধারযানের সম্মিলিত ক্ষমতাও এতবড় নৌযান উদ্ধারের ক্ষমতা না থাকায় মালিক পক্ষকে এক মাসের মধ্যে কার্গো অপসারনের জন্য বলা হয়েছে। অন্যথায় সরকার কার্গো অধিগ্রহন করে পরবর্তি ব্যবস্থা গ্রহন করবে বলেও জানান তিনি। তবে দূর্ঘটনার কারন তদন্ত ও বরিশালÑচাঁদপুরÑঢাকা ও বরিশালÑইলিশাÑচট্টগ্রাম নৌপথে যে বহুসংখ্যক দূর্ঘটনা কবলিত নৌযান ডুবে আছে, তা অপসারণে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনেরও তাগিদ দিয়েছেন নৌযানের চালক ও মালিক পক্ষ।
এদিকে, কীর্তণখোলা নদীতে জাহাজ চলাচলে যেন কোনো সমস্যা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের একটি টহলদল সার্বক্ষণিক টহলে নিয়োজিত রয়েছে। কোস্ট গার্ডের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন