ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়কটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। খানাখন্দে ভরা সড়কে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের। নগরীর চাষাড়া থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড পর্যন্ত ৮ কিলোমিটারের বেশিরভাগ জায়গায় একপাশ জুড়ে গর্ত, আরেক পাশ উঁচু। কয়েকদিন আগে উঁচু জায়গা কেটে সমান করার চেষ্টা করে কর্তৃপক্ষ, আর ইটের খোয়া দিয়ে ভরাট করা হয় গর্ত। বৃষ্টি হলেই সড়কের পাশে পানি জমে যায়। প্রায়ই ঘটে ছোট বড় দুর্ঘটনা। ব্যস্ত সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ না নেয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি ক্ষোভ জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও যানবাহন চালকরা।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি স্কুলের সামনের রাস্তায় দীর্ঘদিন ধরে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ময়লা পানি দিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করার কারণে নানা চর্ম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। একটু বৃষ্টি হলেই পানি ও নর্দমার ময়লা মিলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে চরম দুর্ভোগে ফেলছে নারায়ণগঞ্জের উত্তর চাষাড়া, চানমারী এলাকার রাবেয়া হোসেন উচ্চ বিদ্যালয় ও ইসদাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের।
ভুক্তভোগী মাতুয়াইল শিশু মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. নাসির উদ্দিন বলেন, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার ছাড়া এভাবেই পড়ে আছে সড়কটি।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার রাফেজা খাতুন বলেন, শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফয়সাল মোহাম্মদ সাগর জানান, সড়কটি সিটি করপোরেশনের হলে নির্মাণকাজ বাকি থাকত না। এটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের সড়ক।
তবে এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম জানান, ঢাকা- নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের চাষাড়া থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার রাস্তা বেশ কয়েকবার মেরামত করা হয়েছে এরপরও যদি কোথাও কোনো বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয় তা সরেজমিন দেখে মেরামতের ব্যবস্থা করা হবে। সড়কের বেহাল দশার কারণে প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তা। দিনের চাইতে রাতে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে বলেও জানান তিনি।
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনপুর থেকে মদনগঞ্জ সড়কটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ব্যস্ততম এ সড়কের পাশে গড়ে উঠেছে ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ ও হাসপাতাল। তবে ব্যস্ততম এ সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী। ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে চলতে গিয়ে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। সব মিলিয়ে বন্দরের ১৫ লাখ মানুষ চরম ভোগান্তিতে রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘনবসতিপূর্ণ এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন স্কুল-কলেজের হাজারো শিক্ষার্থীসহ সিমেন্ট কোম্পানির গাড়ি ও শত শত ট্রাক চলছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে এ রাস্তার সংযোগ থাকায় অন্যান্য রাস্তার তুলনায় এ রাস্তায় ভারী যানবাহন চলে। রাস্তা বেহাল অবস্থা থাকার কারণে পণ্যবাহী ট্রাক সময় মতো গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারে না। সেই সঙ্গে অফিসগামী কর্মব্যস্ত মানুষকে প্রতিদিনই পড়তে হয় তীব্র যানজটে। দীর্ঘ আট বছরে এ রাস্তায় মেরামতের কাজ হলেও তা সঠিকভাবে না করায় এক মাসের মধ্যেই আবারও গর্তের সৃষ্টি হয়ে যায় ও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এ এলাকায় এখন ১৪-১৫ লাখ লোকের বাস। কখনো রিকশা উল্টে, কখনো ভ্যান উল্টে আহত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
স্থানীয় মিষ্টি দোকানি কবির মিয়া ও সিমেন্ট দোকানি নূর মোহাম্মদ জানান, সড়কটি মেরামতে প্রায় সময় গর্তে কিছু লোড়া ও বালু ফেলে যায় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বৃষ্টি ও পণ্যবাহী গাড়ি চলার সময় সেই লোড়া ও বালুর অস্তিত্ত আর খোঁজে পাওয়া যায় না। মদনপুর ডিগ্রি কলেজের ছাত্র সিফাত জানান, গত আড়াই বছরে ২০০-এর বেশি দুর্ঘটনা দেখেছি এ সড়কে।
এ রাস্তায় চলা ট্রাক চালক আবদুর রহিম বলেন, খানাখন্দের কারণে আমাদের প্রতিনিয়ত এ রাস্তায় যানজটে পড়ে থাকতে হয়। সময় মতো গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারি না।
এ বিষয়ে ২৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান বাবুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রাস্তা ও গাইড ওয়াল ভেঙে যাবার বিষয়টি স্থানীয়রা আমাকে জানিয়েছেন এবং সরেজমিনে বিষয়টি দেখেছি। এ বিষয়ে আমি সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেছি এবং আবারও গুরুত্বসহকারে অবহিত করবো যাতে তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে রাস্তা ও গাইড ওয়াল মেরামতের যথাযথ ব্যবস্তা নেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন