বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শিক্ষাঙ্গন

কুবি প্রশাসকে পরিবেশ অধিদপ্তরের কারণ দর্শানোর নোটিশ!

কুবি থেকে মেহেদী হাসান মুরাদ | প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ৫:৪১ পিএম

ছাড়পত্র না নিয়ে পাহাড় কর্তন করায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়(কুবি) প্রশাসনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরের কুমিল্লা কার্যালয়। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘন করে পাহাড় কাটায় পরিবেশ বিপন্নের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়টি হারাচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। আসন্ন সমাবর্তন উপলক্ষে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্যান্ডেল তৈরির জন্য পাহাড় কাটছে প্রশাসন।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের উত্তর দিকের পাহাড় কেটে এর মাটি ট্রাক্টরে করে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। পাহাড় কাটা মাটি দিয়ে কেন্দ্রীয় মাঠের বিভিন্ন জায়গা সমান করা হয়েছে। এর আগেও পাহাড়টি কাটা হয়েছিল। বর্তমানে পাহাড়ের নিচের অংশ বেশি কাটার ফলে যেকোনও সময় পাহাড়টি ধসে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। আগামী ২৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে কেন্দ্রীয় মাঠে। সমাবর্তনকে সামনে রেখে প্যান্ডেল প্রস্তুতের অংশ হিসেবে মাঠের উত্তর পাশের এ পাহাড় কাটা হচ্ছে বলে জানা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, লালমাই পাহাড়ের পাদদেশ ঘিরে ক্যাম্পাসটির সৌন্দর্য্যই হচ্ছে লাল মাটির পাহাড়। কিন্তু প্রশাসনের একের পর এক পাহাড়-টিলা কাটায় ক্ষুব্ধ এবং বিস্মিত শিক্ষার্থীরা। লোক প্রশাসন বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষেরর শিক্ষার্থী ওবায়দুল্লাহ অনিক বলেন, ‘আমরা আমাদের পাহাড়ি ক্যাম্পাস নিয়ে গর্ব করি। প্রশাসন অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কেটে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। লাল পাহাড় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য। এগুলোকে রক্ষা করা প্রশাসনের দায়িত্ব।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবশ্যই উচিত বাংলাদেশের আইন মেনে এবং পরিবেশের কথা চিন্তা করে কোন কাজ করা। অপরিকল্পিতভাবে পরিবেশ অধিদপ্তরের আইন না মেনে পাহাড় কর্তন অবশ্যই একটি বেআইনি কাজ।’

এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছোট-বড় টিলা ও পাহাড় কেটে সাবাড় করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ। সেসময়ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কোন ছাড়পত্র নেয়নি। কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের পশ্চিম পাশের টিলার অনেকটা অংশ স্কেলেভেটরের সাহায্যে কেটে ফেলা হয়। সেই মাটি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে নির্মাণাধীন সড়কদ্বীপ ও ডরমেটরির নিচু স্থান ভরাট করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে পাহাড় কেটে সেই মাটি বিক্রি করারও অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে।

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের (সংশোধন) ২০১০-এর ৬-এর ‘খ’ ধারায় বলা হয়েছে ‘কোনো পাহাড় বা টিলা কর্তন বা মোচন করা যাইবে না, তবে অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহণক্রমে পাহাড় কর্তন করা যাইবে।’ তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাহাড় কাটার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কোন ধরনের ছাড়পত্র নেয়নি বলে পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়।

পাহাড় কর্তনের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ হতে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লা কার্যালয়ের-পরিচালক শওকত আরা কলি বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে পাহাড় কাটার বিষয়ে কোন অনুমতি নেয়নি। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আমরা কেন এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবেনা এ মর্মে একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি এবং তাদের সাথে শুনানী করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিবেদন দিয়েছি। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. আবু তাহের ইনকিলাবকে বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরে আমাদের শুনানি ছিলো আমরা শুনানিতে অংশগ্রহণ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ হতে পাহাড়-টিলা সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন