বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

কারখানার বর্জ্যে হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য

সেলিম আহমেদ, সাভার : | প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম

ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় একটি গার্মেন্টস কারখানার কেমিকেল মিশ্রিত বর্জ্যরে পানি সরাসরি আবাদি জমিতে ফেলায় বোরো মৌসুমে ব্যাপক লোকসানের আশঙ্কা করছেন কয়েকশ’ কৃষক। পরিবেশ আইন অমান্য করে কেমিকেল মিশ্রিত পানি ফসলি জমিতে ফেলায় মাটির উর্বরতা হারিয়ে নষ্ট হচ্ছে ফসল। একই সাথে মারাত্মক দূষণে খাল-বিলের মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণি মরে যাওয়ায় হুমকিতে পড়ছে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ।
স্থানীয় কৃষক ও এলাকাবাসী বারবার প্রতিকার চাইলেও উপজেলা কৃষি বিভাগসহ স্থানীয় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় টনক নড়েনি কারখানা কর্তৃপক্ষের। আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের গোহাইলবাড়ি দিঘীরপাড় এলাকায় জিটিএ স্পোর্টস লিমিটেড নামে একটি ডায়িং কারখানার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় কৃষক ও এলাকাবাসী।
স্থানীয় কৃষক মোনতাজ মন্ডল অভিযোগ করে বলেন, এ বছর বোরো মৌসুমে দেড় বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন তিনি। কিন্তু ওই কারখানার ডায়িংয়ের ময়লাযুক্ত পানি সরাসরি ক্ষেতে প্রবেশ করায় তাদের ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জমিতে কেমিকেল বর্জ্যরে অধিক পরিমাণ কাঁদা জমে মাটির উর্বরতা হারিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, শুরুতে ধানের গোছা মোটা ও সবুজ দেখালেও সামান্য বৃষ্টিতেই ধান ঝরে যায়। পাশাপাশি ক্ষেতে প্রচুর পরিমাণে পোকামাকড়ের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। উপজেলা কৃষি অফিস ও বাজার থেকে কেনা কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোন ফল মিলছে না। এছাড়াও দুর্গন্ধযুক্ত কাঁদামাটির আধিক্যের কারণে গবাদি পশু দিয়ে ক্ষেতে হালচাষসহ স্বাভাবিক কাজ করা তাদের জন্য দুরহ হয়ে পড়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ, উপজেলা কৃষি অফিস ও প্রভাবশালীদের কাছে এ বিষয়ে বলেও কোন প্রতিকার পাননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
পাঁচ বিঘা জমিতে বোর ধান চাষ করে বিপাকে পড়া কৃষক আমানউল্লাহ আমান বলেন, জিটিএ কারখানা কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বিষাক্ত কেমিকেল মিশ্রিত পানি ছেড়ে দেয়ায় তাদের কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে। গত ৮-১০ বছর পূর্বেও বোরো মৌসুমে তারা বিঘা প্রতি ৩০-৪০ মণ ধান পেতেন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বিঘা প্রতি তারা মাত্র ৭-৮ মণ করে ধান পাচ্ছেন। লোকসানের কারণে অনেকেই চাষাবাদ ছেড়ে দিয়ে দিনমজুরের কাজ করছেন। কিন্তু অনেকেই আবার অন্য পেশার কাজ না জানায় ক্ষতির মুখে বাধ্য হয়েই চাষাবাদ করছেন। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে দেখা করতে গেলে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করতে দেয়নি দায়িত্বরত কর্মকর্তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল খালেক ও সুলতান মিয়া জানান, এক সময় এই খালে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষ এখানে মাছ ধরতো। কিন্তু কারখানার বিষাক্ত কেমিকেল মিশ্রিত পানির কারণে মাছ তো দূরের কথা খালে এখন কোন জলজ প্রাণিও চোখে পড়ে না।
জিটিএ স্পোর্টস লিমিটেড কারখানার এইচআর ম্যানেজার মতিউর রহমান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে তারা কারখানার কেমিকেল মিশ্রিত বর্জ্য ইটিপির মাধ্যমে শোধন করেই নির্গত করছেন বলে দাবি করেন। যদিও কারখানার পেছনের অংশে বিরাট একটি পুকুরে জমিয়ে রাখা দুর্গন্ধযুক্ত কালো পানির ব্যাপারে কোন সদোত্তর দিতে পারেননি তিনি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শফি মোহাম্মদ তারেক বলেন, কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ফসলি জমি থেকে খাদ্যচক্রের বিষক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগের সৃষ্টি করে। তাই সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী, কেমিকেল মিশ্রিত বর্জ্য ইটিপিতে শোধনের পরই যাতে শিল্প কারখানাগুলো তা পরিবেশে ছারে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অধিদফতরকে কার্যকরী ভ‚মিকা রাখতে হবে। এমনকি যেসব কারখানা তা অমান্য করে পরিবেশ দূষণ করবে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সাভার উপজেলা কৃষি অফিসার নাজিয়াত আহমেদ শিমুলিয়া ইউনিয়নের ওই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে থেকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। অপরদিকে গার্মেন্টস কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে পরিবেশ অধিদফতরের বিধি অনুযায়ী এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আশুলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন