চীনে চার বছরের প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফিরেই মাকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী থানা শহরে অবস্থিত একটি ক্লিনিকে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলাম। ঢাকার একটি সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার সাহেব সপ্তাহে ছুটির দুইদিন নিয়মিত ওই ক্লিনিকে রোগী দেখেন। নিজ এলাকার মানুষদের সুবিধার্থে ডাক্তার সাহেবের এই মহতী উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয় বলা যায়। এলাকাবাসী ৫০০ টাকা ভিজিট দিয়ে সহজেই নামকরা একজন ডাক্তারের সেবা পাচ্ছেন। এলাকায় ওই ডাক্তার সাহেবের বেশ সুনাম আছে। বাড়ি ফেরার পর মায়ের শরীর খুবই খারাপ হওয়ায় আমি আগে পরে কিছু না ভেবে খোঁজ-খবর নিয়ে মাকে ওই ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। বিকালের দিকে ক্লিনিকে হাজির হয়ে দেখলাম, ডাক্তারের ওখানে রোগীর উপচে পড়া ভিড়। প্রথম সাক্ষাতে বুঝলাম, ডাক্তার সাহেব খুবই আন্তরিক। রোগীর সমস্যা মনোযোগ দিয়ে শুনে তারপরেই টেস্ট বা ওষুধ প্রেস্ক্রাইব করেন। বিষয়টি আমাকে খুবই বিমোহিত করল। কেননা, বর্তমান সময়ে এই ধরনের ডাক্তার খুঁজে পাওয়া মুশকিল। যাইহোক, মাকে দেখানোর পর ডাক্তার সাহেব খুবই সামান্য কিছু টেস্ট দিলেন। টেস্ট শেষ হলে মাকে বাড়ি পাঠিয়ে আমি থাকলাম। রাত তখন সাড়ে দশটা। তখনো বহু রোগীসহ রোগীর স্বজনেরা বসে আছেন ডাক্তারের সাক্ষাতের জন্য। সেই বিকাল ৫টা থেকে শুরু হয়ে তখনও ডাক্তার সাহেব বিরতিহীনভাবে রোগী দেখে চলেছেন। কিন্তু শেষ করতে পারেননি। তবে শুধুমাত্র ওই ডাক্তারই নন। কয়েকজন ডাক্তার বসেন ওই ক্লিনিকে সবার কাছেই রোগীর চাপ। বিষয়টা নিজেকে বেশ ভাবিয়ে তুলল। বুঝতে পারলাম, ‘সুস্থতা’ মানুষের কাছে এখন সোনার হরিণ। তরতাজা মানুষগুলো হয়তো কারো হার্টের পেইন, কারো বøক, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিসসহ নানান রকমের শারীরিক জটিলতা নিয়ে এসেছেন।
অসুস্থ মানুষ দেখলে বরাবরই নিজেকে সামাল দিতে পারি না। কেন জানি না মানুষগুলোর চোখের মলিন চাহনি, তাঁদের যন্ত্রণাকাতর চেহারা নিজেকে বেশ কাঁদায়। মনে পড়ে নিজের অসুস্থতার কথা। সেই ২০১৩ সালের কথা। সবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করে চাকরিতে যোগদান করেছি। স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় ধরা পড়ল উচ্চ রক্তচাপসহ রক্তে উচ্চ মাত্রার কোলেস্ট্রল। ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক শুরু করলাম নিয়মিত ওষুধ সেবন। ডাক্তারের কথা ছিল, প্রেসারের ওষুধ কোনভাবেই বন্ধ করা যাবে না। সঠিক প্রেসারের ওষুধ নির্ধারণ করতে গিয়ে বেশ কয়েকবার ডাক্তার এবং ওষুধ উভয়ই পরিবর্তন করতে হয়েছিল। তারপর থেকে নিয়মিত সকাল ও রাতে প্রেসার ও কোলেস্ট্রলের ওষুধ সেবন করতে লাগলাম। ২৬ বছর বয়স থেকে নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হবে এটা ভেবে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে গেলাম। মনে হতে লাগল, ক্রমান্বয়ে বার্ধক্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। শরীরের জড়তা দিনকে দিন বেড়েই চলছিল। এরপর ২০১৮ সালে সুযোগ আসল দেশের বাইরে পিএইচডি করার। বিদেশে যাওয়ার আগে ওষুধের মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ হিসাব করে লাগেজের বড় একটা অংশ জুড়ে ওষুধ নিয়ে যাই। ওখানে গিয়েও নিয়ম করে ওষুধ সেবন করি। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে দেশ থেকে নিয়ে যাওয়া উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খাওয়া বন্ধ করলাম। শারীরিক কোনরকম জটিলতা ছাড়াই সুস্থ-সবল মানুষের মতো দিনাতিপাত করতে লাগলাম। কথাগুলো এখানে বলার কারণ হলো, নিয়মিত হাঁটাচলা, পরিমিত ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস একজন মানুষকে সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট। সপরিবারে চার বছর চীনে থাকার অভিজ্ঞতা আমাকে এমনই শিক্ষা দিয়েছে।
যাইহোক, ক্লিনিকে আসা কয়েকজন রোগীর সাথে অল্পস্বল্প আলাপচারিতায় জানতে পারলাম, এর আগেও তাঁরা বহু ডাক্তার দেখিয়েছেন। কিন্তু কোনভাবেই শরীরের সেই সুস্থতা ফিরিয়ে আনতে পারছেন না। দেখলাম, রোগী নামক এসব আধা বয়সী মানুষ বা তাঁদের সাথে আসা স্বজনদের চোখে মুখে মলিনতার ছাপ। একটি পরিবারের একজনের অসুস্থতা মানেই ওই পরিবারের সকলেই দুশ্চিন্তায় থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। নিজের পরিবারের মা-বাবার অসুস্থতা দিয়ে এই চরম বাস্তবতাটুকু উপলব্ধি করতে পারি। ক্লিনিকে এত বেশি মানুষের সমাগম দেখতে দেখতে রাত যে বেশ গভীরের দিকে যাচ্ছে সেটা বুঝতেই পারিনি। ইতোমধ্যে মায়ের টেস্ট রিপোর্ট হাতে পেলাম। টেস্টের রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করে ডাক্তার সাহেব কিছু ওষুধ প্রেস্ক্রাইব করলেন। এখন সেগুলো কেনার পালা। রাত তখন প্রায় ১২টা। ডিসপেনসারিতে গিয়ে দেখলাম, এত রাতেও সেখানে লম্বা লাইন। আমাদের গ্রামের শেষ প্রান্তে একটি বাজার আছে। এই বাজারেও ৮-৯টি ডিসপেনসারি আছে। এসব ডিসপেনসারিতে প্রায় সারাক্ষণ ভিড় লেগে থাকে। ডিসপেনসারির সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ার সাথে বেড়েছে ওষুধ ক্রয়কারীর সংখ্যা। গ্রামের প্রায় প্রতিটি মানুষের কোনো না কোনো কারণে ওষুধ সেবন করা লাগে। কারও কারও ওষুধের এই লিস্ট বেশ লম্বা। আমার কাছে মনে হয়, মানুষ দিনে যত টাকার বাজার করে তার থেকে বেশি টাকা ব্যয় করে প্রতিদিনের ওষুধ সেবনে। বাজারে সচারাচর যেসকল দোকানে মানুষ দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর জন্য হাজির হয়, তার মধ্যে ওষুধের ডিসপেনসারি অন্যতম। তবে জেলা শহরের ডিসপেনসারিগুলোতে ভিড় আরও বেশি। একদিন কিছু সর্দি-কাশির ওষুধ কিনতে গিয়ে প্রায় ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে তারপর প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো হাতে পেলাম। এই ১৫ মিনিট ওখানে অপেক্ষারত অবস্থায় দেখলাম, যারা ওষুধ কিনতে এসেছে সবাই নিজের জন্য অথবা পরিবারের কারও জন্য ওষুধ নিতে এসেছেন। তাঁদের সবারই ওষুধের লিস্ট এত লম্বা, যেখানে হাজার টাকার নিচে কারও বিল দেখলাম না। এক সপ্তাহের ওষুধ কিনতে যদি ১০০০ টাকার বিল গুনতে হয়, তাহলে এসব মানুষের অন্যান্য আনুসঙ্গিক খরচ না জানি কত হবে! সেই হিসাবে না গিয়ে মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল দেশের অধিকাংশ মানুষের শারীরিক নানান জটিলতা নিয়ে।
চিন্তা হচ্ছিল, নিজের কিছু সমসাময়িক শারীরিক সমস্যা নিয়ে। দেশে ফেরার কিছুদিনের ভিতরেই আবারো নানারকমের শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া খাপ খাওয়াতে অনেক বেশি হিমশিম খেতে হচ্ছে। রাস্তাঘাটে যে পরিমাণ ধুলিকণা বা ডাস্ট সেখানে একদিন বের হলেই সর্দি কাশির সম্মুখীন হতে হবে। হাঁপানি বা অ্যাঁজমা রোগীদের কথা বাদ দিলাম। একজন সুস্থ-সবল মানুষও এই ধুলার ভিতর চলাচল করলে তাঁর শ্বাসতন্ত্রের নানান জটিলতা দেখা দেবে, সেটাই স্বাভাবিক। নিজের অবস্থান থেকে এই উপলব্ধি বেশ পরিষ্কার। মাস্ক ছাড়া কখনো ঢাকার রাস্তায় বের হইনি। তারপরেও প্রতিদিন উচ্চ শক্তির অ্যালার্জির ওষুধ খেতে হচ্ছে। কিন্তু সর্দি, হাঁচি-কাশি থেকে মুক্তি নেই। যেখানে বিগত চার বছরে একদিনের জন্যও সর্দি বা জ্বরের সম্মুখীন হইনি সেখানে দেশে ফিরেই দুইবার জ্বর হয়েছে। মুক্তি নেই রাস্তার উচ্চ শক্তির হাইড্রোলিক হর্নের আওয়াজ থেকে। ইজিবাইক, মোটরবাইক, ট্রাক, গণপরিবহন, দূরপাল্লার পরিবহনসহ সকল প্রকার যানবাহনের উচ্চ শব্দের হাইড্রোলিক হর্ন মিলে এত উচ্চ শব্দ তৈরি করে, যেটা সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষদের জন্য রাস্তায় চলাচল রীতিমত হুমকি। শিশু, বৃদ্ধ বা রোগীদের কথা বাদ দিলাম। প্রতিদিন এই উচ্চমাত্রার শব্দের সম্মুখীন হওয়া মানেই শ্রবণ শক্তি হ্রাস পাওয়া, মেজাজ খিটখিটে হওয়াসহ আরও নানা ধরনের রোগ শরীরে বাসা বাঁধবে, সেটাই স্বাভাবিক।
একটি আদর্শ নগর গঠনের কতগুলো নিয়ামক আছে। তার মধ্যে নগরবাসীকে বিশুদ্ধ বায়ুর নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য বাতাসে পার্টিকুলেট ম্যাটার বা বিভিন্ন ধুলিকনার একটা সহনীয় মাত্রা, শব্দ দূষণ রোধে লোকালয়ে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা থাকা বাঞ্ছনীয়। তবে আমাদের দেশের নগর ব্যবস্থাপনায় এসব কোনো নিয়ম মানা হয় বলে আমার জানা নেই। অবশ্য মাঝেমধ্যে বড় বড় সাইনবোর্ড চোখে পড়ে, যেখানে লেখা থাকে ‘সামনে হাসপাতাল হর্ন বাজানো থেকে বিরত থাকুন’। ওসব জায়গায় নিয়মের কিছুটা বাধ্যবাধকতা থাকলেও সেগুলো আদৌ মানা হচ্ছে কিনা বা কেউ নিয়ম অমান্য করছে কিনা, সে বিষয়ে কেউ তদারকি করে বলে আমার জানা নেই।
জনসাধারণের এসব সমস্যাগুলো নিরসনে কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট উদাসীনতা বরাবরই লক্ষ করা যায়। তবে এসকল সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে বিশুদ্ধ খাবারের অনিশ্চয়তা। চারিদিকে এত বেশি ভেজালের ছড়াছড়ি, যেখানে মানুষ অরিজিনাল খাবারের স্বাদ ভুলে গেছে। যদি কেউ নির্ভেজাল খাবার খেতে চায় সেটাও মেলানো খুবই কষ্টের। অন্ততপক্ষে রাজধানীবাসীর অনুক‚লে না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ জনগণের যেখানে নাভিশ্বাস উঠে গেছে, সেখানে বাড়তি মূল্য দিয়ে নির্ভেজাল খাবার কেনার চেয়ে একটু সুলভ মূল্যে ওই ভেজাল খাবারই তাঁদের কাছে সাশ্রয়ী মনে হয়। অথচ, কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারিতে এই ভেজাল খাবারের যথাযথ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। নিয়ম মাফিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে, বাজার মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করে খাদ্যে ভেজাল মেশানো পুরিপুরি বন্ধ করা সম্ভব।
নিরোগ দেহ ও স্বাস্থ্যকর জীবন প্রতিটি মানুষের একান্ত কাম্য। কিন্তু এই মানবজাতিরই নৈতিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়ের ফলে নিরাপদ খাবার মেলানো আজ চ্যালেঞ্জের বিষয়। মানুষের হাতেই মানুষের খাবারে মেশানো বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য খাদ্যকে মানব শরীরের গ্রহণের অনুপযোগী করেছে। মানুষ নিরুপায় হয়ে এসব খাবার গ্রহণ করছে। ফলে ক্রমান্বয়ে লিভার, হৃদপিÐ, কিডনি তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারাচ্ছে। তাৎক্ষণিকভাবে খাবারের বিষক্রিয়ার ফল মানব শরীরে গুরুত্বর কোনো পরিবর্তন না আনলেও ক্রমান্বয়ে এই বিষক্রিয়া সমস্ত শরীরকে নষ্ট করে দিচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যে এর প্রভাব দেখেছি সমাজের অধিকাংশ মানুষের ভিতর। সমাজের সুস্থ মানুষের সংখ্যা এখন খুবই নগণ্য। আমি হাতে গুনে ২/১ জন পেয়েছি যিনি নিয়মিত ওষুধ সেবন করেন না। তবে তাঁদের শরীরেও আছে নানান সমস্যা। শুধু ডাক্তার দেখানো কিছুটা ঝামেলা মনে করে তাঁরা এখনো ডাক্তারের শরণাপন্ন হননি। ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে উচ্চ মাত্রার কোলেস্ট্রলসহ হৃদপিÐ, লিভার, কিডনির নানাবিধ জটিল রোগের সমাহার এখন দেশের প্রায় প্রতিটি মানুষের।
এমনিতেই আমাদের দেশের মানুষের অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, স্বাস্থ্যকর ও নিরোগ জীবন যাপনের অন্তরায়। খাবার গ্রহণের সময় অতিরিক্ত মাত্রায় চিনি, অত্যাধিক কার্বোহাইড্রেট, অতিমাত্রায় চর্বি জাতীয় খাবার মানুষের স্থূলতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এছাড়াও অতিরিক্ত মাত্রার ফাস্ট ফুড ও প্রক্রিয়াজাতকরণ খাবার খাওয়ার ফলে রক্তে উচ্চ মাত্রার কোলেস্ট্রল যুব সমাজের খুব সাধারণ বৈশিষ্ট্য। অন্যদিকে যথোপযুক্ত কায়িক শ্রমের অভাবে মানুষের শরীরে বাসা বাঁধছে নানা ধরনের রোগ। দেশের তরুণ সমাজ বর্তমানে এসব রোগের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিছু হলেই সর্বপ্রথমে আমরা ডাক্তারের শরনাপন্ন হই। চিকিৎসা সেবায় আমাদের দেশ বেশ এগুলেও আছে চিকিৎসক সংকট। রোগীর তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে কম হওয়ায় চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে সর্বক্ষণই উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। বাড়তি রোগীর চাপ সামাল গিয়ে চিকিৎসকরা হিমশিম খান। ফলস্বরূপ চিকিৎসা সেবা নিয়ে জনগণের মনে অসন্তোষ দেখা যায়। চিকিৎসকদের তাড়াহুড়ো করে রোগী দেখা, রোগের ধরন নির্ধারণ না করেই ওষুধ প্রেস্ক্রাইব করা ভুক্তভোগীদের রোগের তীব্রতা অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়।
রোগ হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সুস্থ মানুষের চেয়ে অসুস্থ মানুষের সংখ্যা যদি ব্যাপক হারে বেড়ে যায়, তাহলে ডাক্তারের সংকট দেখা দেবে, সেটাও স্বাভাবিক। তাই রোগ হওয়ার পরে প্রতিকার করার চেয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করাই উত্তম। যেখানে মানুষের নিরাপদ খাবার পাওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া জরুরি। খাদ্যকে দীর্ঘদিন সতেজ রাখতে বা পচনশীলতা রোধ করতে যেসব কেমিক্যাল মেশানো হয়, সেগুলো বিষের সামিল। এই অতিরিক্ত মাত্রার ভেজালের প্রতিফলন মানুষ ধীরে ধীরে পেতে শুরু করেছে। খাদ্যে ভেজালের লাগাম যদি এখনি না টানা যায় তাহলে সেটি হবে গোটা জাতির জন্য বড় হুমকি। অদূর ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে, সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। খাদ্যে ভেজাল রোধ করা গেলে সমাজের অধিকাংশ মানুষ সুস্থ থাকাবে, আশা করা যায়। সেইসাথে মানুষের খাদ্যাভ্যাসেরও পরিবর্তন করা আবশ্যক। কেননা, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস অনেক জটিল রোগ সৃষ্টির পেছনে দায়ী। শরীরের বাড়তি ওজন সর্বদা সুস্থ জীবন যাপনের অন্তরায়। শরীরে চর্বি জমা হওয়া মানেই নানান রোগের উৎপত্তি। বর্তমানে অল্প বয়স্কদের হৃদরোগ ও ডায়েবেটিসের হার বেড়ে যাওয়া এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তাই উপযুক্ত কায়িক শ্রম, নিয়মিত শরীর চর্চা ও সঠিক খাদ্যাভ্যাসের প্রতি সকলের নজর দেওয়া আবশ্যক। অনেক গবেষণায় এটা প্রমাণিত যে, কম খেয়ে জীবনধারণ বা জীবন বাঁচানোর জন্য ন্যূনতম যেটুকু প্রয়োজন সেটুকু খেয়েও শরীর অনেক ভালো থাকে।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
ajoymondal325@yahoo.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন