শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

অবৈধ ইটভাটায় বিপর্যস্ত পরিবেশ হুমকির মুখে নারায়ণগঞ্জের জনস্বাস্থ্য

মো. হাফিজুর রহমান মিন্টু ও মোক্তার হোসেন মোল্লা, নারায়ণগঞ্জ থেকে | প্রকাশের সময় : ১০ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০৪ এএম

নারায়নগঞ্জে সরকারি নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই গড়ে উঠেছে অবৈধ ইটভাটা। লাইসেন্স নিয়ে গড়ে ওঠা ইটভাটাগুলোও মানছে না সরকারি নির্দেশনা। ভাটার কালো ধোঁয়ায় নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। এতে করে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। ইট তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে কৃষি জমির উর্বর মাটি। ফলে প্রতিনিয়ত কমছে কৃষি জমি।
বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদফতরের নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেইস) প্রকল্প প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৮টি প্রধান জেলা শহরের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বায়ুর খুবই অস্বাস্থ্যকর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। আর এ বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা ইটভাটা। এ জেলাতেই রয়েছে ৩৪৪টি ইটভাটা। এর মধ্যে ২৫৪টি ইটভাটাই অবৈধ।
পরিবেশ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে বেশি ইটভাটা সদর উপজেলা, বন্দর ও রূপগঞ্জে। জেলায় ছাড়পত্র ও নবায়ন বিহীনভাবে নারায়ণগঞ্জে পরিচালিত জিগজ্যাগ পদ্ধতির ইটভাটা রয়েছে ১৫০টি। এর মধ্যে রূপগঞ্জে রয়েছে ৮২টি, সদর উপজেলায় রয়েছে ৩৬টি, বন্দরে ২৫টি, সোনারগাঁওয়ে ৭টি। আর ১২০ ফুট চিমনিবিশিষ্ট অবৈধ ইটভাটা রয়েছে ১০৪টি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় রয়েছে ৬৯টি, রূপগঞ্জে রয়েছে ৩২টি, আড়াইহাজারে ১টি এবং সোনারগাঁয়ে ২টি।
নিষিদ্ধ হলেও নারায়নগঞ্জ জেলার ইটভাটাগুলোর অধিকাংশ গড়ে উঠেছে জনবসতিপূর্ণ এলাকায়, নদীর ধারে ও ফসলি জমি দখল করে। এতে দূষণের পাশাপাশি হুমকির মুখে ফেলছে জনস্বাস্থ্য। যেগুলোর নেই কোনো পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র।
সোনারগাঁ উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের পেরাব, কাহেনা, সিংলাব, পেচাইন, পাকুন্দা ও রাউৎগাঁও মৌজার বিস্তৃর্ণ এলাকার প্রায় দুই হাজার বিঘা ফসলি কৃষি জমি থেকে ইতোমধ্যে ৭০০ বিঘা কৃষি জমির মাটি দুর্বৃত্তরা কেটে নিয়ে গেছে। প্রশাসনের সহযোগিতায় ট্রাকভর্তি মাটি বিক্রি করছে ইটভাটা মালিকদের কাছে। তাদের এ মাটি কাটায় যাতে কেউ বাঁধা না দেয় সে জন্য মাটি কাটার সঙ্গে জড়িতদের ১টি বাহিনী মহড়া দেয়। এ ঘটনায় এলাকাবাসী গত ডিসেম্বর মাসে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন স্থানীয় যুবলীগ নেতকর্মীরা এই মাটি চুরির সাথে জড়িত।
স্থানীয় জমির মালিক ও কৃষকদের অভিযোগ, মাটি এতটাই গভীর করে কেটে নিয়ে যায় যে কেউ দেখলে পুকুর না বলে উপায় থাকবে না। তাদের মতে প্রতিটি জমি থেকে ভেকু দিয়ে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ ফুট গর্ত করে কেটে নিচ্ছে মাটি সন্ত্রাসীরা। ফলে পাশের জমির মাটি এমনিতেই গর্তে পড়ে যায় এবং তা বিনা টাকায় ও বিনা অনুমতিতে নিয়ে যায় তারা। ফলে অনেক জমির মালিককে বাধ্য হয়েই মাটি বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে হাজার একর কৃষি জমি অনাবাদি হয়ে পড়েছে। আইনের তোয়াক্কাই করছে না ইটভাটা মালিকরা। নারায়নগঞ্জের অধিকাংশ ইটভাটায় কয়লার বদলে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।
সদর থানার আলীরট্যাক ও ফতুল্লার বক্তাবলির লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া কৃষি জমি, পরিবেশের ক্ষতি করছে এমনটিই নয়, জনস্বাস্থ্যেও মারাক্তক প্রভাব ফেলছে। বায়ু দূষণের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় হৃদযন্ত্র এবং শ্বাস-প্রশ্বাস। অতিরিক্ত দূষিত বায়ুর কারণে গর্ভবতী নারী ও শিশু স্বাস্থ্যের ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়ে। এমনকি জন্মের পূর্বেই শিশুর মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদফতরের উপপরিচালক সাঈদ আনোয়ার বলেন, আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে, আমরা এ পর্যন্ত না’গঞ্জ সদর রুপগঞ্জ, ফতুল্লা, সোনারগাঁসহ বিভিন্ন এলাকায় ৫৮টি অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ ও ৫৭ লাখ ৬৪ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছি। তিনি আরও বলেন, আরো প্রায় ১৬-১৭টি অবৈধ ইটভাটা রুপগঞ্জ ও ফতুল্লায় রয়েছে এরা হাইকোর্টে রিট করে উচ্ছেদ অভিযান আগামী ২০ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করেছে। মার্চের ২০ তারিখ এর পর আমরা এগুলোও উচ্ছেদ করব। জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় আমরা বদ্ধ পরিকর এ লক্ষে জেলার অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। জেলাবাসীকে সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ রক্ষায় এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। ইতিমধ্যে অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদসহ জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন