মুন্সীগঞ্জে পদ্মা নদীর অব্যাহত ভাঙনে লৌহজং ও টংগীবাড়ি উপজেলার বসতবাড়ি, ফসলিজমিসহ বিস্তীর্ন এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নিঃস্ব এবং ভিটে মাটি ছাড়া হয়েছে শতাধিক পরিবার। হঠাৎ তীব্র ভাঙনে বাড়ি-ঘর সরানোর সময়ও পায়নি হতভাগ্য পরিবারগুলো। গত তিন মাসে রাক্ষুসী পদ্মার করাল গ্রাসে প্রায় দুই শতাধিক বসতবাড়ি এবং কয়েক শত একর ফসলি জমি এখন পদ্মার পেটে। নদীর পানি কমার সাথে সাথে এ ভাঙন আরো তীব্র হবার শংকা রয়েছে।
জেলার লৌহজং উপজেলার খড়িয়া, উত্তর মেধিনীমন্ডল, কান্দিপাড়া, তেউটিয়া, গাওদিয়া শামুরবাড়ি, হলদিয়াসহ শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট এলাকায় চলতি বর্ষা মৌসুমের সাথে সাথে পদ্মার ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে শতাধিক বসতবাড়ি, ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ন এলাকা।
লৌহজেংর কান্দিপাড়া গ্রামের সালমা বেগম বলেন, বর্ষার শুরুতে এ এলাকায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়। ইতোমধ্যে এ গ্রামের ৮ থেকে ১০টি বসত বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পদ্মারচর এলাকায়। পদ্মারচরে তীব্র স্রোতে ও ভাঙনে বাড়িঘর এবং ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন এবং ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পদ্মার চরের ভাঙন অব্যাহত থাকায় চরের বালু নদীতে পরে শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ি নৌরুটের লৌহজং চ্যানেলে নাব্যতা দেখা দিয়েছে। লৌহজং উপজেলার খড়িয়া গ্রামবাসীদের নদীভাঙন যেন জীবন সঙ্গী হয়ে গেছে। প্রতিবছর এ গ্রামে পদ্মা নদীর দু’দফা ভাঙন দেখা দেয়, বর্ষার শুরুতে এবং পানি কমার সাথে সাথে। গত তিন বছরের এ এলাকায় ব্যাপক নদীভাঙনে গতিপথ পরিবর্তন হয়ে প্রায় ত্রিশ মিটার ভেতরে ঢুকে পড়েছে।
পদ্মার করাল থাবায় টংগীবাড়ি উপজেলার দিঘীরপাড়, কামারখাড়া, হাসাইল, বাঘবাড়ি এলাকার অর্ধ শতাধিক বাড়ি-ঘর ও কয়েক শত একর ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। কামারখাড়া এলাকায় গত মাসে এক সপ্তাহের ভাঙনে ৮ থেকে ১০টি বসত বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়। পদ্মার করাল গ্রাসে টংগীবাড়ি উপজেলার প্রায় ৩৫টি পরিবার ভিটে ছাড়া হয়। এসব পরিবার অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছে। কামারখাড়া গ্রামের রজব আলী পৈতৃক ভিটা হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছে অন্যের জমিতে। তিনি জানান, গত কয়েক বছর ধরে এখানে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। নদী ধীরে ধীরে ভেতরে ঢুকছে। ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন না করলে গ্রামটি নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে। চলতি বর্ষা মৌসুমে লৌহজং এবং টংগীবাড়ির ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হওয়ায় পদ্মার বালি ও পলি পরে কয়েক শত একর ফসলি জমি বিনষ্ট হয়েছে।
টংগীবাড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসা. হাসিনা আক্তার জানান, নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের জেলা প্রশাসন থেকে পর্যাপ্ত ত্রাণ, গৃহহীনদের ঘর নির্মাণের জন্য নগদ টাকা ও টিন দেয়া হয়েছে। নদীভাঙন এলাকাবাসী ভাঙনরোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ভাঙন রোধে সাময়িকভাবে জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। লৌহজং ও টংগীবাড়ি উপজেলার প্রায় ৮.৪ কি.মি এলাকায় ব্লক ফেলে স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধের একটি প্রকল্পের প্রস্তাব রয়েছে। একনেক সভায় পাশ হলে তা বাস্তবায়ন কাজ শুরু হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন