ময়মনসিংহে সাড়ে ১৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ব্রক্ষপুত্র নদের তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে প্রায় কয়েক হাজার পরিবার, সরকারি স্থাপনা ও রাস্তাঘাট। ফলে শত শত একর ফসলী জমি ও বসত ভিটা নদ গর্ভে বিলিন হয়ে অসহায় জীবন-যাপন করছেন ক্ষতিগ্রস্থরা।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, নদ ভাঙ্গন পরিদর্শনে আজ সকাল ১১ ঘটিকায় জেলার নান্দাইলে যাচ্ছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি। এ সময় তিনি উপজেলার কোমড় ভাঙ্গা, নরসুন্দা নদীর বিভিন্ন তীর এবং পাইলট বালিকা বিদ্যালয় এলাকার নদ ভাঙন সরেজমিনে পরিদর্শন করবেন বলে জানান ময়মনসিংহ-৯ নান্দাইল আসনের এমপি আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন।
ময়মনসিংহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মূসা জানান, ভাঙন কবলিত এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য ৫৪৩কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্প অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার নতুন বাঁধ নির্মাণে বরাদ্ধ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১৫ কোটি টাকা এবং ৩২দশমিক ৮২ কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধ মেরামতের জন্য বরাদ্ধ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ কোটি টাকা। আশা করছি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে লাঘব হবে জনদূর্ভোগ। রক্ষা হবে শত শত একর ফসলি জমি-বসতভিটা, সরকারি স্থাপনা ও রাস্তাঘাট। তিনি আরো জানান, বন্যার ভাঙন রোধে জেলার ১৫টি স্পটে ২ কোটি ৬ লাখ টাকার অস্থায়ী প্রতিরক্ষা কাজ করা হয়েছে।
উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. ইউনুস আলী জানান, স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পের বিষয়ে আগামী পহেলা অক্টোবর মন্ত্রানালয়ের যাচাই-বাছাঁই কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হতে পারে। ওই সিদ্ধান্তের পর একনেকে অনুমোদন পেলেই শুরু হবে প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যক্রম। সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, জেলার ভাঙ্গন কবলিত উপজেলাগুলি হল- সদর, গৌরীপুর, ঈশ্বরগজ্ঞ, গফরগাঁও, ত্রিশাল ও নান্দাইল। এসব উপজেলার প্রায় শতাধিক স্পটে নদ ভাঙন রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ গৌরীপুর উপজেলার ভাটিপাড়া, উজান কাশিয়ার চর, ঈশ্বগজ্ঞ উপজেলার মরিচার চর ও বটতলা এলাকা। ফলে এসব এলাকায় অস্থায়ী প্রতিরক্ষা হিসেবে প্রায় কোটি টাকার জিও ব্যাগ প্রকল্পের কাজ করা হচ্ছে। ‘কিন্তু এসব কাজে নয়ছয় করে সরকারী অর্থ হরিলুট করা ছাড়া ভাঙন রোধে তেমন কোন কাজে আসছে না বলে মন্তব্য করেছেন ময়মনসিংহ-৩ গৌরীপুর আসনের এমপি বীরমুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ব্রক্ষপুত্রের ভাঙনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা গৌরীপুরের ভাটিপাড়া। প্রতিরক্ষা বাঁধের নামে জিও ব্যাগে সরকারি অর্থ অপচয় না করে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কোন বিকল্প নেই। প্রতিমন্ত্রী মহোদয় সরেজমিনে বিষয়টির অনুধাবন করে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পটি অনুমোদনের পদক্ষেপ গ্রহন করবেন বলে আশা করছি।
ক্ষতিগ্রস্থদের অভিযোগ, বন্যার তীব্রতা ও ব্রক্ষপুত্র নদে অপরিকল্পিত ভাবে শত শত স্পটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করার ফলে পানি প্রবাহের গতিপথ প্রভাবিত হওয়ায় দেখা দিচ্ছে ভাঙন। এতে সহায়-সম্বল হারিয়ে নি:স্ব হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পরিবার। কিন্তু প্রভাবশালীদের মদদে চিহ্নিত বালু সন্ত্রাসীরা অবৈধ বালু উত্তোলন করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। তবে সংশ্লিষ্ট উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা বলেন, ব্রক্ষপুত্র নদের মাটির প্রকৃতি ভাল না। মূলত এটি বালু প্রকৃতির মাটি হওয়ার কারণে সহজের তা ভেঙে যায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন