নরসিংদীতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে জনমনে ব্যাপক প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের নামে ৭০ বছরের পুরনো নরসিংদীর রেলওয়ে জামে মসজিদটি ভেঙে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। গত কয়েকদিনে উচ্ছেদকারীরা ইতোমধ্যেই মসজিদের একমাত্র আয়ের উৎস মসজিদ সংলগ্ন ছোট্ট মার্কেটটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। নরসিংদী রেল কর্মকর্তা ও শত শত মুসল্লির অনুরোধ সত্বেও উচ্ছেদকারীরা মসজিদ মার্কেটিকে ছাড় দেয়নি। যেকোনো সময়ই মসজিদটি ভেঙে দেয়ার আশঙ্কা করছে এলাকার মুসল্লীরা। আর এই ঘটনা নিয়ে স্থানীয় মুসল্লি ও মার্কেটের ভাড়াটিয়া মালিকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। মুসল্লীরা জানিয়েছে, উচ্ছেদকারীরা রহস্যজনক কারণে নরসিংদী রেল স্টেশনের পশ্চিম পাশে রেললাইন ঘেষা একটি অবৈধ মার্কেট উচ্ছেদ করেনি। অথচ মসজিদের একটি ছোট্ট মার্কেটটি ভাঙতে তাদের বুক কাঁপেনি। এছাড়াও বহু সংখ্যক অবৈধ দখলদারদের দোকানপাট অবৈধ স্থাপনায় তারা হাত দেয়নি। পক্ষান্তরে এক মালিককে সরিয়ে আরেক মালিককে দখল দেয়ার জন্য অনেক লাইসেন্সধারী ব্যক্তিদের স্থাপনাও ভেঙে দিয়েছে। এমনিভাবে রেল কলোনিসহ বিভিন্ন স্থানে বহুসংখ্যক অবৈধ দোকানপাট বাড়িঘর ভাঙতে দেখা যায়নি। উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষের এহেন আচরণকে দুর্নীতি এবং অবৈধ উপায়ে টাকা আদায়ের একটি নয়া ফন্দি বলে আখ্যায়িত করেছেন বৈধ লাইসেন্সধারী মালিক মিজান চৌধুরী। তিনি অভিযোগ করেছেন যে তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে কাগজ দিয়ে এখন আবার তারাই ভেঙে দিয়েছে। মোহাম্মদ আলী নামে এক ব্যক্তি বলেছে, উচ্ছেদ অভিযান পূর্ববর্তী মাইকিং করার পর যারা গোপনে যোগাযোগ করতে পেরেছে তাদের স্থাপনা ভাঙা হয়নি। আর যারা যোগাযোগ করেনি তাদের স্থাপনাই ভেঙে দিয়েছে।
রেলস্টেশনের পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণে রেলওয়ের কোটি কোটি টাকার জমি প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে। উচ্ছেদকারিরা সেসব জায়গায় হাতও লাগায়নি। রেলওয়ে জামে মসজিদের ইমাম নূর মোহাম্মদ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, নরসিংদী রেল স্টেশনের হাজার হাজার যাত্রীর সুবিধার্থে পাকিস্তান শাসনামলে নরসিংদী রেল কর্মকর্তারা স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। মসজিদের ব্যয় নির্বাহের জন্য ২৫ বছর পূর্বে স্থানীয় রেল কর্মকর্তারাই মসজিদের উত্তর সংলগ্ন ৫/৬ শতাংশ জমিতে একটা ছোট মার্কেট নির্মাণ করেন। এই মার্কেটের ভাড়ার টাকা দিয়েই মসজিদের সামগ্রিক ব্যয় নির্বাহ করা হয়। মসজিদটি পরিচালনাও করেন নরসিংদীর স্থানীয় রেল কর্মকর্তা কর্মচারীরা। রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এই মসজিদ সম্পর্কে সামগ্রিকভাবে অবগত আছেন।
ইমাম নূর মোহাম্মদ জানান, মসজিদ কমিটি যদি এই জায়গাটিতে মার্কেট নির্মাণ না করত তবে জায়গাটি কোন না কোন অবৈধ দখলদারির দখলে থাকতো। মসজিদের মার্কেটটি স্থাপন করে কোন ব্যক্তি লাভবান হয়নি। মার্কেটের ভাড়া আল্লাহর ঘর মসজিদের জন্যই ব্যয় করা হয়। মসজিদের কয়েকজন নিয়মিত মুসল্লী আফসোস করে বলেছেন, রেলওয়ে শত শত বিঘা জমিতে প্রভাবশালীদের বড় বড় স্থাপনা রয়েছে। সেগুলোতে কোন হাত দেয়া হয়নি। অথচ মুসলমান হয়েও মসজিদের একটি ছোট্ট মার্কেট ভেঙে দিতে তাদের বুক কাঁপেনি।
স্থানীয় রেল কর্মকর্তা ও মসজিদ কমিটি মুসল্লিরা শত অনুনয়-বিনয় করার পরও উচ্ছেদকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে মায়ার উদ্রেক হয় নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, কিছুদিন পরপর উচ্ছেদ অভিযানের নামে রেলওয়ে এস্টেট বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা একটি ফাঁদ পেতে বসে। ফাঁদে যারা ধরা দেয় তাদের কিছুই হয় না। যারা যোগাযোগ করে না তাদের স্থাপনা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। পুনরায় তারা যোগাযোগ করলে আবার সেই জায়গায় নতুন নতুন অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠে। এমনিভাবে রেলওয়ের এস্টেট বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় নরসিংদীতে রেলের কোটি কোটি টাকার জমি স্থায়ীভাবে বেআইনি দখলদারদের মালিকানায় চলে গেছে। এসব জায়গা পুনরুদ্ধারে এস্টেট বিভাগ কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।
এ ব্যাপারে রেলওয়ে স্থানীয় কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে উচ্ছেদের ব্যাপার তারা জানান, উচ্ছেদের ব্যাপারে তাদের কোনো হাত নেই। উচ্ছেদকারীরা রেলওয়ের এস্টেট বিভাগের লোক। স্থানীয় রেল কর্মকর্তাদের সাথে তাদের কোন যোগাযোগ নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন