রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

মুখোশের আড়ালে ইসলাম বিদ্বেষ

আমজাদ হোসেন | প্রকাশের সময় : ৭ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

ফ্রান্সে ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষ তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদ মোকাবেলার অজুহাতে সেদেশে মুসলমানদের ওপর চাপ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। একের পর এক বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে ফ্রান্সের মসজিদ ও ইসলামিক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। চলতি বছরের গোড়ার দিক থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৭৩টি মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছে। ফ্রান্স সরকার উগ্রপন্থী তৎপরতার অভিযোগ এনে ২৩১ জন বিদেশি নাগরিককে দেশ থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যাদের মধ্যে ১৮০ কারাবন্দি রয়েছেন। ফ্রান্সে বসবাসরত মুসলিম স¤প্রদায় ও দেশটির সরকারের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে চলমান উত্তেজনার মধ্যে এই পদক্ষেপের ঘোষণা এসেছে। ফ্রান্সজুড়ে চলছে মুসলিম সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে সরকার ও বিভিন্ন উগ্র জাতীয়তাবাদীদের হামলা ও কঠোর সব পদক্ষেপ।

২০১৫ সালে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর ব্যঙ্গচিত্র ছাপানোর পর ফ্রান্সের বিতর্কিত ব্যঙ্গাত্মক ম্যাগাজিন শার্লি এবদোতে হামলার ঘটনা ঘটে। চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর সেই ব্যঙ্গচিত্র ক্লাসে প্রদর্শনের পর এক শিক্ষককে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় রাজধানী প্যারিসের বাইরে একটি মসজিদ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফরাসি সরকার অভিযান শুরু করেছে এবং ফ্রান্সের একাধিক মসজিদে প্রতিক্রিয়াশীলরা হামলা চালিয়েছে। প্যারিসে হিজাব পরিহিত দুই মুসলিম নারী ছুরিকাঘাতের শিকার হয়েছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাখোঁ ইসলাম ধর্মের প্রতি চরম অপমানজনক বক্তব্য দিয়েছেন। মহানবী (সা.) এর ব্যাঙ্গচিত্র প্রদর্শনকে তিনি এমন সময় বাকস্বাধীনতা বলে দাবি করলেন যখন আন্তর্জাতিক আইন ও বাকস্বাধীনতার ব্যাখ্যায় কোনো ধর্ম বিশ্বাসের প্রতি অবমাননা করাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ ও ফরাসি সরকার ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিশেষ করে মহানবী (সা.) এর বিরুদ্ধে অপপ্রচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ার পরিবর্তে উল্টো বাকস্বাধীনতার দোহাই দিয়ে অপরাধীদের সমর্থন দেয়ায় ইসলামবিদ্বেষীরা আরো বেশি উৎসাহী হচ্ছে। ফরাসি প্রেসিডেন্টের ‘ইসলামপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদ’ বিরোধী লড়াইয়ের ঘোষণার পরে ফ্রান্সজুড়ে অভিযান চলছে।

ফ্রান্সে ২০১১ সালে জনসাধারণের চলাচলের রাস্তায় চলাফেরা করার সময় নারীদের ওড়না বা মুখোশ পরা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এ নিষেধাজ্ঞা জারি করায় নিন্দা জানিয়েছিল সারা বিশ্বের মুসলমানরা। কে জানতো ফ্রান্সের জন্য প্রকৃতির নিদারুণ প্রতিশোধ অপেক্ষা করছিলো! করোনাকালে সে ফ্রান্সেই এবার মুখোশ না পরে বা মুখ না ঢেকে চলাফেরা করলেই ১৫০ ইউরো জরিমানার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে নিজেদের জাহির করলেও দেশটির বিভিন্ন কর্মকান্ড মুসলিমদের হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে শার্লি এবদোর বিতর্কিত ব্যঙ্গচিত্র বন্ধের ব্যবস্থা না করে বরং তাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। এবার ফ্রান্সের সরকারি বহুতল ভবনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে শার্লি এবদোর সেই বিতর্কিত ১২টি কার্টুন প্রদর্শন করা হয়েছে। বাকস্বাধীনতার দোহাই দিয়ে এসব ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন অব্যাহত রাখবেন বলে জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে এই ধৃষ্টতা বিশ্বের ২০০ কোটি মুসলিমদের অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে। বাকস্বাধীনতার মুখোশের আড়ালে ফ্রান্সের চরম ইসলাম বিদ্বেষের ফলে মুসলিম বিশ্বে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে বিশ্বমুসলিম। ফ্রান্সের সব ধরনের পণ্য বর্জন শুরু করেছে বিভিন্ন মুসলিম দেশ।

ফ্রান্সসহ বিশ্বের যেসব দেশ ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে এ জাতীয় ধৃষ্টতা প্রদর্শন করছে, এতে তাদের দীনতা, অজ্ঞতা ও অসহায়ত্বই প্রকাশ পায়। যুগে যুগে এসব দেশ ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে চলছে। ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলো মুসলিম উম্মাহকে বিপথগামী করতে, তাদের মনোবলকে ভেঙে দিতে অব্যাহত তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

ইসলাম, কুরআন ও বিশ্বনবীর আদর্শ চিরন্তন সত্য। ইসলামের উদ্দেশ্য ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি। ইসলামের লক্ষ্য হলো সমাজে শান্তি, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। ইসলামি বিধিবিধানের মূল লক্ষ্য মানুষের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা এবং যাবতীয় অকল্যাণ ও ক্ষতিকর দিক থেকে মানবসমাজকে রক্ষা করা। যে কোনো সংকটের শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানকে গুরুত্ব দেয় ইসলাম। ইসলাম শত্রæর সঙ্গেও ইনসাফপূর্ণ আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছে। এ ব্যাপারে আল-কোরআনে বলা হয়েছে: ‘হে মুমিনগণ! আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্যদানে তোমরা অবিচল থাকবে; কোনো স¤প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদিগকে যেন কখনো সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে। সুবিচার করবে, ইহা তাকওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় করবে। তোমরা যা করো, নিশ্চয় আল্লাহ তার সম্যক খবর রাখেন।’ (সূরা-৫ মায়িদাহ, আয়াত: ৮) । রাসুলুল্লাহ (সা.) পরম শত্রুর সঙ্গেও ভালো আচরণ করেছেন। ফ্রান্স ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উসকানিমূলক ও বর্ণবাদী বিদ্বেষ ছড়ালেও মুসলিম বিশ্ব ইসলাম ও নবীর আদর্শবলে এখনো ধৈর্য ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করে যাচ্ছে। ফ্রান্সকে এমন নীতি থেকে সরে আসার আহ্বান জানাচ্ছে। মুসলমানদের এমন শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে ফ্রান্স যদি দুর্বলতা ভাবে তাহলে তা হবে চরম ভুল। তাঁদের জানা উচিত, আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় হাবিব মুহাম্মদ (সা.) এর জন্য বিশ্বমুসলিম যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। ফ্রান্স যদি নিজেদের ভুল শুধরাতে না পারে, যদি ইসলাম বিদ্বেষী কর্মকান্ড লাগামহীনভাবে চালিয়ে যেতে থাকে তাহলে বুঝতে হবে চূড়ান্ত পতনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে ফ্রান্স। তার জন্য অপেক্ষা করছে কঠিন পরিণতি। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, ‘আর যারা আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয় তাদের জন্য আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’ (সূরা আত তাওবা: ৬১)।
লেখক: ব্যাংকার ও কলামিস্ট

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Harunur Rashid ৭ নভেম্বর, ২০২০, ১০:২০ এএম says : 0
ভাল লিখেছেন।
Total Reply(0)
মোঃ তাজুল ইসলাম ৭ নভেম্বর, ২০২০, ১০:৩২ এএম says : 0
যুক্তিযুক্ত লেখনী।
Total Reply(0)
Jack Ali ৭ নভেম্বর, ২০২০, ৪:৩৫ পিএম says : 0
We muslims are mainly responsible.. if we muslim all live under on Banner of Islam like in the Past no kafir country dare to Point a Finger to us. The leader, the empire of the Romans: I will make a treaty to ‘Umar ibn ‘Abd-al-’Azīz and he is saying: “I pay you jiziya”. Jiziyah is the taxes the non-Muslims pay. ‘Umar ibn ‘Abd-al-’Azīz said: “great, that’s great. We don’t got an army and we got income coming from them, and we protect them if they need our protection cause they’re getting weaker.” And he sends a messenger and that contained some letters and documentation that they need to agree upon, and that messenger went into the land of the Romans and as they were all greeting that messenger, his eyes [the eyes of the messenger] fell on something astonishing; and it was a man walking around in circles like a donkey. His eyes popped out, and he got up close to him. When he got close to him, he heard him – in the land of the Romans it’s rare, cause Muslims didn’t live among the kuffār back then – he says: ‘lā ilāha ilā Allāh, SubhānAllāh’ and he is walking like a donkey! And every time he rests, someone with a whip, whips him. So, he left all these people waiting “who is the messenger of ‘Umar ibn ‘Abd-al-’Azīz” who want to greet him and welcome him, he left all that aside and he headed towards the man, who was like a donkey in a stew on his hands and knees and every time he slows down, they whip him. So, he says, you know, he walked up and he said: ‘lā ilāha ilā Allāh, Alhamdulillāh, SubhanAllāh’. He said: “Assalāmu ‘alaykūm, a Muslim in the land of the Romans?” The one who’s on his hands and knees said: “a Muslim in the land of the Romans?” “Wa ‘alaykumu salām warahmatu Allāh wabarakātuh” he said: “yes, I’m the messenger of ‘Umar ibn ‘Abd-al-’Azīz, what are you doing like this?” He said: “I have a story. The story is; I’m related to the Empire of the Romans. And I heard about Islām and when I heard about Islām I said: أشهد أن لا إله إلا الله وأشهد أن محمد رسول الله. The empire told me: ‘I give you my daughter to marry her and you have half of my wealth. And it goes back to your descendants – he’s a relative, cousin or something of the empire – you take my daughter to marry her and half of my wealth, but I can’t have someone in my family embracing Islām! It’s a big thing.’” He said: “no. That’s choice A”. Choice B: “we’re going to pop your eyes out, and we’re going to make you like a donkey and stew you your entire life until you die” and I said: “I take B.”
Total Reply(0)
Jack Ali ৭ নভেম্বর, ২০২০, ৪:৪০ পিএম says : 0
In the Name of Allāh, from ‘Umar ibn ‘Abd-al-’Azīz, the Khalīf of the Muslims, to the dog of the Romans. It changed, it changed. You want peace with us, we gave them peace. He went, he sends his messenger to give them peace. When it was time that our blood is attacked, our honor is degraded. No! No more. One Muslim. Not masses, one Muslim. Not killed. His eyes are popped out and they’re treating him. He said: ✉️ To the dog of the Romans, Wallāhī-l-adhīm, if you don’t send me that man, in clean and taken care of and you know, well-guarded, so they won’t kill him and say “someone killed him” and well-guarded, Wallāhī-l-adhīm, I am going to come myself and step on your land and step on your neck. One Muslim. You see the honor of that? One Muslim and he does that. The letter goes to the leader of the empire, and then he shakes and shivers. ‘Umar said that? He’s beginning to shake. And he goes himself gives him a nice dress and sends him guards to send him and send with him a letter: ✉️ This is the man that you wanted. Let’s talk about peace now. ✉️ He [‘Umar ibn ‘Abd-al-’Azīz] says: go to Hell.
Total Reply(0)
Mohammed Kowaj Ali khan ৯ নভেম্বর, ২০২০, ৮:৩৮ এএম says : 0
ইসলাম ধর্ম শান্তি ইসলাম মুক্তি ইসলাম শিফা ইসলাম রাজনীতি ইসলাম শক্তি ইসলাম সম্পদ ইসলাম সকল শান্তির মুল। ইনশাআল্লাহ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন