শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

জানুয়ারির মধ্যেই কাজ শুরু

ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চলতি মাসেই চীনের সাথে ঋণচুক্তি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২২ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শুরু হচ্ছে জানুয়ারীর মধ্যেই। জি-টু-জি ভিত্তিতে বিশাল এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ ও চীন সরকার। ১৬ হাজার ৯০১ কোটি ৩২ লাখ টাকার প্রকল্পে চীনের অর্থায়ন হচ্ছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ অর্থায়ন করবে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর অবশেষে চলতি মাসেই চীনের সাথে ঋণচুক্তি সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন। গতকাল ইনকিলাবকে তিনি বলেন, সব প্রস্তুতি শেষ। এখন ঋণচুক্তি হলেই আমরা কাজ শুরু করতে পারবো। জানুয়ারীর মধ্যেই কাজ শুরু হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এ এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণের কাজ শেষ হলে এটিই হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ে।

বিশাল এ প্রকল্পের অধীনে ঢাকার বিমানবন্দর থেকে আবদুল্লাহপুর-ধউর-বড় আশুলিয়া-জিরাবো-বাইপাইল হয়ে ঢাকা ইপিজেড পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে ২৪ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এই এক্সপ্রেসওয়ের নিচের সড়কটিকে সার্ভিস লেনসহ উন্নীত করা হবে চার লেনে। প্রকল্প বাস্তবায়নে নকশা রিভিউ এবং নির্মাণকাজ তদারকির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগে ইতোমধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠান স্পেনের টেকনিকা ওয়াই প্রয়োকটস ও বাংলাদেশি কোম্পানি ডিওএইচডব্লিউএ অ্যান্ড ডিডিসির মধ্যে।

এ প্রকল্পটি শেষ হওয়ার টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। এটি বাস্তবায়িত হলে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ২৫টি জেলা এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৫টি জেলার মানুষ খুব সহজে ও দ্রুততার সঙ্গে ঢাকায় প্রবেশ করতে পারবে। নিরসন হবে এই অঞ্চলের বিভিন্ন সড়কের যানজট। সব মিলিয়ে প্রায় চার কোটি মানুষ এ প্রকল্পের সুবিধাভোগী হবেন। প্রকল্পতি বাস্তবায়িত হলে সাভার ইপিজেড-এ বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। গতি ফিরবে অর্থনীতিতে। রাজধানী ও আশপাশ এলাকার যানজট কমাতে প্রায় দুই বছর আগে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ হবে চীনের অর্থায়নে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট খরচ হবে ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক ঋণ দেবে ১০ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। বাকি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে দেওয়া হবে। সরাসরি দরপত্র প্রক্রিয়ার (ডিটিএম) মাধ্যমে চীনের ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট এ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে। ২০২২ সালে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সেতু বিভাগ। তবে সম্প্রসারিত অংশ শেষ করতে আরও দুই বছর লাগতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে প্রকল্পের আওতায় ঋণ চুক্তির বিষয়ে সর্বাত্ত্ব প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যায়ে ওই অর্থবছরে ঋণ চুক্তি হয়নি। এখন ইআরডি ও চায়না এক্সিম ব্যাংকের মধ্যে ঋণচুক্তির বিষয়ে আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। চায়না এক্সিম ব্যাংক বিষয়টি মূল্যায়ন করেছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, সব কিছুই ফলপ্রসূ হয়েছে। চলতি মাসেই চীনের সাথে ঋণচুক্তি হবে। আশা করছি জানুয়ারীর মধ্যেই কাজ শুরু করতে পারবো। তিনি বলেন, আমাদের সব কিছুই প্রস্তুত রয়েছে। সে জন্য আর দেরি হওয়ার কোনো শঙ্কা নেই।

এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) যুগ্মসচিব ও এশীয়া উইংয়ের প্রধান মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী বলেন, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকার যানজট নিরসনে বিরাট অবদান রাখবে প্রকল্পটি। গত অর্থবছরেই (২০১৯) এ প্রকল্পটির আওতায় ঋণ চুক্তির কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে ঋণচুক্তি হয়নি। তারা (চীন) নানা ধরনের তথ্য উপাত্ত নিয়েছে। এখন ঋণচুক্তি সই হবে।

জানা গেছে, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি সংযুক্ত করবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েকে। বিমানবন্দরের উল্টোদিকের ঢাকা এলিভেটেডের স্টার্টিং পয়েন্ট (কাওলা) থেকে আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। কাওলার থেকে রেললাইনের ওপর দিয়ে আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল-আশুলিয়া হয়ে সাভার ইপিজেডে গিয়ে শেষ হবে এ প্রকল্প। সাভার ইপিজেড থেকে যে কেউ আশুলিয়া এলিভেটেডে উঠে কাওলা এসে ঢাকা এলিভেটেড হয়ে কুতুবখালী পর্যন্ত গিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যুক্ত হতে পারবেন। এছাড়া চলাচলকারীরা এর মধ্যে নির্দিষ্ট স্থানের র‌্যাম্প ব্যবহার করে সাভার, আশুলিয়া, পূবাইল, আবদুল্লাপুর বা ঢাকা এলিভেটেডের (কাওলা-কুতুবখালী) নির্ধারিত র‌্যাম্প ব্যবহার করে শহরের বিভিন্ন স্থানে ওঠানামা করতে পারবেন।

এ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সাভার, আশুলিয়া, নবীনগর ও সাভার ইপিজেড এলাকার যানজট নিরসন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। একইসঙ্গে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি নির্মাণাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ায় সাভার ইপিজেড সংলগ্ন শিল্পাঞ্চল, ঢাকা চিটাগাং হাইওয়ের সঙ্গে দ্রুতগতিতে চলাচল করা যাবে। উন্নত ও দ্রুতগতির যোগাযোগের কারণে সাভার শিল্পাঞ্চলে নতুন নতুন বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে। এতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে এবং স্থানীয় জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থানের উন্নতি হবে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সহ-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এখন চায়না এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি হলেই প্রকল্পের মূল কার্যক্রম শুরু করা হবে।

এই মেগা প্রকল্পকে ফলপ্রসূ করতে সাভারের নবীনগরে দুটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। এ দুটি ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ২ কিলোমিটার। কাওলা থেকে সাভার ইপিজেড পর্যন্ত ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হবে চারলেন বিশিষ্ট। আর আবদুল্লাপুর থেকে বাইপাইল পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার সড়কও চার লেন করা হবে। আর ধউর থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত বিলের মধ্যে সড়ক তুলে ফেলা হবে। সেখানে সড়কের পরিবর্তে ২ দশমিক ৭ কিলোমিটার সেতু নির্মাণ করা হবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে আশুলিয়ার বিস্তীর্ণ হাওরের পানিপ্রবাহকে। হাওরের পানিপ্রবাহকে অবাধ রাখা, ঢাকা মহানগর ঘিরে যে সার্কুলার পানিপথ রয়েছে তার সুরক্ষা দেওয়া এবং ওই এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় আবদুল্লাহপুর-আশুলিয়া সড়ক বাঁধের পরিবর্তে প্রকল্পের আওতায় আশুলিয়া সড়কে প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ একটি চার লেন সেতু নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি প্রস্তাবিত এক্সপ্রেসওয়ের নিচের ১৪ কিলোমিটার সড়ককে চার লেনে উন্নীত করা হবে। থাকবে সার্ভিস লেনও।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
জাবেদ ২২ নভেম্বর, ২০২০, ৩:৫৮ এএম says : 0
এ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সাভার, আশুলিয়া, নবীনগর ও সাভার ইপিজেড এলাকার যানজট নিরসন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে।
Total Reply(0)
তানিয়া ২২ নভেম্বর, ২০২০, ৩:৫৯ এএম says : 0
এই বড় প্রকল্পগুলো ভালো লোক দ্বারা তদারকি করতে হবে।
Total Reply(0)
নওরিন ২২ নভেম্বর, ২০২০, ৪:০০ এএম says : 0
ঋণের টাকা থেকে আবার কেউ যেন চুরি না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে
Total Reply(0)
মাহমুদ ২২ নভেম্বর, ২০২০, ৪:০১ এএম says : 0
ঢাকার যানজট নিরসনে বিরাট অবদান রাখবে প্রকল্পটি।
Total Reply(0)
জাহিদ ২২ নভেম্বর, ২০২০, ৪:০২ এএম says : 0
এই ধরনের প্রকল্পের মাধ্যমেই দেশ সামনে দিকে এগিয়ে যাবে।
Total Reply(0)
তানিয়া ২২ নভেম্বর, ২০২০, ৪:০৩ এএম says : 0
এই প্রকলপ হতে নেয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি
Total Reply(0)
AZAD ২২ নভেম্বর, ২০২০, ৪:৩৩ এএম says : 0
চোর না শোনে ধর্মের কাহিনী । যারা চুরি করবে তাদের ঠেকাবে কে । সরকারকে সজাগ থাকতে হবে ......
Total Reply(1)
Md. Ibrahim ২২ নভেম্বর, ২০২০, ১১:০৬ এএম says : 0
উন্নয়নের জন্য লোন প্রয়োজন। প্রকল্প ব্যয় যেন অতি মূল্যায়িত না হয় এবং কিভাবে লোন পরিশোধ করা হবে সে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন