আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির প্রকৃত চরিত্র কীরূপ তা পবিত্র কোরআনে এত নিখুঁতভাবে উপস্থাপন করেছেন যা পড়লে, দেখলে অনেক সময় মনের কষ্ট দূর হয়ে যায়। আমরা মানুষের চারিত্রিক বৈপরিত্ব দেখলে মাঝে মাঝে হতাশ হই। ভেঙে পড়ি। আবার কোরআন আমাদেরকে সাহস যোগায়। কোরআন বলে, আরে, মানুষতো এমনই। বিশেষ করে পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার একেবারে প্রথম দিককার কিছু আয়াত এতই তাৎপর্যপূর্ণ যে, এগুলো বারবার পড়ি, আর আমাদের বর্তমান সমাজের দিকে ফিরে ফিরে তাকাই। কত অপুর্ব মিল।
আল্লাহ তায়ালা মানুষের চরিত্রের রূপ তুলে ধরার পাশাপাশিই এমন কিছু আয়াত অবর্তীর্ণ করেছেন, যাতে মুমেনরা আশাহত না হয়। মুমেনরা সান্ত¡না খুঁজে পায়। মুমেনরা তাদের সরলতার জন্য, সততার জন্য হয়তো সাময়িক কষ্ট পায়, কিন্তু সমাজের অতি চালাক, ধুরন্ধর, মতলববাজ, স্বার্থপর মানুষগুলোর ধোকাবাজি, তাদের প্রতারণা, তাদের কৌশলী কথার চ‚ড়ান্ত ফলাফল কি তা যখন কোরআনের দৃষ্টিতে দেখে তখন তাদের কষ্টের কথা ভুলে যায়। মুমেনরা সাময়িক কষ্ট পেলেও পরক্ষণেই মুমেনের সামনে ঐ চালাক মানুষগুলোর পরিণতির কথা কোরআন বলে দেয়ায় মনে মনে প্রশান্তি লাভ করে।
সুরা বাকারার আয়াত নাম্বার ০৮ থেকে ১৮ পর্যন্ত এই আয়াতগুলো সবসময়ই পড়েন, আজ আবার একটু পড়েন। আর তার অর্থটা খেয়াল করেন। দেখবেন এই সমাজের বর্তমান মানুষগুলোর চিত্র কিভাবে চিত্রায়িত করা হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন : (ভাবার্থ) (ক) মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা বলে, আরে, আমরাইতো প্রকৃত মুমেন, আমরা পরকালেও বিশ্বাস করি। আল্লাহ বলেন, আরে, ওরাতো আসলে মুমেনই না। (খ) এরা আল্লাহকেও ধোঁকা দিতে চায়, পাশাপাশি সমাজের মুমেন-মুসলমানদেরও। আল্লাহ বলেন, আরে, ওরা আল্লাহ এবং তার মুমেন বান্দাদের কী ধোঁকা দিবে, ওরাতো মূলত: নিজেদেরকেই ধোঁকা দিচ্ছে। আর এই ধোকার অনুভ‚তিও তাদের নেই।
(গ) আসল ঘটনা হলো, ওদের অন্তর রোগাক্রান্ত, ওরা এই রোগের ওপরই সন্তুষ্ট। তাদের মিথ্যাচারিতার জন্য ওদের জন্য রয়েছে কঠোর ও কঠিন শাস্তি। (ঘ) যখন সমাজের ভালো মানুষেরা ওদেরকে বলে, ও আমার ভাইয়েরা, তোমরা সমাজে, রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করো না, তখন তারা বলে, কী বলেন হুজুর! আমরাইতো সমাজের চরম হিতাকাক্সক্ষী।
(ঙ) আল্লাহ স্বাক্ষী দিয়ে বলছেন, সাবধান! তোমরাই আসল অশান্তি সৃষ্টিকারী। কিন্তু তারা এসব বুঝেও বুঝে না। (চ) তাদেরকে যখন আলেম-উলামারা বলে, সমাজের আর দশজন ভালো মানুষ যেভাবে ঈমান এনেছে, তোমরাও তাদের মতোই বিশ্বাস স্থাপন করো, তখন তারা আলেম-উলামাদের উদ্দেশ্য করে বলে, নির্বোধেরা যেরূপ বিশ্বাস করেছে আমরা কি সেরূপ করব নাকি? আমরা কি এত বোকা! নিশ্চয়ই ওরাই প্রকৃত নির্বোধ। কিন্তু ওরা বুঝে না।
(ছ) আর ওরা যখন মুমেনদের সাথে মিশে, যখন বড় হুজুরের দরবারে হাদিয়া নিয়ে হাজির হয়, তখন ওরা বলে, হুজুর, আমরাতো মুসলমানই। আমরাতো আপনাদের কথায় বিশ্বাস স্থাপন করেছিই। আর যখন ওদের দাদাদের সাথে মিশে, দলের নেতাদের সাথে বসে, দুষ্ট লোকদের কাছে যায়, তখন ওরা বলে, আমরাতো তোমাদের সঙ্গেই আছি। বোকা হুজুরগো একটু ধোঁকা দিলাম আর কি! উনাদের সাথে একটু ইয়ার্কি করলাম, একটু মজা নিলাম আর কি।
(জ) আসলে এর মাধ্যমে আল্লাহও তাদের সাথে একটু মজা করেন, তাদেরকে একটু সুযোগ দেন, একটু ঢিল দেন। ফলে তারা নিজেদের এই বিভ্রান্তির মধ্যে উদভ্রান্ত হয়ে ফিরে। মৌজ-মস্তির মধ্যে তৃপ্তির ঢেকুর তোলে। (ঝ) আসলে তারা যা করছে, তারা এগুলো করে যা অর্জন করছে, এই ব্যবসা, এই অর্জন সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে মিথ্যাকে ক্রয় করার নামান্তর। তাদের এই ব্যবসা কোনো দিনই লাভজনক নয়। এবং তারা কোনোদিন হেদায়েতও পাবে না।
(ঞ) এদের অবস্থা ঐ ব্যক্তির ন্যয় যে, গভীর অন্ধকারে আগুন জ্বালানো হলো, অতঃপর এতে করে পার্শ্ববর্তি সমস্ত স্থান আলোকিত হলো, যখন তারা পথচলা শুরু করলো, তখন হঠাৎ আলো ছিনিয়ে নেয়া হলো, তাদেরকে গভীর অন্ধকারের মধ্যে ছেড়ে দেয়া হলো, ফলে তারা আর কিছুই দেখতে পায় না। (ট) প্রকৃতপক্ষে তারা বধির, মূক ও অন্ধ। অতএব তারা প্রর্তাবর্তন করবে না। ( আল কোরআন, সূরা বাকারা)।
এদের চরিত্রটা আরো সুন্দরভাবে ১৭তম পারার সুরা হজ্জ এর ১০-১২নং এই আয়াতত্রয়ে তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে ইরশাদ হচ্ছে : (ভাবার্থ) (ক) মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর ইবাদত করে দ্বিধার সাথে; আর যদি এগুলো আদায় করার মধ্যে কোনো মঙ্গল তাদের স্পর্শ করে, তখন তাতে তাদের মন ও হৃদয় প্রশান্তি লাভ করে। আর যদি উল্টোটা হয়, নামাজ পড়তে পড়তে কপালে দাগ ফেলে দেওয়ার পরও যদি কোনো বিপর্যয় দেখা দেয়, তখন সে পুর্বাবস্থায় ফিরে যায়। তার দুনিয়াও শেষ, পরকালও।
(খ) সে খুব চালাক মানুষতো, তাই সে আল্লাহকেও ডাকে আবার এমন কাউকেও ডাকে যে তার কোনো অপকারও করতে পারে না, উপকারও করতে পারে না। এটাই হলো চরম বিভ্রান্তি। (গ) সে এমন কিছুকে ডাকে, যার পক্ষ থেকে উপকার অপেক্ষা ক্ষতি করাটাই সহজ, কত নিকৃষ্ট এই অভিভাবক এবং কত নিকৃষ্ট এই সহচর!
এই তিনটি আয়াতে মানুষের চরিত্রটি আরো সুন্দরভাবে উঠে এসেছে। আজকের রাজনৈতিক নেতাদের সাথে পবিত্র কোরআনের এসব আয়াত খুব নিখুঁতভাবে মিলে যায়। ক্ষমতার জন্য ওরা শয়তানের সাথেও বন্ধুত্ব করে। আবার মুমেনদের কাছেও ধর্ণা দেয়। তাদের দ্বিধাগ্রস্ত চরিত্রের কারণে নিজেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, দেশ ও সমাজ আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন