শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ঈমান ও ইসলাম পরস্পর সম্পূরক

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

জমহুর ওলামায়ে কেরামের মতে, ঈমান ও ইসলাম এক অভিন্ন। এ অর্থে যে, দুটিরই লক্ষ্য বিশ্বাস গ্রহণ ও আনুগত্য করা। আর এ অর্থে যে, নাম এবং হুকুমের দিক থেকে সকল মুমিনই মুসলিম ও সকল মুসলিমই মুমিন। এ মতের ওপরই উম্মতের ঐক্য প্রতিষ্ঠিত ও আল কোরআন ও আল হাদীসের সাক্ষ্য বর্তমান। (শরহুল মাকাসিদ-৩/৪৪২)।

এতদপ্রসঙ্গে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামায়াত বলেন : ইসলাম হতে ঈমান পৃথক হয় না। তদ্রæপ ঈমান থেকে ও ইসলাম পৃথক হয় না। সুতরাং যে ব্যক্তি মুসলমান সে মুমিনও বটে। আর যে মুমিন সে মুসলিমও। যদিও আভিধানিক অর্থের দিক থেকে ঈমান ও ইসলাম পৃথক পৃথক। যেমন পেট ও পিঠ। পেট ছাড়া পিঠ অথবা পিঠ ছাড়া পেট কল্পনা করা যায় না। যদিও পেট ও পিঠ ভিন্ন ভিন্ন বস্তু। এতদর্থে ঈমান হলো- তাসদীক তথা আন্তরিক বিশ্বাস, আর ইসলাম হলো আনুগত্য। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক ও তার রাসূল (সা.)-এর প্রতি আন্তরিকব বিশ্বাসী হবে, সে অনুগতও হবে এবং আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি বিশ্বাসীও হবে। রাফেযী সম্প্রদায় ও মুতাযিলা সম্প্রদায়ের মতে ঈমান ও ইসলাম একটি হতে অপরটি পৃথক ও আলাদা হতে পারে। (উসুলুদ্দীন লিল বযদুবী : ৫৫)। স্মরণ রাখা দরকার যে, এই দুটি সম্প্রদায়ই বাতিল ফিরকার অন্তর্ভুক্ত। এজন্য তাদের অভিমতকে গ্রহণ করা যায় না বা বাতিল।

বস্তুত গভীর মনোযোগের সাথে আল কোরআন ও আল হাদীস অধ্যয়ন করলে ঈমান ও ইসলাম পরস্পর সম্পুরক, তা সহজেই অনুধাবন করা যায়। এতদপ্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : (ক) আর যে ব্যক্তি দ্বীন হিসেবে ইসলাম ছাড়া অন্য কিছু অন্বেষণ করে, তবে তা’ অদৌ গ্রহণ করা হবে না। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ৮৫)। (খ) ইরশাদ হয়েছে : অনন্তর আমি উক্ত জনবসতি হতে ঈমানদারগণকে বের করলাম। একটি ঘর ব্যতীত মুসলমান কোনো সদস্য পেলাম না। (সূরা যারিয়াত : আয়াত ৩৫, ৩৬)।
(গ) ইরশাদ হয়েছে : তোমরা ইসলাম গ্রহণকে আমার জন্য খোটার ব্যাপারে পরিণত করো না, অর্থাৎ তোমরা ইসলাম গ্রহণ করে আমার প্রতি করুণা করেছ এমনটি মনে করো না। বরং আল্লাহপাক তোমাদেরকে ঈমানের প্রতি পথ প্রদর্শন করে তোমাদের প্রতি করুণা করেছেন। (সূরা হুযুরাত : আয়াত ১৭)।

উল্লেখিত আয়াতে কারীমার আলোকে সুস্পষ্ট বুঝা যায় যে, ঈমানও ইসলাম পরস্পরে সম্পুরক। এর একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটি কল্পনা করা যায় না। আর যায় না বলেই উভয় শব্দের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক অভিন্ন।
শুধু তাই নয়। আল হাদীসেও এর প্রমাণ বিধৃত আছে। যেমন : (ক) বিশ^ নবী হযরত মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) জনৈক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হিসেবে আগত লোকদের উদ্দেশ্যে বললেন : আল্লাহ পাক ও তার রাসূল (সা.)-এর ওপর ঈমান আনয়নের পরিচয় হলো- ‘লা ইলাহ ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’-এর সাক্ষ্য প্রদান করা, সালাত কায়েম করা, যাকাত প্রদান করা, রমযানের সিয়াম পালন করা, গণীমতের মালের এক পঞ্চমাংশ বাইতুল মালে জমা দেয়া। (সহীহ বুখারী : ১/১৩)।
(খ) উল্লিখিত আয়াতে কারীমা ও আলহাদীসের আলোকে বুঝা যায় সে এখানে ইসলাম বলতে হাকীকতে শরীয়াত তথা ঈমানকে বুঝানো হয়েছে। যদ্বারা ইসলাম ও ঈমান এক হওয়া বুঝা যায়। (ফাতহুল বারী শরহে বুখারী : ১/৬৬)।

এ পর্যায়ে অবশ্যই স্মরণ রাখা দরকার যে, মুসলমান কোনো বদআমল বা গুনাহের কারণে কাফির হয়ে যায় না। তবে, ঐ শ্রেণীর বদ আমল, যা আল্লাহ দ্রোহিতা ও দ্বীন ইসলামের অস্বীকৃতির নিদর্শন বহন করে, তা মানুষকে ইসলামের গন্ডি হতে বহিষ্কার করে দেয়। যেমন মূর্তিকে সেজদাহ করা, আল কোরআনকে অবমাননা করা, আবর্জনা স্তুপে নিক্ষেপ করা, কোনো প্রাণীর মূর্তি বা বিগ্রহকে তার অমরত্ব লাভের উপায় বলে মনে করা ইত্যাদি দ্বীন ইসলামকে অস্বীকার করার নামান্তর বিধায় তা’ কুফর।

যদি কোনো ব্যক্তি পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) আনীত সকল বিষয়ে অন্তরে বিশ্বাস, মুখে স্বীকার ও তদনুযায়ী আমল করল। এর পরেও সে স্বেচ্ছায় পৈতা পরিধান করল অথবা স্বেচ্ছায় প্রতিমাকে সেজদাহ করল, তাকে ইসলামের গন্ডি হতে বহির্ভূত বলে গণ্য করা হবে। কেননা, তার উল্লিখিত কাজ বা আমল বিশ্ব নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে তাকযীব বা মিথ্যা প্রতিপন্ন করার নির্দশন বলে চিহ্নিত করা হবে। এমন কি কুফরীর কথা মূলে উচ্চারণ করাও কুফরী বলে সাব্যস্ত হবে। সুতরাং এ সকল কাজ, আচরণ, সবই কুফরী। (শরহে ফিকহে আকবার : পৃষ্ঠা ৭৭)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Din Mohammad ১৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১:১৮ এএম says : 0
শরিয়তে ঈমান ব্যতিত ইসলাম এবং ইসলাম ব্যতিত ঈমান গ্রহণযোগ্য নয়।
Total Reply(0)
মনিরুল ইসলাম ১৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১:১৯ এএম says : 0
প্রকাশ্য আনুগত্যের সাথে যদি অন্তরের বিশ্বাস না থাকে তবে কোরআনের ভাষায় একে ‘নেফাক’ বলে। নেফাককে কুফরের চেয়েও বড় অন্যায় সাব্যস্ত করা হয়েছে।
Total Reply(0)
তানিম আশরাফ ১৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১:১৯ এএম says : 0
ঈমান ও ইসলামের ক্ষেত্র এক, কিন্তু আরম্ভ ও শেষের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য বিদ্যমান। অর্থাৎ ঈমান যেমন অন্তর থেকে আরম্ভ হয় এবং প্রকাশ্য আমলে পৌঁছে পূর্ণতা লাভ কওে, তদ্রƒপ ইসলামও প্রকাশ্য আমল থেকে আরম্ভ হয় এবং অন্তরে পৌঁছে পূর্ণতা লাভ করে। অন্তরের বিশ্বাস প্রকাশ্য আমল পর্যন্ত না পৌঁছালে তা গ্রহণযোগ্য হয় না। অনুরূপভাবে প্রকাশ্য আনুগত্য ও তাঁবেদারি আন্তরিক বিশ্বাসে না পৌঁছালে গ্রহণযোগ্য হয় না।
Total Reply(0)
নাজনীন জাহান ১৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১:২০ এএম says : 0
ঈমান ও ইসলাম দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা। ঈমান অর্থ বিশ্বাস ।ইসলামের মূল বিষয় গুলোর প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকৃতি ও তদনুযায়ী আমল করা কে ইমান বলা হয়। অন্যদিকে ইসলাম অর্থ আত্মসমর্পণ আনুগত্য ইত্যাদি।
Total Reply(0)
বদরুল সজিব ১৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১:২০ এএম says : 0
ঈমান ও ইসলামের মধ্যে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বিদ্যমান এদের একটি ব্যতীত অন্যটি কল্পনাও করা যায় না। এদের একটি অপরটির উপর গভীরভাবে নির্ভরশীল।
Total Reply(0)
জান্নাতুল মাওয়া ১৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১:২০ এএম says : 0
ঈমান ও ইসলামের সম্পর্ক গাছের মূল শাখা-প্রশাখার মত। ইমান হলো গাছের মূল শিকর বা মূল আর ইসলাম তার শাখা-প্রশাখা।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন