উহুদের যুদ্ধের একটি ভুল চিন্তার খেসারাত দিতে হয়েছে সত্তরজন বীর মুজাহিদের জীবন দানের মাধ্যমে। স্বয়ং রাসূল (সা.) নেতৃত্বে তারা যুদ্ধ করেছিল। এর দ্বারা বুঝা যায়, পরাজয়ের পথ অবলম্বন করলে মুসলমান হলেও পরাজয় হবে। আর বিজয়ের পথে হাঁটলে ইহুদি খ্রীস্টান হলেও বিজয় লাভ করতে পারে। ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা মুসলমানরা যত তাড়াতাড়ি উপলব্ধি করবে তত তাড়াতাড়ি মুসলমানদের বিজয় আসবে।
উহুদের যুদ্ধে মুসলমানেরা পরাজয়ের পক্ষাবলম্বন করেছেন বলে তাদের পরাজয় হয়েছে। আল কোরআন বলছে ‘এটা তাদের হাতের কামাই’। আল কোরআনে বলা হয়েছে, ‘কী ব্যাপার, তোমাদের ওপর যখন একটি বিপদ আসল তখন তোমরা বললে কোথা থেকে এলো? অথচ তোমরা দ্বিগুণ বিপদে পড়েছিলে। অতএব বলে দাও এ বিপদে এসেছে তোমাদের পক্ষ থেকে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৬৫)।
মুসলমানদের সরলতাকে পুঁজি করে ইহুদি খ্রীস্টান চক্র মুসলমানদের বিরুদ্ধে সর্বগ্রাসী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সুতরাং উদাস-সরলতা নয়, বরং পূর্ণ সর্তক থাকতে হবে। আল কোরআন মুসলমানদের সরলতার পরিচয় দেওয়ার পাশাপাশি সর্তক থাকতে, অশ্রু বিসর্জন দেয়ার সাথে সাথে শত্রুর মোকাবিলায় শক্তি সঞ্চয় ও প্রস্তুতি গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে। ‘হে মুমিনগণ সতর্কতা অবলম্বন কর; এর পর পৃথক পৃথক সৈন্যদলের কিংবা সমবেতভাবে বেরিয়ে পড়া। (সূরা নিসা আয়াত ৭১)।
আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কাফেররা চায় যে, তোমরা অস্ত্রশস্ত্র, আসবাবপত্র সম্পর্কে অসর্তক হও, তাহলে তোমাদের ওপর একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে।’ অন্য আয়াতে আছে, তোমরা তাদের প্রতিরোধের জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্বাবাহিনী তৈরি করে রাখবে, এর দ্বারা সন্ত্রস্ত করবে আল্লাহর শত্রুকে এবং তোমাদের শত্রুকে।’ (সূরা আনফাল, আয়াত, ৬০)।
আজ মুসলমানদের জঙ্গিবাদ নামকরণ করে সারা বিশ্বে চলছে মুসলমানদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ওপর চলছে নানা ষড়যন্ত্র। তারপর ও খাঁটি মুসলমানরা বসে নেই এগিয়ে চলেছে দুর্বার গতিতে। চলমান বিশ্বের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, পৃথিবীতে নরকখ্যাত কুখ্যাত গুয়ান্তানামোবে কারাগার এখন থেকে প্রায় বিশ বছর আগে তৈরি করা হয়েছিল। আমেরিকা কোনো বন্দিকে এর ভেতর না ঢোকাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
এই কারাগারে আটক করার পর শত নির্যাতনের পর মুসলমানদের মনোবল ভাঙতে পারেনি ও পছন্দমত স্বীকারোক্তি আদায় করতে পারেনি। বন্দি খালেদ শেখ মুহাম্মদ একপত্রে তার মামলার বিষয়ে বেশ কিছু কথা লিখেছেন, তিনি আমেরিকানদের ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিয়েছেন। এ কারাগারে বন্দি হওয়ায় তিনি পেরেশান নন এবং আনন্দিত। সংবাদ মাধ্যম এটাকে আমেরিকার লজ্জা হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। আমেরিকা ২০০২ সালের ১১ই জানুয়ারি এই কারাগারটি প্রতিষ্ঠিত করে। এটা গুয়ান্তানামোবে কারাগার হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত। নাইন এলেভেনের মিথ্যা অজুহাতে।
আমেরিকা আফগানিস্তানের ওপর হামলা করে এবং সেখানে অসংখ্য মুসলিম যুবককে বন্দি করে। আমেরিকার বর্ণনা মতে, তারা আমেরিকান বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত ছিল, আমেরিকার অস্তিত্বের হুমকি স্বরূপ অথবা নাইন ইলেভেনের কোনো ঘটনার সাথে হয়তবা তারা জড়িত। এখানে আমেরিকা মুসলিম যুবকদের নির্যাতনের কোনো ধরন বাকি রাখেনি। বন্দিদের নিঃসঙ্গ খাঁচায় রাখা হতো। শোয়ার জন্য একটি শক্ত সিট, দুভাজ করা একটি কম্বল, পরার জন্য বিশেষ লাল ইউনিফরম ও খুব পাতলা টপ্পল স্যান্ডেল দেয়া হতো।
গুয়ান্তানামোবে কারাগারে সব চেয়ে বড় শান্তি হলো, মলমুত্র ত্যাগের জন্য বাথরুমে যাওয়ার অনুমতি নেই। বরং খাঁচার মধ্যে প্লাস্টিকের দুটি বালতি দেয়া হতো। তারা তাতে প্রকাশ্যে পৃথক পৃথকভাবে মলমুত্র ত্যাগ করত। এগুলোকে আবার তাদের কাছে রেখে দেয়া হতো। কি শীত কি গরম বন্দিদের ওই খাঁচায় থাকতে হতো। জিজ্ঞাসাবাদের সময় ইলেকট্রিক শক দেয়া হতো। নিঃশ্বাস বন্ধ করে দেয়া ও বরফের ওপর শুইয়ে দেয়া নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। বন্দিদের উলঙ্গ করে শিকারী কুকুর লেলিয়ে দেয়া হতো। এতে যখন তারা সফল হয়নি তখন পবিত্র কোরআন শরীফের সাথে অবমাননাকর আচরণ করা হতো। হযরত মুহাম্মাদ (সা.) সম্পর্কে অত্যান্ত বেয়াদবীপূর্ন আচরণ করত। এরপর বন্দিদের কাবু না করতে না পারলে মেরে ফেলা হতো। (শহীদ করে দেয়া হতো)।
উইকিপিডিয়া-এর সূত্র মোতাবেক, সেখানে পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনা ঘটছে। বার বছর পর দেখা গেছে কেউ ইসলাম ত্যাগ করেনি বরং অনেকে আল কোরআনের হাফেজ হয়ে বের হয়েছেন। তাই বিশ্ব মুসলিমকে আজ খাঁটি ঈমানদার হতে হবে। আল কোরআনের নির্দেশ মোতাবেক জাগতিক জ্ঞানও আন্তরিক শক্তির অধিকারী হতে হবে। এর জন্য যা কিছু দরকার তা’ অর্জন ও ব্যবহারে পারঙ্গম হতে হবে। অন্যথায় গুয়ান্তানামোবে কারাগারের মতো নির্মম পরিণতির সম্মুখীন হওয়া মোটেই অসম্ভব নয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন