চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বাকি আর মাত্র সাত দিন। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মেয়র প্রার্থীসহ মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর ব্যাপক প্রচার চলছে। তবে তাতে তেমন সাড়া মিলছে না সাধারণ ভোটারের। সিটি নির্বাচনকে ঘিরে নগরবাসীর মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টি হলেও অব্যাহত হানাহানিতে তাতে ভাটা পড়ছে। প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী বিশেষ করে সরকারি দলের কাউন্সিলর এবং বিদ্রোহী প্রার্থীদের সংঘাত-সহিংসতা লেগেই আছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের প্রচারে সরকারি দলের হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ করা হচ্ছে।
গতকাল সোমবার বিকেলে নগরীর ষোলশহর মেয়র গলি এলাকায় বিএনপির মেয়র প্রার্থীর দুটি প্রচার মাইক ভাঙচুর করা হয়। বিএনপি অভিযোগ করেছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা অতর্কিত হামলা চালিয়ে মাইকসহ দুটি অটোরিকশা ভাঙচুর করে। তাদের হামলায় আহত হয়েছেন কয়েকজন বিএনপি কর্মী।
প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর পোস্টার ছেড়া, মাইকিং ও নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। এতে নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সচেতন ভোটাররা সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। নির্বাচন কমিশন ভোটের স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ সাধারণ ভোটারের। রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসে প্রার্থীদের অভিযোগ জমা পড়ছে। তবে এসব অভিযোগের ব্যাপারে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা না নেয়ায় পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। যদিও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান দাবি করেন, প্রতিটি অভিযোগ গুরুত্বের সাথে নেয়া হচ্ছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে সংঘাত-সহিংতা প্রতিরোধে কঠোর অবস্থান নেয়ার ঘোষণা দেয়া হলেও নগরীতে চেকপোস্ট এবং তল্লাশির মধ্যেই সীমিত রয়েছে তাদের কার্যক্রম। অস্ত্র উদ্ধার এবং তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী গ্রেফতারে এখনো কোন অভিযান শুরু হয়নি। বৈধ অস্ত্র জমা দেয়ার ঘোষণাও আসেনি প্রশাসনের তরফ থেকে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা নগরীর ১৪টি ওয়ার্ডকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এসব ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী এবং বিদ্রোহীরা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন। ইতোমধ্যে পাঠানটুলী ও দেওয়ান বাজারে সহিংসতায় দুইজনের লাশ পড়েছে। প্রথম দফায় প্রচারের শুরুতে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হালিশহরে একজনের মৃত্যু হয়। লালখান বাজার ওয়ার্ডেও দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়েছে।
নগরীর দেওয়ানবাজারে ছাত্রলীগ কর্মী আশিকুর রহমান রোহিত হত্যার ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রাজধানীর মুগদা ও মীরপুর থেকে শেখ মহিউদ্দিন ও মো. সাইফুল ইসলাম বাবুকে গ্রেফতার করার কথা জানান নগর পুলিশের কর্মকর্তারা। পুলিশ জানায়, তারা বেশভ‚ষা পরিবর্তন করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। পাঠানটুলীতে সংঘাতে আওয়ামী লীগ কর্মী আজগর আলী বাবুল খুনের ঘটনায় দেলাওয়ার রশিদ নামে এক আসামিকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল কাদের ওরফে মাছ কাদেরের অনুসারী।
২৭ জানুয়ারি চসিক নির্বাচনে ভোটগ্রহণের যাবতীয় প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। গতকাল প্রথম দিনে নগরীর চারটি ভেন্যুতে প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। আগামী ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত এ চারটি ভেন্যুতে ১৬ হাজার ১৬৩ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
ভোট সামনে রেখে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী গতকাল গণসংযোগকালে শান্তি সৌহার্দ্যরে নান্দনিক সিটি গড়ার অঙ্গীকার করেন। তিনি বাকলিয়া, পাঠানটুলী এবং মাদারবাড়ীতে গণসংযোগ করেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এ সময় তার সাথে ছিলেন। রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, নগরবাসী উন্নয়নের পক্ষে নৌকায় ভোট দিতে জোটবদ্ধ। নৌকার পালে বিজয়ের হাওয়া লেগেছে। এতে কারো মাথায় গন্ডগোল দেখা দিতে পারে। উন্নয়নের স্বার্থে সকলেই নৌকা প্রতীককে সমর্থন জানিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এ দলটি ভিত্তিহীন অজুহাতে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার পাঁয়তারা করছে। গণবিচ্ছিন্ন দলটি জনরায়ে বিশ্বাসী নয়, তারা নির্বাচন চায় না।
ধানের শীষের প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, ধানের শীষের পক্ষে জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে চট্টগ্রামের মানুষের জন্য রাজনীতি করছি। মানুষের সুখ-দুঃখ বুঝি। করোনাকালে মানুষের পাশে থেকেছি। তাই চট্টগ্রামের মানুষ আমাকে পছন্দ করে। মেয়র নির্বাচিত হলে এই চট্টগ্রামে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেবো। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দস তালুকদার দুলুসহ বিএনপি নেতারা এ সময় তার সাথে ছিলেন। তিনি নগরীর কাতালগঞ্জ, বহদ্দারহাট, মুরাদপুরে গণসংযোগ করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন