চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটের প্রচারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে নগরীর বাকলিয়া বলিরহাটে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহত উভয় পক্ষের চারজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুরো বাকলিয়া জুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ভোট সামনে রেখে নগরীতে সমানতালে চলছে নৌকা এবং ধানের শীষের প্রচার। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীর প্রচারে সামিল হচ্ছেন সরকারি দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। জোটের শরিক এবং সমমনা রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারাও নৌকার পক্ষে মাঠে নেমেছেন।
একই চিত্র বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের প্রচার বহরেও। কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি বিএনপি জোটের শরিক এবং সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতারা ধানের শীষে ভোট চাইছেন। বিএনপি সমর্থিত পেশাজীবী এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরাও সক্রিয় ভোটের মাঠে।
সিটি নির্বাচনকে ঘিরে বড় দুই দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এখন দারুণ উচ্ছ্বসিত। বিরামহীন প্রচারে চাটগাঁর রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। বিএনপির পক্ষ থেকে কয়েকটি এলাকায় হামলার অভিযোগ করা হলেও তাতে প্রচারে তেমন ছন্দপতন হয়নি। ভয়ভীতি উপেক্ষা করে বিএনপির কর্মীরা মাঠে আছেন।
প্রায় পৌনে এক কোটি মানুষের এ মহানগরীতে ভোটের প্রচারে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন নৌকা এবং ধানের শীষের দুই মেয়র প্রার্থী। নাগরিক দুর্ভোগ লাঘবসহ বিশ্বমানের নগরী গড়ার অঙ্গীকার করছেন এ দুই প্রার্থী। সচেতন ভোটারেরা এসব প্রতিশ্রুতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। ভোটের প্রচারে কোন দল কিভাবে জনগণের কাছাকাছি হচ্ছেন সেটিও পর্যবেক্ষণে রয়েছে ভোটারদের। নৌকা এবং ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী এবং তাদের পক্ষে মাঠে নামা আওয়ামী লীগ বিএনপির নেতারাও ভোটারদের মন জয়ে নানান প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
এদিকে প্রচারে আচরণবিধি মানছেন না বেশিরভাগ প্রার্থী। রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসে প্রতিদিন এমন অভিযোগ জমা পড়ছে। এসব অভিযোগের বেশিরভাগ আমলে নেওয়া হচ্ছে না। ফলে আচরণবিধি ভঙ্গের ঘটনা বাড়ছে। আর তাতে বিঘিœত হচ্ছে শান্তিপূর্ণ ভোটের পরিবেশ। প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প, প্রচার মাইকে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের অনেকে তাদের প্রচারে শিশু-কিশোরদের ব্যবহার করছেন। অতিরিক্ত মাইক ব্যবহার, আবাসিক এলাকায় নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন, বেঁধে দেওয়া সময়ে আগে প্রচার শুরু এবং সময় শেষ হওয়ার পরেও প্রচার চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভোটের প্রচারে মোটর শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ হলেও অনেক তা মানছেন না।
তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান জানান, এ পর্যন্ত অর্ধ শতাধিক অভিযোগ পেয়েছেন তিনি। যার সবকয়টি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বড় দুই দলের মেয়র প্রার্থীকে লিখিতভাবে সতর্ক করা হয়েছে। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ রয়েছে। বড় দুই দলের মেয়র প্রার্থীকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে ভোটের প্রচারে গতি এসেছে। চাক্তাই খাল খননের মাধ্যমে দেশের অন্যতম সওদাগরী পাড়া চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও আছদগঞ্জকে পানিবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে রক্ষা করার অঙ্গীকার করলেন নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি পাথরঘাটা, বকশীর হাট, দেওয়ান বাজার এলাকায় গণসংযোগ করেন। তিনি ডিজিটাল মহানগরী গড়তে নৌকায় ভোট চান। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, তারা উন্নয়নে বিশ্বাসী নয়। তারা ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে ঠাট্টায় মেতেছিল। এখন বিএনপির প্রার্থী বলছেন ওয়াইফাই নগরী গড়বেন। এজন্য তাকে ধন্যবাদ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশ বিক্রি হয়ে যাবে এমন প্রচারণাও চালিয়েছিল তারা। আওয়ামী লীগ ১২ বছর ক্ষমতায়। দেশ বিক্রি হয়নি বরং দেশের সমুদ্র সীমা বেড়েছে দ্বিগুণ। শেখ হাসিনার সরকার প্রতিটি উপজেলায় আধুনিক মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছেন। ইমামদের সরকারি ভাতা ও সম্মানি প্রদান করা হয়েছে। এ সময় তার সাথে ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, এডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, আলতাফ হোসেন বাচ্চু প্রমুখ।
স্বাস্থ্যসম্মত পর্যটন নগরী গড়ার অঙ্গীকার করেন ধানের শীষের প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি পাহাড়তলী ও কাট্টলী এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, মরহুম সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পুত্র হুমাম কাদের চৌধুরী প্রমুখ। শাহাদাত হোসেন বলেন, অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি হাজার বছরের ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ নগরী চট্টগ্রামকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হবে। পর্যটন শিল্পকে জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ উল্লেখ করে তিনি বলেন, পর্যটন বিকাশে উদ্যোগ নেয়া হবে। তিনি ভাসমান বস্তিবাসী ও ভূমিহীন মানুষদের জন্য নিরাপদ আবাসন গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন
বাকলিয়ায় সংঘর্ষ
নির্বাচনী প্রচারে বাকলিয়ার বলিরহাটে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে ১০জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। আহতদের মধ্যে চারজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন- ১৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সোহান এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ওয়াজেদ, ছাত্রদল নেতা ইউনুস এবং নুরুদ্দিন। আওয়ামী লীগের নেতাদের অভিযোগ, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর পক্ষে প্রচারের সময় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অতর্কিত হামলা করে। এতে তাদের দুইজন আহত হন। অন্যদিকে বিএনপির দাবি, তাদের মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা করে ছাত্রদলের দুই নেতাসহ বেশ কয়েকজনকে আহত করে।
ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক মানিক সাংবাদিকদের বলেন, নৌকার পক্ষে গণংযোগকালে বিএনপির নেতাকর্মীরা অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। আমরা পাল্টা প্রতিরোধ করেছি। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব মো. ইদ্রিস আলী বলেন, ধানের শীষের পক্ষে যুবদলের নির্বাচনী পথসভায় আওয়ামী লীগের লোকজন হামলা চালিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে দুইজনকে আহত করেছে। তাদের হাত-পা ভেঙে দিয়েছে। তারা ককটেল ফাটিয়েছে, গুলিও করেছে। বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রুহুল আমিন বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণায় বিএনপির কর্মীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়। ঘটনাস্থলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও গেছেন। তবে রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় কোন পক্ষ অভিযোগ করেনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন