রিমান্ডে নিয়ে ছাত্রদলের নেতাদের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সেইসাথে ছাত্রদল নেতা সজিবের নিরীহ তিন ভাইকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বোধ, বুদ্ধি, বিবেচনা, মানবিকতা সকল কিছু বিসর্জন দিয়ে এক নিষ্ঠুর মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করেছে।
মঙ্গলবার (০২ মার্চ) সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, গত রাতে গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে পুলিশ ঢাকা জেলা ছাত্রদলের সদস্য সজীব রায়হানকে বাসায় না পেয়ে তার তিন ভাই জুয়েল, সোহেল ও সুমনকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে ধরে নিয়ে গেছে। এই ঘটনা আওয়ামী গেস্টাপো বাহিনীর আরেকটি নির্মম ও দুঃসহ দৃষ্টান্ত। এই ঘটনা ২৫ মার্চের পর হানাদার বাহিনী এবং স্বাধীনতার পর রক্ষীবাহিনীর বর্বরতাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এই সমস্ত ঘটনা নিশিরাতের সরকারের ক্রোধপরায়ণতা ও উৎপীড়ণের এক ভিন্ন ও গভীর দৃষ্টান্ত।
তিনি বলেন, একদিকে বিক্ষোভ বানচাল করার জন্য উন্মত্ত পুলিশের বেপরোয়া লাঠিপেটায় রক্তাক্ত করা, অন্যদিকে গ্রেফতার করে রিমান্ড নামক টর্চারিং মেশিনে ঢুকিয়ে ছাত্রদল নেতাদেরকে নির্যাতনে যে ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তা নজীরবিহীন। ক্ষমতার উন্মাদনার মধ্যে থাকতে চায় বর্তমান আওয়ামী সরকার। বোধ, বুদ্ধি, বিবেচনা, মানবিকতা সকল কিছু বিসর্জন দিয়ে এক নিষ্ঠুর মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করেছে তারা। আওয়ামী সরকার মাফিয়া সরকার হিসেবে বিশ্ব জোড়া নামডাক হওয়াতে তারা খুশী, সেই কারণে লাঠি ও বন্দুকের ভাষা ব্যবহার করছে নির্দ্বিধায়।
রিজভী বলেন, সজীব রায়হানকে বাসায় না পেয়ে তার ভাইদের ধরে নিয়ে যাওয়া নাৎসীবাদের চরম বহিঃপ্রকাশ। এতে নাৎসীবাদের ভয়ঙ্কর দমণের প্রবণতাই ফুটে উঠেছে। গত পরশুদিন (রোববার) প্রেসক্লাবের সামনে ছাত্রদলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে যেন পুলিশের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। তারা রক্তাক্ত করার পর এখন চিরুনি তল্লাশী শুরু করেছে ছাত্রনেতাদের বাসায় বাসায়। আওয়ামী সরকার গণতন্ত্রের গলা টিপে মনুষ্যবিহীন বিরান ভূমিতে রাজত্ব করতে চাইছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, রোববার লেখক বøগার মুশতাক আহমেদের সরকারী হেফাজতে মৃত্যু ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশের অতর্কিত হামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, ছাত্রদল সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সহ-সভাপতি মামুন খান, সাইফ মাহমুদ জুয়েল, আক্তার হোসেন, ফারুক হোসেন, সানজিদা আক্তার তুলিসহ প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়।
এই বর্বরোচিত আক্রমণের পরও পুলিশ থেমে নেই। এখন শুরু করেছে বেধড়ক মামলা, গ্রেফতার ও রিমান্ডের নামে অকথ্য অত্যাচার। ইতোমধ্যে ছাত্রদলের ১৩ জন নেতাকে গ্রেফতার করে তাদেরকে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। এর মধ্যে ওইদিন সন্ধ্যার পর পর তিনজন ছাত্রদল নেতা যথাক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সদস্য আনিসুর খন্দকার অনিক, এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার জিসান এবং সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রদলের কর্মী আতিক মোর্শেদকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গিয়ে দীর্ঘ সময় অস্বীকার করেছে শুধু তাদের ওপর শারীরিক নির্যাতন করার জন্য।
বিএনপির এই নেতা বলেন, তবে এই অবৈধ মাফিয়াতন্ত্র শাসকগোষ্ঠীর রক্তমাখা হাত এ দেশের জনগণের দ্রোহাগ্নির তাপে পুড়ে যাবে। তাদের নির্মিত সন্ত্রাসের শৃঙ্খল ভেঙ্গে ফেলার জন্য ছাত্র-জনতা রাজপথেই অবস্থান নিবে, গৃহে ফিরে যাবে না। যারা প্রতিহিংসার মনোভাব নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে রাখে তাদের পতন অবশ্যম্ভাবী। বহুদিন ধরে চলে আসা এই হিংস অবিচার মানুষ আর সহ্য করবে না। সকল নির্যাতন সহ্য করেই ছাত্র-জনতা রাজপথে থাকবে।
রিজভী অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত ছাত্রদল নেতাদের রিমান্ড বাতিল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে মুক্তি দাবি জানান। সজীব রায়হানের ভাই জুয়েল, সোহেল, সুমন যাদের রাজনীতির সাথে কোনই সম্পর্ক নেই তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি জানান তিনি। তবে রিজভী পরে জানান, ছাত্রদল নেতা সজিবের তিন ভাইকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন