বিশ্বব্যাপী চলমান করোনা মহামারীর সংক্রমণ বৃদ্ধির সাথে সাথে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) চতুর্থ সমাবর্তন আয়োজনেও অনিশ্চয়তা বাড়ছে । গত বছরের ৮ জানুয়ারি তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানের পর একই বছরের ডিসেম্বরে চতুর্থ সমাবর্তন দেয়ার কথা ভেবেছিলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রথমবারের মতো অপরিচিত মহামারী (কোভিড-১৯) ভয়ানক পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেলে তা আর সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে মহামান্য রাষ্ট্রপতির পরামর্শক্রমে এ বছরের এপ্রিল- জুন এর মাঝামাঝি সময়ে সমাবর্তন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। তবে সম্প্রতি প্রাণঘাতী করোনার সংক্রমণ এবং মৃতের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বছরেও সমাবর্তন হবে কি না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতির অফিস থেকে আমাদেরকে এপ্রিল থেকে জুন মাসের মাঝে একটি সময় নির্ধারণ করতে বলা হয়েছিল। তাই আমরা এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে সময় দিয়েছিলাম।
মাঝে করোনার সংক্রমণ হ্রাস পাচ্ছিলো দেখে ধারণা করেছিলাম আমরা এপ্রিল থেকে জুনের মাঝে কনভোকেশন দিতে পারবো। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতিতে তা আর করা যাচ্ছে না। গত বছর আমরা ২০১১ সাল পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কনভোকেশন দিয়েছি। এ বছর আমরা চেয়েছিলাম ২০১৯-২০ সাল পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীদেরকে কনভোকেশন দিয়ে দিতে। এখন যেহেতু তা হয় নাই তাই ওয়েট করতে হবে, যখন সুযোগ হয় তখন করতে হবে ।
এ মাসের শুরুর দিকে (৮ এপ্রিল) অনলাইনে রাজধানীর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ২৩ তম সমাবর্তন দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা হয়তো অনলাইনে একটা চেষ্টা করতে পারতাম। এ মাসের প্রথম দিকে যেটা নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি করেছে। তারা শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট দিতে পারে না যদি না কনভোকেশন হয়। কনভোকেশন ছাড়া ওদের শিক্ষার্থীরা কোন সার্টিফিকেট পাবে না। আমাদের জন্য এটা মেন্ডেটরি ব্যাপার না, সেজন্যে এখন আমরা চাইলেও পারবো না। কারণ তা করতে গেলে আমাদের এখানে কাজ করতে হবে। লোকজনের মোভমেন্ট করতে হবে, বিভিন্ন কমিটি হবে। কাজেই এখন আমরা এটা চিন্তার মধ্যে রাখি নাই। করোনা চলে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাকিটা (২০১১ এর পর থেকে) একেবারে আপ টু ডেট করে ফেলবে। তখন আর ব্যাকলগ থাকবে না। আমরা এটা করার জন্য খুবই আগ্রহী। আমরা প্রার্থনা করি যেন করোনা চলে যায়। তখন আমরা দ্রুত চূড়ান্ত কনভোকেশনটা করে সবাইকে সার্টিফিকেট দিতে পারব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে মেয়াদ শেষের দ্বারপ্রান্তে এসে অনিশ্চিত সমাবর্তন নিয়ে তিনি বলেন, আমার টার্ম তো প্রায় শেষ। এরপর যে আসবে সে যদি করে, আরেকটা কনভোকেশন করলে পেন্ডিং শেষ হয়ে যাবে। দ্বিতীয় কনভোকেশন হয়েছিল ২০০৭ সালে, এরপর আমরা করলাম ২০২০ সালে । কত বছর পরে! আমরা করেছি ২০১১ সাল পর্যন্ত। এর পর ৫-৬ বছর বাকি আছে। এখন ২০২১ সাল চললেও সেকেন্ড ইয়ার,থার্ড ইয়ার ছাড়া প্রায় ৩-৪ বছর গ্যাপ আছে এখানে। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি আরেকটা কনভোকেশন দেয় সেটা প্রথমবার একটু বড় হবে। তারপরে প্রতি বছর করলে সেন্ট্রাল অডিতে (অডিটোরিয়ামে) করতে পারবে। তখন এত বড় আয়োজন লাগবে না, কিছু লাগবে না। তৃতীয় কনভোকেশনের পর এখন আমাদের ছাত্র সংখ্যা কমে গেছে। কাজেই এটা করা আমাদের পক্ষে ডিফিকাল্ট কিছু হবে না। প্রতি বছর বছর করতে পারবো। এভাবে কনভোকেশন চালু করলে কনভোকেশনের জন্য পরে ছেলে মেয়েদের অপেক্ষা করতে হবে না।
কনভোকেশন নিয়ে নিজের পরিকল্পনা জানিয়েছেন উপাচার্য বলেন, আমার প্ল্যান ছিল একবছর এটা করে ফেললাম। এরপর সেন্ট্রাল অডিতে সুন্দরভাবে প্রতি বছর বছর করলাম। ছেলে মেয়েরাও খুবই উৎসাহ পেল। এটা একটা খুবই সুন্দর উৎসব মুখর পরিবেশ, তারা সবাই খুব এনজয় করে, তাদের অভিভাবকেরা এনজয় করে। তাদের জীবনে এটা একটা গর্ব, একটা মূল্যবান স্মৃতি । কনভোকেশন প্রতি বছর হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। মহামারী চলে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটা নিয়ে অবশ্যই চিন্তা করবে।
করোনা নিয়ন্ত্রণে আসলে এ বছর কনভোকেশন দেয়ার সম্ভাবনা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এটা তো কন্ডিশনাল ব্যাপার, এভাবে বলাটা আসলে মুশকিল। এখনকার যে অবস্থা আমরা কখন গিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবো তা বলা যায় না। তবে আমরা এটা বলতে পারি যে আমরা অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিব। যখন সুযোগ আসে তখন আমরা যত দ্রুত সম্ভব আমরা এটা করবো। সবকিছু যদি পারমিট করে, সিচুয়েশন যদি আমাদের পক্ষে যায় তাহলে আমরা সময় ক্ষেপন করব না। আমাদের এখন একটা কনভোকেশন পেন্ডিং আছে। আর কোন পেন্ডিং নাই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন